মধুমাধবী | Madhumadhabi

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
নাগ্গরে রোয়েরিখ আর্ট গ্যালারীর পাশে দুটো ফারগাছের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। পাহাড়ের নিচে উপত্যকা। নানা ধরনের সবুজ ক্ষেতের চৌকো চৌকো খোপ। মাঝখান দিয়ে মুক্তো গাঁথা চওড়া হারের মত বয়ে চলেছে বিপাশা। এখানে ওখানে সবুজ আর নীলে মেশা টিলা পাহাড়। প্রথম শীতের রোমাঞ্চ ছড়িয়ে পড়েছে সারা Poy উপত্যকায়। নীল নীল পাহাড়ের গায়ে উড়ছে সাদা মসলিনের মত কুয়াশার উত্তরীয়। আমার চোখের সামনে পাশাপাশি দুটি নীলাভ পাহাড়। তাদের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে HANAN ঝকঝকে সাদা চুড়ো। কতক্ষণ তাকিয়ে আছি সেদিকে! এত শোভা, এত মহিমার মাঝখানেও মন আমার feast: আমি আজ বড় আশা নিয়ে এসেছিলাম বিশ্ববন্দিত রাশিয়ান শিল্পী নিকোলাস রোয়েরিখের শিল্পকর্মগুলি দেখব বলে। শিল্পী রোয়েরিখ ভারতবর্ষকে তার দ্বিতীয় মাতৃভূমি বলে মনে করতেন। এখাঁনে নাগ্‌গর পাহাড়ে বসে তিনি তার জীবনের অনেকগুলি aw ছবি এঁকেছেন। এখানেই প্রকৃতির সীমাহীন রূপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিনি অসীম আনন্দলোকে চিরপ্রস্থান করেন। আজ কোন একটি উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই আর্ট গ্যালারী Ta | এতখানি পাহাড়ের ওপর উঠে এসে ইচ্ছা পূর্ণ হল না, তাই হতাশা। দ্বাররক্ষী আমাকে এই খবরটুকু জানিয়েই স্থানাস্তরে চলে গিয়েছে। আমি এখন ঘুরে ঘুরে শিল্পীর স্থান নির্বাচনের কথা ভাবছি। হঠাৎ মেয়েলি গলার একটা আওয়াজ পেয়ে ফিরে দাঁড়ালাম। আসুন, আজ ছুটির দিন তাই বন্ধ ছিল। এতটা ওপরে উঠে এসে ফিরে যাবেন, দেখে যান। টিপিক্যাল কুলুর পোশাক পরা এক তরুণী। গোল্ডেন আ্যাপেলের মত YA! লম্বা বিনুনী। শেষ প্রান্তে লাল একটা ট্যাসেল ঝুমকোর মত ঝুলে আছে। আমি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ওকে অনুসরণ করে আর্ট গ্যালারীতে ঢুকলাম। পাশ থেকে দেখলাম, ওর ছোট্ট কানের দুলটা টুলটুল করে নড়ছে। তরুণী আমাকে যত্ন করে সবকটি ছবি দেখাল। ব্যাখ্যা করে গেল, সঙ্গে সঙ্গে সংক্ষিণ্ড ইতিহাসও বলে চলল। দ্বিতীয় কোন দর্শক নেই। তাই তরুণীটি অনেকখানি সময় আমার জন্য ব্যয় করল। আর যেটা একেবারেই প্রত্যাশা করিনি তাও করে বসল। আমাকে ছবির সমঝদার ভেবে ও নিয়ে গল ওর ছোট্ট কোয়ার্টারে । ওর নিজস্ব সংগ্রহ থেকে একটি ছবি টেনে বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, রোয়েরিখ সাহেবের এই ছবিটা দেখুন। এটি 'কিন্তু আমি ব্রিবান্দ্রম থেকে সংগ্রহ করে এনেছি। প্রায় হালকা একটুখানি নীলাভ রঙের সঙ্গে সাদা মিশিয়ে আঁকা। এক স্বপ্নময় পরিবেশে একখণ্ড শিলাসনে বসে আছেন ভাবুক এক সুদর্শন পুরুষ। স্বপ্নালু চোখের দৃষ্টি সম্মুখে প্রসারিত। দৃষ্টির সামনে হালকা কুয়াশার আস্তরণ। এ কুহেলিকার ভেতর থেকে অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শ্বেত প্রস্তরের Cease | নিচে লেখা আছে ঃ 'রামায়ণের GN” | আমি মুগ্ধ বিস্ময়ে অদি কবি বাল্মীকি আর অযোধ্যা নগরীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। একসময় বেরিয়ে এলাম বাইরে । ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামতে লাগলাম। বাঁক ঘোরার আগে একবার ফিরে তাকালাম পেছন দিকে। তরুণী দাঁড়িয়ে আছে। হালকা একখণ্ড কুয়াশা মসলিনের ওড়নার মত দুলছে তার সামনে। সারা কুলু উপত্যকা সেই মুহূর্তে আমার চোখের ওপর একটা স্বরলিপির পাতা মেলে ধরল। আমি মনে মনে গুনগুন করে সুর সাধতে লাগলাম। সেই সুরের ভেতর থেকে জেগে উঠল এক তরুণী। আমার 'নির্জনে খেলা' উপন্যাসের নায়িকা “বিন্নি'। “নির্জনে খেলা” উপন্যাসটি কবি-সম্পাদক মনীন্দ্র রায় পাগুলিপি অবস্থায় কিছু অংশ পড়ে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি যুগাম্তর গোষ্ঠীর 'অমৃত' সাপ্তাহিকে লেখাটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের জন্য বিশেষ আগ্রহ দেখান। ১৬



Leave a Comment