মুখর মৃত্যু স্তব্ধ জীবন | Mukhar Mrityu Stabdha Jiban

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
মুখর মৃত্যু করে কত কথা তিনি বলেন মনে মনে। সে সব তিনি ভুলে গেছেন। ভূলে গেছেন তিনি তার অটুট স্মৃতিশক্তি থাকা সত্ত্বেও। তুলে গেছেন বলে দুঃখ CAR এদের কাছে যে সব দুঃখ বেদনা তিনি নিবেদন করেছেন তা মনে থাকলে দুঃখ বেদনাকে ভুলে থাকা সম্ভব হত না। এদের কাছে নিবেদিত দুঃখ-বেদনাকে মনে রাখবার দায়িত্ব তিনি নেননি। ঠিক মাথার দিকে বাবার ফটো- যৌবনের। বাবা বেঁচে ছিলেন পঞ্চাশ পর্যস্ত। পাশে ওর মার ফটো--_- তাও যৌবনেরই। মার মৃত্যু আটচল্লিশে। কিন্তু এ ফটো ছাড়া তার মা”*র ফটো CAR! পুত্রের ফটো-_ পঁচিশের একটি ত্রিশের গোটা কয়েক। সকলেরই যৌবনের ফটো। বিনয়বাবুরও ফটো গোটা তিনেক। একটা মাত্র তিনচার বছর আগের | গত তিন পুরুষে তিনিই একমাত্র বৃদ্ধ হয়েছেন। বুড়ো হয়েছেন-_ তাকেই একমাত্র এতগুলো জন্মদিনের উৎসবের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। বাবা-মা-ছেলে-_ বৌমা সকলেরই পূর্ণ যৌবনের ফটো। কেবল তারই একলা নিলজ্্জ বার্ধক্যের ফটো। এতদিন বেঁচে থাকবার চিরকালের সাক্ষী হয়ে রইল এ নিজের বৃদ্ধ বয়সের তোলা ফটোগুলো। জোর করে সুকুমার-শর্মিলা তুলে তারপর এনলার্জ করে রেখেছে। হোক টকটকে রঙ, সোজা মেরুদণ্ড, সজীব স্মৃতি-_ তবু, নিজেকে এ ঘরের সকলের চেয়ে বৃদ্ধ লাগে। তিনিও তো আর চিরকাল বেঁচে থাকবেন না-_ তবু তিনি যে একদা বুড়ো হয়েছিলেন একথা আর কিছুতেই চাপা থাকতে পারবে না। যে বংশের সবাই যৌবনের সীমান্ত শেষ করবার আগেই জীবন শেষ করেছেন সেই বংশে এতকাল বেঁচে তিনি যেন বংশে অযোগ্য উত্তরাধিকারী হয়েছেন। আয়ু চুরির জন্যে নিজেকে বংশের কলঙ্ক মনে হয়। এই বংশ মৃত্যুকে যে নজরানা দিয়ে এসেছে, তিনি যেন মৃত্যুকে পাওনা থেকে ফাকি দিয়ে বংশের মর্যাদা নষ্ট করেছেন। মৃত্যুকে ঠকিয়ে বংশকে হেয় করেছেন। কখনো কখনো নিজের পূর্বপুরুষ ও উত্তরপুরুষদের ওপর ক্ষোভ হয়। জন্মদিনের দিনগুলো যখন নিরুপায়ের মত এগিয়ে আসতে থাকে--_ তখন পালাবার সকল পথ রুদ্ধ দেখে ভারী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কিছুক্ষণের জন্যে। অল্প বয়সেই যে যার মত স্বচ্ছন্দে সরে AGT! কেউ ওর দিকে তাকাল না। অল্প বয়সের ala পৃথিবী দেখতে দেখতে পৃথিবীকে রঙিন জেনেই বিদায় নিল। আর তার কাধের ওপর আয়ুর বোঝা, দায়িত্বের বোবা, পৃথিবীকে শুষ্ক শীর্ণ বিবর্ণ দেখবার অপ্রিয় কাজ চাপিয়ে দিয়ে একে একে স্বার্থপরের মত যে যার চলে গেল। বাবা-মা-কস্ত্রী-পুত্রবধূ সবাই যেন জন্মের আগে পরামর্শ করে এসেছিলেন অল্পদিন বাঁচবেন, তাকে একা রেখে চারদিক থেকে খসে খসে পড়ে যাবেন। নিজেকে মনে হয় জ্যোতিহীন Psy সূর্য-_ ওর চারদিক থেকে গ্রহ-উপগ্রহগুলো সব ছুটে পালিয়ে গেছে-- স্তুপীকৃত বয়সের ভারে তিনি যেন কেন্দ্রে বসে গ্রহ-উপগ্রহের স্মৃতি চয়ন করে চলেছেন। সুকুমার যেন সুদূর আকাশের প্লটো-_ নতুন আবিষ্কার-_ সৌরজগতে একটি মাত্র গ্রহই আছে-_ কিন্তু ৮



Leave a Comment