For Complaints/Suggesstions related to this material, please clickHere
বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)
(Click to expand)সত্যেনের। ঘুমের চটকা ভাঙল জ্ঞানদার কোমল করস্পর্শে। অন্য মেয়েরা
কখন চলে গেছে। স্নান সেরে মিহি তাতের নীলাম্বরী শাড়ি পরেছেন জ্ঞানদা।
খোঁপার বকুলফুলের মালা থেকে আসা গন্ধ সদ্য প্রবাসফেরত সত্যেনকে
যেন বাংলামাটির পক্ষ নিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে। ঘরের নিভৃতে আর জ্যাকেট
গায়ে দেননি জ্ঞানদা, কিন্তু আদুল গায়েও তিনি আর থাকতে পারেন না।
তাতে নিজেকে কেমন গ্রামীণ মনে হয়। পাতলা মলমলের সেমিজের ওপর
তিনি সুন্দর পরিপাটি করে শাড়ি জড়িয়েছেন। সামান্য আতর তার সাজকে
আরও মোহময় করেছে। যাকে তিনি এই প্রাসাদের চৌহদ্দি থেকে বার করে
বোস্বাই নিয়ে গিয়েছিলেন এ মেয়ে সে মেয়ে নয়। জ্ঞানদার কোমর জড়িয়ে
ধরে সত্যেন বলেন, মনে পড়ে জ্ছেনু, বোদ্বাইতে আমাদের সেই প্রথম ডিনার
পার্টিতে তুমি কী করেছিলে? আহা, তখন আমি সবে চৌকাঠ পেরোনো চোদ্দো বছরের এক বাঙালি
বউ, আমি কী করে গোরা সাহেবদের কায়দাকানুন বুঝব? আমি প্রথম
থেকেই ঠিক করেছিলুম টেবিলে খাবার দাবার সব সাজিয়ে দেব অতিথিদের
জন্য, কিন্তু আমি টেবিলে বসব না। ফিরিঙ্গিদের সঙ্গে একসঙ্গে খানাপিনার
কথা ভাবতেই পারিনি। আর সেই গোরা সাহেবটা যেই আমার হাত তার
হাতের মধ্যে নিয়ে টেবিলের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইল, আমি ভাবলাম
এ কী অসভ্য লোক রে বাবা! হাত ছাড়িয়ে দি্লম ছুট। তারপর সেই বন্ধ দরোজা খোলানোর জন্য আমাকে কম সাধ্যসাধনা করতে
হয়নি! সত্যেন হা হা করে হেসে ওঠেন, সেদিনের জন্য আমি তোমাকে দোষ
দিই না, কিন্তু পরে তুমি যে ক্রমশ আদবকায়দা শিখে নিয়ে প্রথম ভারতীয়
সিভিলিয়ানের যোগ্য স্ত্রী হয়ে উঠেছ সেজন্য আমার গর্ব হয়। সেদিনের সেই লজ্জাবতী ভীরু বালিকার মধ্যে এখন সত্যেন উদিত সূর্যের
মতো এক নতুন নারীকে আবিষ্কার করেন। প্রবল আশ্লেষে যোড়শী পত্নী
জ্ঞানদাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন তিনি। আঃ, ছাড়ো না, তুমি কি ছেলেমানুষ হয়ে গেলে? জানলা দরোজা সব
খোলা, এখনই যে কেউ এসে পড়বে, জ্ঞানদা লজ্জা পান। সত্যেন বলেন, কী বলেছিলাম মনে নেই বউ? কত কী বলেছ, কোন কথাটা বলছ কী করে বুঝব এখন? জ্ঞানদা কটাক্ষ
করেন। ১৮