মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র [খণ্ড-৭] | Manik Bandyopadhyay Rachanasamagra [Vol. 7]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
পেশা ১৫ HSU ঘুম ভেঙে ছেলের কল্যাণের জন্য দেবদেবীর নাম স্মরণ করে চলেছে। মানত করা হয়ে আছে অনেক আগেই, কেদারের যখন পরীক্ষা শুরু হয। পাস করে আমায় কী এনে দিবি ? তুমি কী চাও ? তুই যা চাস আমি তাই চাই। একটা বউ এনে দিবি আমায় ! প্রমথ বেশ একটু গম্ভীর হয়ে গেছে। ধৈর্য ও Cael বজার বাখার চেষ্টায় এটা এসেছে। শুধু হাত দুটি তার মাঝে মাঝে একটু কেঁপে যাচ্ছে খবরের কাগজ ধরে থাকৃতে। ছোটো ভাই উপেন ভালো ছেলে, পাস দিতে ওস্তাদ। ঘনায়মান পরীক্ষা-সংক্টের দিনেও সে স্কলারশিপ নিয়ে কলেজের প্রথম ধাপ ডিঙিয়েছে। তার মৃদু একটু অবজ্ঞা ও প্রত্যাশার মিশ্রিত ভাব। তার মতো ভালো করে পৰীক্ষা পাসের সাধ্য দাদার নেই, তবে কেদারের পাস করে ডাক্তার হওয়াটা দরকার। প্রমথ সামলাতে পারছে না, পড়াশোনার উঁচুস্তরে উঠতে গেলে অদূর ভবিষ্যতে দাদার সাহায্য দরকার হবে। অমলা বড়ো বকে। তার মুখের যেন আজ কামাই নেই। দাদা তার পাস করবে এটা ধরে গিয়েই সে CORPS হয়ে বকে চলেছে বলে ধমক দিযে তাকে থামিয়ে দিতে কারও প্রাণ সরছে ণা, যদিও এত বড়ো cary সন্মব এত বেশি AHS এক ধরনের বজ্জাতি। দোতলার ভাড়াটে জনার্দন অকারণেই উপর থেকে ডাক দিয়ে জেনে নিয়েছে, কেদার আজ যাচ্ছে কিনা। কথাটা তার জানা। কাল সন্ধ্যায় কেদারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বনহুক্ষণ একটানা আলোচনা চালাবার সময় প্রমথ অনেকবার তাকে জানিয়েছিল। তাছাড়া একতলায় কী ঘটছে না ঘটছে কিছুই গোপন থাকে না দোতলায়। নেহাত ফিসফিস কবে কথা না বললে নীচের তলার কথাবার্তা উপর থেকে সবই প্রায় শোনা যায়। তার মেয়ে মায়া একবার ঘুরে গিয়েছে নীচেব তলা থেকে। বিয়ের যোগ্য পাস করা ছেলেদের বিরুদ্ধে তার একটা নালিশ সমগ্রভাবে ঘনীভূত হচ্ছে দিন কেটে যাওয়ার সঙ্গে। কিন্তু কেদাবের পাস-ফেলে তার কিছু আসে যায় না। পাস করলে আমায় কী দেবেন কেদারদা ? তোমায় ? একটা চশমা দেব--কালো বব এলে ফরসা দেখাবে। পরিমল কী করছে ? দাদা রোগী দেখতে AIA জনার্দনের বড়ো ছেলে সম্প্রতি কবিরাজ হয়েছে। গলির মোড়ের কাছে ছোটো একটি ঘরে ওষুধের ছোটোখাটো দোকান খুলে বসেছে। দু-চারপয়সা কামাতে শুরু করেছে রোগী দেখে এবং ওষুধ বিক্রি করে, তবু এখনও এ পেশা নিতে হওয়ায় তার মনে ক্ষোভ জমা হয়ে আছে নিদারুণ। বাপের সঙ্গে অনেক লড়াই করে তবে সে হার মেনেছিল। কেদার হতে চলেছে ডাক্তার, তাকে হতে হবে কবিরাজ ! কেদার একদিন মোটরে চেপে রোগী দেখবে, কাজে লাগাবে হরেক রকম সহজ আঁর জটিল যন্ত্রপাতি, আলোয় ঝলমল সাজানো ডিসপেনসারিতে বসবে রাজা হয়ে, আর সে কিনা ছোটো একটা ঘুপচি ঘরে কয়েকটা আরক GAS বড়ি সম্বল করে পুঁথি থাঁটবে খল নাড়বে আর শুধু আঙুল দিয়ে টিপে দেখবে নাড়ি। তার মনে হয়েছিল, কেদার এগিয়ে চলেছে যুগের সঙ্গে আর সে পিছনে চলতে শুরু করেছে শত শত বছর আগেকার জীবনের দিকে। বেরিয়ে যাবার সময় কেদারের সঙ্গে তার দেখা হয়। শুধু একটু হাসবার চেষ্টা করেই পরিমল নীরবে রাস্তায় নেমে যায়। কেদারও চুপ করে থাকে। পরিমলের মনের ভাব সে খুব ভালো করেই জানে।



Leave a Comment