সময়ের উপহার | Samayer Upahaar

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
সময়ের উপহার > ঘণ্টা দু-এক বাদে আবার পা দুটি স্ববশে এল। শরীর ও মন ঝরঝরে। আবার নতুন উদ্যোগে কিছু শুরু করা যায়। কালই এই শহর ছেড়ে চলে যাব, আজকের শেষ দিনটা এমনভাবে হোটেলের ঘরে শুয়ে নষ্ট হবে? ঘড়িতে বাজে মাত্র সাতটা, এটা ACH ন৷ বিকেল না দুপুর তা বলা মুশকিল। বাইরে ঠিক দুপুরেরই মতন ঝকঝকে রোদ। আমাদের হোটেলের ঘরের জানালার ঠিক সামনেই দুটো বেশ বড় ঝাকড়া-চুলো সাইপ্রেস গাছ, ভ্যান গঘের অনেক ছবিতে এই সাইপ্রেস গাছ দেখা যায়, সুতরাং বাইরের দৃশ্যটি ভ্যান গঘের আঁকা একটা ছবি বলেই মনে হয়। কিছুক্ষণ একটা বই খুলে বসে রইলুম, কিন্তু মনঃসংযোগ হল না। বিদেশের মুল্যবান একটি অপরাহ্ণ এমনভাবে নষ্ট করতে ইচ্ছে করে না। আবার বেরিয়ে পড়লুম হোটেল থেকে। কয়েক পা হাঁটার পর এমনই চমক লাগল CA দাঁড়িয়ে পড়লুম হঠাৎ। স্বপ্ন দেখছি না তো? এটা কি বাস্তব কোনও শহর না রূপকথার একটা YO? ঘড়িতে দেখলুম, আটটা বেজে দশ, এখনও আকাশে রয়েছে পরিষ্কার দিনের আলো, এর মধ্যে চতুর্দিকের রাস্তাঘাট একেবারে জনশূন্য। চৌরাস্তার মোড়ে যেদিকে তাকাই, কোথাও একটাও মানুষ নেই, আমি ছাড়া। এ-ও কি সম্ভব? দুপুরবেলা এই পথ দিয়ে গেছি, সেই সব দোকান চিনতে পারছি, কিন্তু কোথাও কোনও প্রাণের চিহ্ন নেই৷ স্ব দোকানেই কাচের দেওয়াল, ভেতরে আলো জ্বলছে, বাইরে থেকে ভেতরের সব কিছু দেখা যায়, কিন্তু ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলুম। খুব মিহি ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে, বাতাসে শীত-শীত ভাব, আমি শুধু একটা সোয়েটার পরে আছি, ওর ওপরে আর একটা কোনো গরম জামা চাপালে আরাম লাগত, কিন্তু আর কিছু আনিনি আমি। আমার রোমাঞ্চ হল। এত বিখ্যাত এই শহরের এক চৌরাস্তা আমি দাঁড়িয়ে আছি, চারপাশে বড়-বড় বাড়ি, প্রত্যেক দিকে লাইন করা অজস্র দোকান, অথচ মাত্র সন্ধে আটটায় সব একেবারে নিঃসাড়, একটা মানুষেরও দেখা পাওয়া যায় না। আমার হোটেলটা শহরের এক প্রান্তে | কিন্তু কল্পনা করা যায় কি যে ACH আটটার সময় টালিগঞ্জ ও দমদমের রাস্তায় একটিও মানুষ নেই? একটা ট্রামের আওয়াজে চমক ভাঙল। তা হলে ট্রাম চলছে! এখানকার ট্রাম এক-কামরা, আমাদের মতন ফার্স্ট ক্লাস-সেকেন্ড ক্লাস নেই। তাকিয়ে দেখলুম, গোটা ট্রামে ঠিক তিনজন মানুষ বসে আছে। তারপর দেখলুম, গাড়িও চলছে রাস্তা দিয়ে। শহরটা ঘুমিয়ে পড়েনি। মনে পড়ল, এখানকার সমস্ত দোকানপাট SVS সময় বন্ধ হয়ে AA | তারপর আর কেউ রাস্তা দিয়ে হাঁটে না! বড়-বড় বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলুম। সমস্ত জানালার পবদা টানা। রাস্তার ধারে বহু গাড়ি পার্ক wat আছে। এই সব গাড়ির ওয়াইপার কেউ ঢুরি করে না, CoO লাইট খুলে নেয় না! দোকানগুলোর কাচের দেওয়াল ভেঙে কেউ pla করে না! পথ দিয়ে মানুষ হাঁটে না, তবু দোকানগুলোর মধ্যে আলো জ্বেলে রেখেছে কেন? মোড়ের ফোয়ানা থেকে জল পড়েই যাচ্ছে, কেউ দেখবার নেই, তবুও! সোজা হাঁটতে লাগলুম আপন মনে। খানিকবাদে কোনও-কোনও দোকানের ভেতর থেকে শব্দ পেতে লাগলুম। সেই সব দোকানের অন্দরমহল বাইরে থেকে দেখা যায় না, গাঢ় রঙের পরদা ফেলা। সাইনবোর্ডে দেখলুম, সেটা একটা এর। অর্থাৎ হোটেল-রেস্তোরীা এখনও খোলা। একটা ওই রকম দোকান থেকে পুতুলের মতন সুন্দর দুটি নারী-পুরুষ বেরিয়ে সামনের গাড়িতে উঠল। অর্থাৎ প্রায় কুড়ি মিনিট পরে খুব কাছাকাছি দুজন জীবন্ত মানুষ দেখলুম। নির্জনতা জিনিসটা পাহাড় কিংবা সমুদ্রের ধারে ভালো, কিন্তু কোনও বড় শহরের রাস্তায় এরকম নির্জনতা খুবই অস্বস্তিকর। খানিকক্ষণ হাঁটার পর মনে হল, আমিও তো কোনও রেস্তোরাঁয় ঢুকে একটুক্ষণ বসলে পারি। তবে ঠিক কোনটায় ঢুকব, তা ঠিক করতে একটু সময় লাগল। যদি আমি ঢোকামাত্র সবাই আমার দিকে তাকায়? একটা রেস্তোরার দরজা COLT ভেতরে এক পা দিয়েও আবার বেরিয়ে এলুম। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ে নাচছে। হয়তো ওখানে সবাই সবার চেনা, একমাত্র আমিই হব বাইরের লোক!



Leave a Comment