সাতরঙ [খণ্ড-২] | Satrang [Vol. 2]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৮ পাহাড়ীদা পাহাড়ী সান্যালের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা জন্মেছিল একটা বিশ্রী ঘটনার মধ্যে দিয়ে । তার আগে পাহাড়ীদার সঙ্গে পরিচয় ছিল। কর্মসূত্রে তিনি আমাকে চিনতেন। কিন্তু তেমন একটা ঘনিষ্ঠতা হয়নি। হল ওই বিশ্রী ঘটনাটার পর। সেটা ঠিক কোন সাল মনে নেই। সম্ভবত পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি। সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যে বছর দেহত্যাগ করেন সেই বছরেই | আমাদের উপ্টোরথ পত্রিকার পক্ষ থেকে 'মানিক স্মৃতি উপন্যাস প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। কোনও লেখকের প্রথম রচিত উপন্যাসের পাগুলিপি এই প্রতিযোগিতার অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন মতি নন্দী, দ্বিতীয় পূর্ণেন্দু পত্রী, এবং তৃতীয় হয়েছিলেন অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁরা তিনজনেই এখন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক। প্রতি বছরই উপ্টোরথ-এর বার্ষিক অনুষ্ঠানে শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মানিত করা হত। সে বছর উৎসব হয়েছিল রঙমহল থিয়েটারে। সেই উৎসবেই ওই তিন লেখককেও পুরস্কৃত করা হয়। উৎসবে পৌরোহিত্য করেছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অশোককুমার সরকার এবং প্রধান অতিথি ছিলেন জ্যোতি বসু। জ্যোতি বসু তখন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলের নেতা। যেহেতু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের MES পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে সেইজন্য জ্যোতিবাবুর মতো একজন কমুযুনিস্টকে প্রধান অতিথি করার কথা ভেবেছিলেন উল্টোরথের কর্ণধার প্রসাদ সিংহ। আমরাও আশা করেছিলাম জ্যোতিবাবু মানিক-সাহিত্য এবং তার বামপন্থী মতবাদ সম্পর্কে কিছু সারগর্ভ আলোচনা করবেন। কিন্তু জ্যোতিবাবু আমাদের নিরাশ করলেন। ভাষণ দিতে উঠে তিনি মামুলি দু-চারটি কথা বলে পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই তার বক্তব্য শেষ করলেন। এই ব্যাপারটা আমাদের মতো ইয়াং গ্রুপকে খুবই বেদনাহত করল। জ্যোতিবাবু তখন আমাদের হিরো। বিপ্লবের প্রতীক | খুব আশা করেছিলাম অন্তত আধঘণ্টা তিন কোয়ার্টার তার মুখ থেকে জ্ঞানগর্ভ ভাষণ GAT! সাহিত্যের ব্যাপারে তার ভেসেলটি সে এম্পটি সেটা তো তখন বুঝিনি। রঙমহলের বাইরে লবিতে দাঁড়িয়ে আমরা এই নিয়ে আক্ষেপ করছিলাম। এমন সময় প্রসাদদা এসে আমাদের পাশে দীড়ালেন। বললেন : দোষটা তো তোদেরই। তোরা তো গোড়াতেই একটা মারাত্মক ভুল করেছিস্‌। প্রসাদদার কথায় বিস্মিত হলাম। বললাম : কী ভুল? প্রসাদদা বললেন : স্টেজের ওপর ব্যাকড্রপটা ব্ল্যাক রাখা উচিত হয়নি তোদের। বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ল। বললাম : তার মানে? প্রসাদদা বললেন : দেখলি না, জ্যোতিবাবু ভাষণ দিতে উঠে একবার পেছন ফিরে দেখে নিলেন। তারপর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ভাষণ শেষ। হতভম্বের মতো বললাম : তাতে কী হল? প্রসাদদা বললেন : জ্যোতিবাবুর পেছনের পর্দায় যদি একটা মনুমেন্টের ছবি এঁকে দিতে পারতিস তাহলে ঘণ্টাখানেকের আগে জো্যোতিবাবুর TSO থামত না। বরাবর পেছনে মনুমেন্টকে রেখে ভাষণ দেওয়া অভ্যেস তো। ওটাই ওঁর ইন্স্পিরেশন। প্রসাদদার কথায় হেসে ফেললাম। এই জাতীয় ইন্স্ট্যান্ট রসিকতা ওঁর পক্ষেই সম্ভব। অসাধারণ রসবোধ ছিল ভদ্রলোকের | কথাটা বলেই দীত খুঁটতে খুঁটতে প্রসাদদা চলে গেলেন আর তার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ট্রামরাস্তা পেরিয়ে পাহাড়ী সান্যালকে আসতে দেখা গেল রঙমহলের দিকে।



Leave a Comment