কবি ও কর্মী রবীন্দ্রনাথ ও কালীমোহন ঘোষ | Kabi O Karmi Rabindranath O Kalimohan Ghosh

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। ওই ১৯১২ সালেই পুত্র-পুত্রবধূ সহ রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত হন সেখানে। সে-সময়েই প্রকাশিত হয় ইংরেজি 'গীতাঞ্জলি'--ইংলন্ডের কবি ও ভাবুকসমাজে তা দারুণ আলোড়ন তোলে--শুরু হয় রবীন্দ্র-বন্দনা। কালীমোহনবাবু সে-সময় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীরূপে ইংরেজ সাহিত্যিক-শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের সান্নিধ্যলাভে সমৃদ্ধ হচ্ছেন, গড়ে তুলছেন তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কবি ইয়েট্‌স্‌ আর এজরা পাউন্ডের সঙ্গে কালীমোহনবাবু ও কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। 'পিতৃস্মৃতি”-তে রখীন্দ্রনাথ লিখছেন-_“চোখে পড়বার মতো আর-একজন ছিলেন য়েটস-_অতি সহৃদয় মানুষ। তিনি তখন রাসেল স্কোয়্যারের নিকটবর্তী ওর্বান প্লেসে এক জুতোর দোকানের উপরতলার ছাদের ঘরে বাস করতেন। কালীমোহন ঘোষ ও আমি বহু সন্ধ্যা যাপন করেছি য়েট্সের চিলেকোঠায়, অনেক রাত অবধি গল্পগুজবে কেটেছে। বাবার কাছে নিত্যনতুন লোকের আনাগোনা চলছে। আমি ও কালীমোহনবাবু এদিকে আমাদের উদ্বৃত্ত সময়টুকু কাটাচ্ছি GOA ও এজরা পাউন্ড-এর সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ।” এই সময়কার আর-একটি ঘটনা উল্লেখ্য--কবির অন্তরঙ্গ শিল্পী বন্ধু রোটেনস্টাইন তখন পার্লামেন্ট হাউসে কিছু ভারতীয় দৃশ্য আকছিলেন-_-তাতে বারাণসী ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির ছবি তিনি কালীমোহনবাবুর আদলেই আঁকেন--মডেল হিসেব তাকেই বেছে নিয়েছিলেন। কিছুকাল ইংলন্ড-বাসের পর কালীমোহনবাবুকে ফিরে আসতে হল শান্তিনিকেতনে, কেন না বন্ধুদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থসাহায্য তিনি পাননি। দেশে ফিরে আবার যোগ দিলেন শান্তিনিকেতন-বিদ্যালয়ের কাজে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানে উল্লেখ্য ভূমিকা নিয়েছেন তিনি--পৌষ উৎসব থেকে শুরু করে মহর্ষি-স্মরণ সবকিছুরই সঙ্গে তার সক্রিয় সম্পর্ক। আবার পল্লীসেবার কাজকেও ভুলে থাকেননি। তার বাল্যজীবন কাটে পল্লী-পরিবেশে, যৌবনে স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের সুখ দুঃখ, অভাব-অভিযোগ ও নানাবিধ সমস্যার সম্যক্‌ পরিচয় পেয়েছেন। তারপর গুরুদেবের জমিদারীতে গ্রাম-উন্নয়নের কাজ করে সঞ্চয় করেছেন বিপুল অভিজ্ঞতা। এমন কি, সেসময় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল শিলাইদহ অঞ্চলের লালন ফকির সশম্প্রদায়ের--তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বাউলগান। পল্লীজীবন সম্পর্কে তার এই অভিজ্ঞতার কথা আশ্রমগুরুর অজানা ছিল না। তাই তিনি এই আদর্শবাদী arma সহকর্মীকে কেবল বিদ্যালয়ের কাজে ধরে রাখেননি- বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গ্রামজীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকার উপদেশ দিয়েছেন কালীমোহনকে। পরবর্তীকালের ইতিহাস রবীন্দ্রনাথের সেই ভবিষ্যৎ-দৃষ্টিরই সাক্ষ্য দেয়। ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শজ্ীনিকেতনের পল্লী সংগঠন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। রবীন্দ্রনাথের তরুণ ইংরেজ বন্ধু লেনার্ড নাইট এলমহার্সট্‌ অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আর শিশুবিভাগের অধ্যক্ষ কালীমোহন হলেন পল্লীসেবা বিভাগের পরিচালক। এ-প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশীর্‌ মন্তব্যটি উল্লেখ্য--'রবীন্দ্রনাথ ও শাস্তিনিকেতন' গ্রন্থে তিনি লিখছেন--“বস্তুত, এ দুই কাজের স্বরূপ ভিন্ন নয়। শিশুরা যেমন অসহায় আমাদের



Leave a Comment