ওরা সেই পুলিশ | Ora Sei Police

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
২০ ওরা সেই পুলিশ সাধারণতঃ সঞ্চয়ী। অতি সাধারণভাবে জীবন কাটায় ওরা | বাজে খরচ সহ্য হয় না ওদের ধাতে। ওদের একমাত্র লক্ষ্য কি করে নিজের মুলুকে আরও দু'বিঘে জমি কিনবে। এ বিষয়ে বাঙালী কনস্টেবলরা যাকে বলে দরাজহস্ত। মাসের বিশ তারিখের মধ্যেই মাইনের টাকা উড়িয়ে দিয়ে এ প্রবাসী ভাইদের কাছেই হাত পাতে। শুধু ওরা কেন, প্রয়োজনে থানার বাবুরা পর্যন্ত ধার করে ওদের কাছে। যদিও পুলিশ কানুনে টাকা ধার দেওয়া ও ধার করা দুটোই বারণ। দিনের ডাইরীপত্তন শেষ হয় অমিতের | তারপর হাঁক দেয় প্রহরী কনস্টেবলকে, পাহারা, সেপাই লোগোকো বোলাও, ডাইরীমে সই করনে হোগা। একে একে তারা এসে নিজেদের ডিউটি বুঝে নিয়ে ডায়রীতে সই করে। কেউ ইংরেজীতে, কেউ বাংলায়, কেউ বা হিন্দিতে। কনস্টেবলদের মধ্যে পশ্চিমের মুসলমান থাকলে উর্দু সইও দু'একটা চোখে পড়ে--বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার নির্বিরোধ অবস্থান ঘটে পুলিশের খাতায়। অমিতের কাজ আপাততঃ শেষ। এবার আর একজন অফিসার এসে থানার চার্জ Foe নেবে তার কাছ CAH | তারপর শুরু হবে তার নিজের কাজ। নিজের কাজ মানে মামলা তদন্তের ডাইরী লেখা, বিভিন্ন এন্কোয়ারীর রিপোর্ট লেখা প্রভৃতি প্রয়োজনে বাইরেও যেতে হতে পারে তাকে। বাড়ি ফিরতে সেই বেলা দু'টো। খেয়ে-দেয়ে ঘণ্টা দুয়েক বিশাম। আবার চারটা সাড়ে চারটা থেকেই কাজ শুরু। চলবে রাত বারোটা একটা পর্যন্ত না, বিশ্রাম বলতে তেমন কিছু নেই এই চাকরিতে দিন-রাত কাজ আর কাজ, শুধুই সরকারি কাজ। কর্মযোগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু খারাপ লাগে না অমিতের। কাজের মধ্যে ডুবে থেকে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মধ্যে যে একটা আনন্দ আছে সেই আনন্দের স্বাদ এতদিনে পেয়েছে অমিত। সংসারে এ ধরনের লোকদেরই বলে “কাজ পাগল”। কাজ ছাড়া যারা আর কিছু জানে at পুলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রায় প্রতিটি লোককেই এই আখ্যা দেওয়া চলে। তাই এদের মুখে ডিপার্টমেন্টের কথা ছাড়া আর কোন কথা নেই খুব বেশি উৎসাহী দু'চারজন ছাড়া এদের মুখে সিনেমা, থিয়েটার, খেলাধুলো, এমন কি দেশের রাজনীতি নিয়েও তেমন কোন আলোচনা শোনা যায় না। অমিতের বয়স HI, নতুন চাকরি, খেলাধুলোয় সে চিরদিনই উৎসাহী। তাই কাজের মধ্যে সুযোগ করে নিয়ে মাঝে মাঝে শহরের একটা ক্লাবে গিয়ে হাজির হয়। শীতের সন্ধ্যায় দু'চার গেম ব্যাডমিন্টন খেলে, অথবা ঘন্টাখানেক তাসের আসরে কাটিয়ে ফিরে আসে থানায়। ডাইরী-বইটা খোলা থাকে সামনে। অমিত বসে থাকে ধুর্জটিবাবুর Tey yal গাঙ্গুলী- থানার চতুর্থ দারোগা | ধুর্জটিবাবুই এসে তার কাছ থেকে বুঝে নেবে চার্জ ৷ থানা-ভিউটি যেন একটা রিলে রেস। তফাৎ শুধু এই যে, রিলে রেসের শেষ আছে, কিন্তু এর শেষ নেই। এ যেন একটা বৃত্তাকার রিলে রেস। যেদিন থেকে থানার প্রতিষ্ঠা সেই থেকে এই ডিউটি আরম্ভ হয়েছে। একজনের পর একজন, তারপর আর একজন । একমুহূর্তের জন্যেও ফাঁক নেই, বিরতি নেই। এ যেন ঠিক সেই রাবণের চিতা। ছেলেবেলার সেই কথাটা মনে পড়ে অমিতের। কে যেন তাকে বৃলেছিল, রাবণের চিতা জ্বলছে তো জ্বলছেই। এখনো নেভেনি। কোনদিনই নিভবে না। দু'কানে আঙুল দে, শুনতে পাবি সেই চিতার আগুনের শব্দ | তার কথামত আঙুল দিয়ে দু'কান বন্ধ করেছিল GG | সত্যি তাই, আগুনের শব্দই বটে | দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন | সেই আগুনের শব্দ সেদিন স্পষ্ট শুনতে পেয়েছিল অমিত।



Leave a Comment