পুণ্যস্মৃতি | Punyasmriti

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৯১১ খৃস্টাব্দ পুণ্যস্মৃতি ৩ জিনিসপত্র ট্রেনে পড়িয়া আছে কি না, এই লইয়া খানিক চেঁচামেচি খোঁজাখুঁজি চলিল। তাহার পর সকলে স্টেশনের বাহিরে আসিয়া দীড়াইল | আমাদের জন্য একটি ঘোড়ার গাড়ি ও একটি বলদ-বাহিত বস্‌ অপেক্ষা করিতেছে দেখা গেল। আমাদের পরিচিত দুইজন যুবক শান্তিনিকেতনের কয়েকটি ছাত্রকে সঙ্গে. করিয়া আমাদের অভ্যর্থনা করিতে আসিয়াছে দেখিলাম। আমাদের সকলের ইচ্ছা যে হাঁটিয়া যাই, তাহা হইলে দুই ধারের দৃশ্য বেশ ভালো করিয়া দেখা যায়। কিন্তু অভ্যর্থনা-সমিতির সভ্যেরা তাহাতে একেবারেই নারাজ, তাহারা আমাদের গাড়ি না চড়াইয়া কিছুতেই নিরস্ত হইলেন না। ঘোড়ার গাড়িতে চারজন ও অন্য সকলে. বস্‌-এ চড়িয়া যাত্রা করা গেল। শুক্লপক্ষের রাত্রি, জ্যোৎস্নায় চারিদিক উদ্ভাসিত অল্পক্ষণের মধ্যেই বোলপুরের বাজার ছাড়াইয়া আমরা খোলা মাঠের মধ্যে আসিয়া পড়িলাম। বালিকার দৃষ্টিতে সেই আলোক প্লাবিত প্রান্তর স্বপ্নলোকেরই মতো! সুন্দর লাগিয়াছিল। এখনকার চোখে যেন আর কিছুই তত সুন্দর লাগে না। আধ ঘণ্টার মধ্যে আমরা শান্তিনিকেতনে আসিয়া পৌছিলাম। ঘোড়ার গাড়ি আগে আগে আসিয়াছে, বলদের গাড়িটি কিছু পিছাইয়া পড়িয়াছে। রাস্তার উপর ara পড়িলাম। একজন চাকর আমাদের পথ দেখাইয়া লইয়া চলিল। ফুলবাগানের ভিতর দিয়া গিয়া একটি চওড়া বারান্দা-ঘেরা বাড়িতে উঠিলাম। বাড়িটির চার দিকেই বাগান, কয়েকটি সুন্দর আমলকি গাছ চোখে পড়িল। শুনিলাম ইহা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ের বাড়ি। তিনি এবং তাহার পুত্রবধূ শ্রীযুক্তা হেমলতা দেবী তখন পুরী বেড়াইতে গিয়াছেন, তাই অতিথিদের জন্য এখন এই বাড়ি ছাড়িয়া দেওয়া হইয়াছে বাড়িটির নাম শুনিলাম নিচুবাংলা। এখানে কেবল আমরা মেয়েরাই ছিলাম, একমাত্র বাবাকে কবি আমাদের অভিভাবক করিয়া সেখানে রাখিয়া দিয়াছিলেন। একজন ভদ্রলোক আসিয়া এই সময় আমাদের অভ্যর্থনা করিলেন। দিদির কাছে শুনিলাম তিনি সম্তোষচন্দ্র মজুমদার | আগের বার যাহারা আসিয়াছিলেন তাহারা সকলেই ফিরিয়া গিয়া ইহার ভদ্রতা ও অতিথিবৎসলতার শতমুখে প্রশংসা করিয়াছিলেন। এখন দেখিলাম, তাঁহারা অত্যুক্তি তো করেনই নাই, হয়তো-ব৷ Salat বলিয়াছেন। সামনের চওড়া বারান্দায় শতরঞ্চি বিছাইয়া আমাদের বসিবার জায়গা করিয়া দেওয়া হইল। সঙ্গিনীরা তখনো আসিয়া পৌঁছান নাই। বসিয়া বসিয়া নানা বিষয়ে গল্প হইতে লাগিল। আরো আধ ঘণ্টা পরে বলদ-যানটি আসিয়া পৌঁছিল। শুনিলাম আরোহীরা অর্ধেক পথেই নামিয়া হাঁটিয়া আসিয়াছেন। অতঃপর জিনিসপত্র গুছাইয়া রাখা ও কে কোথায় থাকিবে তাহার ব্যবস্থা করিতে খানিক সময় কাটিয়া গেল। কয়েকজন ছোটো ছোটো ছেলের উপর মেয়েদের আদরযত্ন করিবার ভার দেওয়া হইয়াছিল বোধ হয়। তাহারা যত্বের আতিশয্যে আমাদের অস্থির করিয়া তুলিল। রাত্রি ভোর হইয়া আসিতেছিল, কিন্তু বালকগুলির ইচ্ছা আমরা আবার এখন শুইয়া ঘুমাই। বিছানা পাতিয়া দিতে তাহারা মহাব্যস্ত। অগত্যা অল্লক্ষণের জন্য আমাদের শুইতেই হইল। সম্তোষবাবু বলিয়া গেলেন, পরদিন সকালে বিদ্যালয়ের ছেলেদের স্পোর্টস আছে। সুতরাং সকাল সকাল উঠিবার



Leave a Comment