গল্পসমগ্র [সংস্করণ-১] | Galposamagra [Ed. 1]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
BH কলতলার পাশের ঘর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চোদ্দো দিন বিশ্রাম নেবার পর শিবশংকর চক্রবর্তীর হৃদযন্ত্র তেহাই দেওয়া বন্ধ করল। নিশ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যে শরীর জীবনে কোনওদিন অপর হাতের সমযত্ন-স্পর্শ পায়নি, এই ক'দিনের আরামে সে যেন ITS গেছে। ওয়ার্ডে ফিরে এসে শিবশংকর তার কৃতজ্ঞতার কথা সবাইকে জানায়। পাশের খাটে থাকে গুরুপদ নামের একটা জোয়ান ছোকরা। মহিযাদল না পানখই গ্রাম থেকে এসেছে। তার হৃদযন্ব্রে ফুটো। সে যখন ANA, তখন রবারের পুতুল টিপলে যেমন হয়, তেমনই পি-গি করে শব্দ বেরোয়। গুরুপদ যেখান থেকে এসেছে, সেখানে ওর অসুখের চিকিৎসা হতে পারে এমন কোনও হাসপাতাল নেই। কলকাতার এই হাসপাতালে আগেও তিনবার এসে থেকেছে ও, এবারে একটু বেশিদিন ধরে আছে। ওর হৃদযন্ত্রের ফুটো সেলাই করা হবে। সে নাকি এক মেজর অপারেশন। “অপারেশন বর্গার চেয়েও বড়।” তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে গুরুপদ। ওর নীচের ঠোঁট কালো। হাসলে পর চোখে পড়ে, মুখের ভেতরটাও বেশ কালো। কাকের মুখের মতো। হয়তো বহুকাল ধরে বিড়ি খাওয়ার দরুন এমন হয়েছে। এখন তো বিড়ি খাওয়া একদম বারণ। “আসলে ডাক্তারগুলো আনাড়ি, তারা ভরসা পাচ্ছে না। আর যিনি ধেড়ে, তিনি নিজের ধান্দায় এত ব্যস্ত যে, একটা ডেট দিতে পারছেন না। কেবল দিন পিছোচ্ছেন। এদিকে পাতে Voces আমি Seer হয়ে গেলাম।” হাসপাতালে থেকে থেকে গুরুপদর মন খিঁচড়ে গেছে। শিবশংকরকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কার রেফারেন্সে এসেছেন?” শিবশংকর বলে, “রেফারেল তো কারও নিয়ে আসিনি। ট্রাম থেকে নামতে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। তো, রাস্তার লোকেরা ধরাধরি করে নিয়ে এসে ভরতি করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ যদি রেফারেন্স দিয়ে থাকে তো জানি না।” গুরুপদ বলে, “কৃতজ্ঞ হবার কিছু নেই, দাদা। ওই বাতানুকূল ঘর আপনার জন্যে নয়, মেশিনগুলোর জন্যে তৈরি হয়েছে। ওই ঘরে ধুলো ঢুকলে মেশিনগুলো ঘেউ ঘেউ করে উঠবে, তাই অত পরিচ্ছন্ন। তা ছাড়া”... আবার একটা ফিচকে হাসি হাসে গুরুপদ। লাল TIA কোলের ওপর থেকে সরিয়ে বলে, “কিছুদিন ইনটেনসিভে থাকলে মনটা নরম হয়।” এ কথার নিহিতার্থ প্রথমে বোঝেনি শিবশংকর। বুঝল দিনকয়েক পরে। বুধবার সকালে এগারোটার সময় ওয়ার্ডবয় এসে খবর দিল, বড় ডাক্তার দোতলার চেম্বারে ওকে ডাকছেন। বস্তুত, ওকে নিয়েই গেল লিফটে চড়িয়ে। “আপনি তো ভাল আছেন।” কাগজপত্র দেখতে দেখতে বললেন ডাক্তার চোক্সি। “আজ্ঞে St)” “আপনাকে ছেড়ে দেব। সাবধানে থাকবেন।”



Leave a Comment