For Complaints/Suggesstions related to this material, please clickHere
বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)
(Click to expand)৬ পিঞ্জক্বে বসিয়া বিদ্যাসাগরের স্ত্রী দিনময়ী দেবী সারাদিন সকলরকম পরিশ্রমে আর কর্মে ব্যস্ত
থাকতেন। কিন্তু বহৎ সংসারের সবদিকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিল তার মাতা SATS দেবীর |
শিবমোহিনী কায়স্থের কন্যা, তবু ব্রাহ্মণ-পরিবারের রান্না ও হেঁসেলের কাজ যতটুকু
তার পক্ষে করা সম্ভব, তা তিনি নতুন করে নিপুণভাবে অস্তঃপুরিকাদের কাছ থেকে
শেখেন। আমার দিদিরা নাকি পিসিমার মুখেই গল্প শুনেছিলেন যে বিদ্যাসাগর উঠোনে
বালতির উনুনে পাঁঠার মাংস মধ্যে-মধ্যেই নিজে রীধতেন। মাংসে পেঁয়াজের চল ছিল
না। নিত্য ঝোল-ঝাল ছাড়াও বড়িভাতে ও বড়ির waa তার প্রিয় ছিল ৷ দশ-বারো
রকমের waa নাকি তিনি রাধতে জানতেন | বেলপোডা, বেলের মোরব্বাও তিনি
খুব পছন্দ করতেন। রসকরা, রসমুণ্ডি, বৌদে, খাজা, গজা, মুড়কি, ছানাবড়া ইত্যাদি
সরেশ জিনিস কোথায় কী পাওয়া যায়, তা বিদ্যাসাগরের খুব ভালোই জানা ছিল।
তিনি খেতে ভালোবাসতেন, আর তার চেয়ে অনেক বেশি ভালোবাসতেন খাওয়াতে | বিবাহের পরে শিবমোহিনী স্বামীর প্রথম পক্ষের সবকটি পুত্রকন্যাকে মাতৃয়নেহে পালন
করেছিলেন। তাদের বিবাহ দিয়ে সংসারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন | এমন-কী তাদের সম্ভান-
সম্ভতিদেরও তিনি মানুষ. করেছিলেন | তার নিজের কোনো ABI হয়নি। অসাধারণ
নৈপুণ্যের সঙ্গে শিবমোহিনী ধাত্রীবিদ্যা শিখেছিলেন ডাস্তার সুন্দরীমোহন দাসের (১৮৫৭-
১৯৫০) কাছে। সুন্দরীমোহন ধাত্রীদের যে রোজনামচাং লিখেছিলেন, তার চারটি ঘটনা
তাঁকে শিবমোহিনী দিয়েছিলেন | রোগীর সেবায় শিবমোহিনীর ক্লান্তি ছিল না, খবর পেলেই
প্রসূতির কাছে ছুটে যেতেন | সেকালে ধাত্রীর কাজ যথেষ্ট নিন্দিত ছিল | কিন্তু শিবমোহিনী
নিন্দার পরোয়া করতেন না। আমার সেজদিদির জন্মের সময় তিনি আঁতৃড়ঘরে উপস্থিত
Rem | সেজদিদির জন্ম-তারিখ ৩০শে Ulta | Teed তখন নিকট-স্মৃতি এবং
সেজদিদির জন্ম-তারিখটিতে রাখীবদ্ধন উৎসবের কয়েক বছর পুর্ণ হয়ে থাকবে | ঠিক বছরটি
আমার জানা নেই। পিসিমা মাকে বলেছিলেন, “AO, এমন ভালো দিনে জন্মাল, মেয়ের
নাম রাখ রাখী ।” সেজদিদির নাম অবশ্য রাখী হয়নি। অন্যান্য আত্মীয়াদের আপত্তি ছিল |
আমার বড়দির মেয়ে যখন জন্মায় যশোহর জেলার ঝিনাইদায়, পিসিমা সেখানেও উপস্থিত
ছিলেন । প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীদের, কুমারী কিংবা বিধবা মেয়েদের সম্ভান-সম্ভাবনা দেখা দিলে,
সেই সম্ভান বিনষ্ট করাই তখন সমাজের নিয়ম । শিবমোহিনী নাকি সংবাদ পেলেই ছুটে
যেতেন। দুটি অবৈধ সম্ভানকে তিনি বীচান এবং বড় করেন | একজন বাপ-মা-মরা অনাথের
পরিচয়ে কোনো বর্ধিষ্ণু বরাহ্ম-পরিবারে মানুষ হয়, শিবমোহিনী তার জন্য মাসে দু'টাকা
খরচ দিতেন | পরে সিমলেপাড়ার দোকানে ছেলেটির কাজের ব্যবস্থা করে দেন। অন্য
ছেলেটি যসিডি অথবা মধুপুরে মালীর ঘরে পালিত হয়েছিল । আমার মেজদি একবার
পিসিমাকে নাকি শুধিয়েছিলেন, 'ছেলে না হয়ে যদি মেয়ে হতো, তবে কী করতেন ?'
শিবমোহিনী বলেছিলেন, “ঈশ্বরের কৃপা যে পুত্রসম্ভান হয়েছিল | কন্যা-জন্ম হলে কী হতো,
তা জানিনে। কেউ তো নিত না। চামারদের ঘরে বিলিয়ে দিতে হতো ।” এ কথা আমি
মেজদির মুখেই শুনেছি।