For Complaints/Suggesstions related to this material, please clickHere
বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)
(Click to expand)২০ জেগে আছে একজন তাদের নাভি, ছাই গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জলে, মাটিতে সে সব মিশে গেছে।
কোথাও তার চিহ্ন নেই। তবু মাঝে মাঝে মনে হয় আছে, কিছু রয়ে গেছে। ক্লাইভ স্ট্রিটের পোড়খাওয়া ব্যবসায়ী বিকাশের কানে নিজের কথাগুলো সামান্য
বেখাপ্পা ঠেকতে সে AMAT চলে গেল। বলল, পদার্থবিজ্ঞানও তো বস্তুকে
সনাতন আর অমর বলেছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, বস্তুর সৃষ্টি বা বিনাশ নেই, শুধু তার
চেহারা বদলায়। আমার দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে জিজ্ঞেস *করেছিল, ঠিক কিনা? প্রশ্নের জবাব সে-ই দিয়েছিল। বলেছিল, বস্তু আদি আর অক্ষয় হলে আমার বাবা-
মাও তাই। তারা মাটি, জলের চেহারা নিয়েছে। গলা পর্যস্ত গঙ্গায় ডুব দিয়ে আমি
যদি তাদের স্পর্শ পাই, তাহলে অবাক হওয়ার কী আছে? তার প্রশ্নে সায় দিয়ে নবনীতা বলেছিল, সে তো বটেই। আমি সাড়া করিনি। বিকাশের প্রশ্নটা খারিজ করার ক্ষমতাও আমার ছিল না।
জল, মাটি ছুঁয়ে কেউ যদি বাপ-ঠাকুর্দার স্পর্শ পায়, আমি কেন আপত্তি করব? বিকাশের কথা তখনও ফুরোয়নি। সে বলেছিল, জল, মাটি ছুঁয়ে আমি শুধু আমার
বাবা, মা, পূর্বপুরুষের CA নয়, হাজার হাজার বছর ধরে মাটি, জল, আলো, বাতাসে
যারা মিশে গেছে তাদেরও স্পর্শ করি। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মে, বস্তু হিসেবে যদি আমার
বাবা, মা, পূর্বপুরুষ অক্ষয় হয়, তাহলে সকলের জন্যে এই নিয়ম খাটবে। শুধু মানুষ
কেন, জীব আর জড়পৃথিবীর কিছুই বিনাশ হয় না। হজমের ওষুধ ব্যবসায়ী বিকাশ একটু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমাদের বাড়ির
যিনি পুরোহিত, ভাল সংস্কৃত জানেন। তর্পণের শুরুতে নান্দীমুখের যে মন্ত্র, তার ব্যাখ্যা
তিনি শুনিয়েছেন আমাকে। মন্ত্র উচ্চারণ করে, পিতৃপুরুষের সঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ,
পশুপাখি, পাছপালা, সমুদ্র, পাহাড়, আকাশ, মাটি, জীব, জড়, জীবিত, মৃত, বস্ত,
অবস্তু সবাইকে অর্থ্যের ভাগ গ্রহণ করতে তর্পণকারী অনুরোধ জানায়। শুধু তর্পণকারীর
পরিবারের কল্যাণের জন্যে পিতৃপক্ষে SA করা হয় ali কোনও তর্পণকারী তা
করে না। সে সুযোগ তার নেই। শান্ত্র দেয়নি। আরো কিছু কথা বিকাশ বলেছিল। বিকাশের কথা শুনে নবনীতা Bl হয়ে গিয়েছিল।
আমি কী বলব, ভেবে পাচ্ছিলাম না। তারপর অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। তর্পণ
নিয়ে বিকাশের ব্যাখ্যা সেই মুহূর্তে মনে দাগ কাটলেও আবছা হয়ে যেতে সময় লাগেনি।
চন্দ্রনাথ আর দয়াময়ী কিন্তু আমার মগজ ছেড়ে নড়েনি। আগের চেয়ে সজীব হয়েছে।
পিতৃপক্ষের সকালে বিকাশের ডাক পেয়ে বাড়ি থেকে তখনই বেরিয়ে পড়েছিলাম। জলে GAG YA গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে আমার দু'চোখ হঠাৎ ঝাপসা হয়ে গেল। জীবনে
আমি কাদিনি, তবু আমার কান্না পেল। টের পেলাম, চোখের পাতা জলে ভিজে উঠেছে।
ঘাট থেকে সামান্য দূরে, ইংরেজ আমলে তৈরি ছাতার মত ঘরটার দিকে এগিয়ে
গেলাম। রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে গঙ্গার ধারে তখন এরকম অনেক ঘর বানানো
হয়েছিল। দু-একটা আজও থেকে গেছে। গোলাকার ফাঁকা ঘর। সিমেন্টের মেঝে।
অপরিচ্ছন্ন বলা যায়না। গোল ঘরে ঢুকে, মেঝের সঙ্গে আটকানো সিমেন্টের বেঞ্চে