For Complaints/Suggesstions related to this material, please clickHere
বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)
(Click to expand)দিগস্তে মিলিয়ে যাওয়া সরু রেল লাইনজোড়ার দিকে তাকিয়ে, নির্জন স্টেশন প্ল্যাটফর্মের
দিকে তাকিয়ে, দূরের সেই বাজে পোড়া বটগাছটার দিকে তাকিয়ে, সাঁওতাল পাড়ার এক
কোণের সেই পলাশ গাছটার দিকে তাকিয়ে | কয়েকটা মুহূর্তমাত্র, তারপরই গিরিজাপ্রসাদের মনে হল যেন তাঁর জীবনের ঘড়ি হঠাৎ
থেমে গেল | সময়ের পা থেমে গেল চিরদিনের জন্যে | সারা জীবন ঘড়ির কাঁটা ধরে
চলতে হয়েছে, চঞ্চল ব্যস্ততার মধ্যে যে জীবন কাটিয়ে এসেছেন, এই দু'দণ্ড আগেও যিনি
তাড়াছড়ো করে ট্রেন ধরেছেন, তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে মালপত্র নামিয়েছেন--স্ত্রীকে,
ছেলেমেয়েদের, তাঁর যেন হঠাৎ মনে হল সময়ের আর কোন দাম নেই. । রয়ে বসে,
Rare জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যেন উপভোগ করতে পারবেন, জিরিয়ে জুড়িয়ে চুমুক
দিতে পারবেন এবার জীবনের পেয়ালায়, বিলম্বিত লয়ে | কর্মজীবনে একটা মুহূর্ত অবসর পাননি 1 ঘড়ি ধরে চলতে হয়েছে সারাটা পথ ।
ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পা বেঁধে WAS ধরে ঘুম থেকে উঠেছেন, ট্যুইশনিতে বেরিয়েছেন,
ইস্কুলে গেছেন, আবার ক্লান্ত শরীর নিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে এসেই ছাত্রদের নিয়ে নিজের ঘরেই
পড়াতে বসতে হয়েছে। শিক্ষকের মহান আদর্শে লক্ষ রেখে জীবন শুরু করেছিলেন,
শিক্ষকতাকে ভেবেছিলেন সাধনা | কিন্তু সংসারের আর পাঁচজনের সাধ মেটাবার দায়ে
অবসর সময়টুকুকেও খরচ করে দিতে হয়েছে | শ্রীষ্মদিনের মরা পুকুরের শেষ জলবিন্দুকে
যেমন ভাবে ভবিষ্যতের আশায় চাষীরা খরচ করে বসে জমিতে সেচ দিয়ে | সব রস নিঃশেষ করে ফেলেছেন গিরিজপ্রসাদ, কিন্তু মাঠ ভরেনি ধানে ধানে । ব্যর্থ
নিঃস্ব জীবন নিয়ে তাই আজ আবার তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছে যেখান থেকে একদিন
অনেক আশা নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই । এর চেয়ে দুঃখের কি থাকতে পারে
তাঁর জীবনে ! এই বনপলাশি গ্রাম-_শৈশব আর প্রথম যৌবনোম্মেষেত্ন দিনগুলির রঙিন
স্মৃতিতে ঘেরা গ্রাম, কতদিন কর্মক্রান্ত অবসন্ন শরীরে স্বপ্ন দেখেছেন এখানে ফিরে
আসার | ভেবেছেন, এখানে ফিরে এলেই বুঝি ফেলে-আসা জীবনের সেই রসমধুর
দিনগুলিতেও ফিরে যেতে পারবেন ৷ কিন্তু এমনভাবে আসতে হবে কোনদিন মনে
হয়নি | চাকরি থেকে অবসর নিয়ে -অবসর কি তিনি নিতে চেয়েছিলেন ? না,
গিরিজাপ্রসাদের ধারণা চাকরি থেকে কেউ অবসর নিতে চায় না। প্রথম জীবনে একবার
বেকার হয়েছিলেন, আজ আবার বেকার হয়ে গেছেন । উপার্জন নেই, কিন্তু দায়দায়িত্ব
কমেনি । যে-কটা টাকা পেয়েছিলেন আয়-ব্যয়ের চড়াই-উতরাই পার হতে গিয়ে
দেখেছেন সে-.সামান্য সঞ্চয় কখন চড়ুই পাখির মত চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেছে | আর মাত্র সামান্যই বাকি 1 তাই শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন গিরিজাপ্রসাদ, ফিরে এসেছেন
শেষ ক'টা দিন এখানেই শেষ করে যেতে ৷ বিঘে কয়েক জমি আছে, বটে, কিন্তু এতদিন
তার খোঁজ রাখেননি । এমনকি স্ত্রী যখন বার বার খোঁজ রাখতে বলেছেন, তখনও হেসে
উড়িয়ে দিয়েছেন, বলেছেন, গিরীনের অত AG সংসারটার কথাও তো ভাবতে হবে | স্ত্রী বেঁকে দাঁড়িয়েছে কখনও-কখনও, তোমার সংসারটা বড় নয় ? নাকি পাঁচশো হাজার
মাইনে পাও তুমি ? সারা জীবন পাবে ? গিরিজাপ্রসাদ স্ত্রীর রুষ্ট মুখের দিকে তাকিয়ে হেসেছেন। বলেছেন, মুশকিল কি
জানো, ata যে তাই ভাবে ! এক-একবার নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে শঙ্কিত হয়েছেন গিরিজাপ্রসাদ 1 কিন্তু পরক্ষণেই
অবনীমোহনকে মনে পড়ে গেছে। বময়ি গিয়ে বড়লোক হয়েছিল অবনীমোহন, তারপর কলকাতায় ফিরে বাড়ি করেছে।
১৬