বাঙলা সাহিত্যে গাযী কালু ও চম্পাবতী উপাখ্যান | Bangla Sahitye Gaji Kalu O Champabati Upakhyan

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
বাঙলা সাহিত্যে গাযী কালু ও চম্পাবতী উপাখ্যান ২৩ এঁরা ছিলেন মাদারিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এবং ইসলাম ও হিন্দু-বৌদ্ধ যোগশাস্ত্রের সংমিশ্রণে সৃষ্ট এক বিচিত্র ও বিকৃত সুফিবাদের ধারক ও বাহক। শাহ্‌ মাদার বা জিন্দা শাহ্‌ মাদারের এই খান্দানটি ১. প্রেমিক, ২. বিচারক, ৩. উন্মাদ ও ৪. সত্যান্বেষী নামক 8টি শাখায় বিভক্ত ছিল বলে জনাব আবদুল ওয়ালী বলেছেন আবার মাদারিয়া সম্প্রদায়ের ভিতরে ১. ইমাম শাহী' ২. 'হাজী কাসিমী' ও ৩. 'খানওয়াদা-ই-তবকাতিয়া' নামক তিনটি উপবিভাগ ছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন ।১ সপ্তদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত মাদারিয়াদের বিশেষ প্রভাব বাঙলার উত্তরাঞ্চলে ছিল । দিনাজপুর জেলায় এক বিচিত্র ধরনের উপাসনালয় ছিল এদের জন্য | আনুমানিক ১২ ফুট x ১২ ফুট আয়তনের মসজিদাকারে নির্মিত এসব ইবাদতখানার পশ্চিম দেয়ালে ছিল একটি মিহরাব এবং উত্তর দেয়ালের সামনে ছিল একটি বেদী 1 পূর্ব দিকের দরজা দিয়ে ঢুকে মুসলমানেরা সামনে BS করে সেজদা দিয়ে চলে যেতেন এবং দক্ষিণ দরজা দিয়ে ঢুকে হিন্দুরা (অনেক সময় মুসলমানও) সামনের বেদীতে মাটির তৈরি ছোট ঘোড়া রেখে যেতেন মানত দ্রব্য হিসাবে । এই বিচিত্র ধরনের ইমারতে নামাজ পড়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের অসংখ্য ইমারত দিনাজপুর জেলার নির্মিত হয়েছিল এবং এগুলি ছিল মাদারিয়াদের উপাসনালয় । বগুড়া জেলায় মাদারিয়াদের প্রভাব বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদ পর্যন্ত টিকে ছিল ৷ জ্যৈষ্ঠ মাসে গাযষী মিয়ার বিয়ের উৎসব মহা সমারোহের সঙ্গে পালন করা হতো এবং তখন মাদার পীরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো । এ সম্পর্কে শ্রী প্রভাসচন্দ্র সেন বলেন,১ “গাযী মিঞার বাশ নিশান ব্যতীত 'হটিলার নিশান', 'বিবির নিশান', “বুড়া মাদারের নিশান' 'লেপামাদারের নিশান” ও 'সা মাদারের 'নিশান' যথাস্থানে চাদরাদি দ্বারা সুসজ্জিত করিয়া প্রতিষ্ঠিত করা হইয়া থাকে | বিভিনুন প্রকারের সাজ-সজ্জা দ্বারা ইহাদিগকে সহজেই চিনিতে পারা যায় 1” বর্তমান কালে AA মিঞার বিবাহোৎসবসহ মাদারের উৎসবটিও বন্ধ হয়ে গেছে। মাদারিয়াদের বিশেষ কোনো প্রভাব উত্তরবঙ্গে বা বাঙলার অন্যত্র কোথাও আছে বলে জানা যায় না। উপসংহার বলা যেতে পারে যে, অন্তত যোড়শ শতাব্দীর দিকে কলন্দরিয়াদের সম্পর্কে যেসব প্রমাণ পাওয়া যায়, তাতে মনে হয় যে, মুসলিম পীর-দরবেশ বলতে তখন সাধারণত তাদেরকেই বোঝাত | এক সময়ে ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা ছিল মুখ্য । পরে ধর্মান্তরিতকরনের প্রক্রিয়াটি যখন অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে তখন এরা নিজেদের এবং তাদের ভক্তদের আত্মশুদ্ধির ব্যাপারেই অধিক সচেষ্ট হন। ধর্মান্তরিতকরনের ব্যাপারে মাদারিয়াদের ভূমিকা খুব বেশি ছিল বলে মনে হয় না। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে তাদের প্রভাব যখন এদেশে অসাধারণ ছিল তখন খুব বেশি অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে হিন্দু-বৌদ্ধ তন্ত্র ও ইসলামের সুফিবাদের জগাখিচুড়িতে যে বিকৃত ইসলামধর্ম মাদারিয়াদের মধ্যে প্রচলিত ছিল, তাতে কোনো হিন্দুর পক্ষে নিজ ধর্ম পরিত্যাগ না করেও তাদের ভক্ত হওয়া কঠিন ব্যাপার ছিল at এ কারণেই খুব সম্ভব হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ই এদের ভক্ত ছিল | হাল আমলে মাদারিয়াদের অতি সামান্য প্রভাব কোথাও কোথাও অতি সীমাবদ্ধভাবে থাকলেও কলন্দরিয়াদের কোনো প্রভাব নেই বললেও চলে | ঘ. বাঙলার বিভিন্ন অঞ্চলের পীর-দরবেশ ও দরগাহ্র তালিকা আগের কথা সঠিকভাবে বলা না গেলেও ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ, এমনকি উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পশ্চিম দেশীয় অসংখ্য পীর-দরবেশ যে বাঙলার বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মপ্রচারে এসেছিলেন, সে কথা একরূপ স্থির নিশ্চিত | তাঁদের মধ্যে অমেকেই এদেশে দেহত্যাগ করেন এবং তাদের কবরগুলিকে কেন্দ্র করে অসংখ্য দরগাহ্‌ গড়ে ওঠে, সেই সঙ্গে এদেশের কোনো পীর-দরবেশের কবরকে কেন্দ্র করেও অনেক দরগাহ্‌ গড়ে ওঠে 1 নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন পীর-দরবেশ ও তাদের দরগাহ্র তালিকা তুলে ধরা হ্ল। ১. শ্রী প্রভাস চন্দ্র সেন : বগুড়ার ইতিহাস, ৮৮ পৃ: |



Leave a Comment