চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথ [খণ্ড-১] | Chalachchitre Rabindranath [Vol. 1]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
৮ চলচ্চিত্রে রবীন্দ্রনাথ হইতে এ কোন্‌-এক সুসজ্জিত সুন্দর উৎসবলোকের প্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হইল। সমস্ত স্বপ্ন বলিয়া বোধ হইতে লাগিল। সেদিন '“মানভঞ্জন' অপেরা অভিনয় হইতেছে। কখন ঘণ্টা বাজিল, বাদ্য থামিয়া গেল, চঞ্চল দর্শকগণ মুহূর্তে স্থির নিস্তব্ধ হইয়া বসিল, রঙ্গমঞ্চের সম্মুখবর্তী আলোকমালা উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিল, পট উঠিয়া গেল, একদল সুসঙ্জিত abl ব্রজাঙ্গনা সাজিয়া সংগীতসহযোগে নৃত্য করিতে লাগিল, দর্শকগণের করতালি এবং প্রশংসাবাদে নাট্যশালা থাকিয়া-থাকিয়া ধ্বনিত কম্পিত হইয়া উঠিল-_তখন গিরিবালার তরুণ দেহের রক্তলহরী উন্মাদনায় আলোড়িত হইতে লাগিল | সেই সংগীতের তানে, আলোক ও আভরণের ছটায়, এবং সম্মিলিত প্রশংসাধ্বনিতে সে ক্ষণকালের জন্য সমাজ সংসার সমস্তই বিস্মৃত হইয়া গেল-_মনে করিল, এমন এক জায়গায় আসিয়াছে যেখানে SHS সৌন্দর্যপূর্ণ স্বাধীনতার কোনো বাধামাত্র নাই। FC মাঝে মাঝে আসিয়া Shows কানে কানে বলে, “বউঠাকরুন, এই বেলা বাড়ি ফিরিয়া চলো। দাদাবাবু জানিতে পারিলে রক্ষা থাকিবে না।” গিরিবালা সে কথায় কর্ণপাত করে না। তাহার মনে এখন আর কিছুমাত্র ভয় ae! অভিনয় অনেক দূর অগ্রসর হইল। রাধার দুর্ভয় মান হইয়াছে ; সে মানসাগরে কৃষ্ণ আর কিছুতেই থই পাইতেছে না; কত অনুনয়বিনয় সাধাসাধি কীদাকীদি, কিছুতেই কিছু হয় না। তখন গর্বভরে গিরিবালার বক্ষ ফুলিতে লাগিল কৃষ্ণের এই NSA সে যেন মনে মনে রাধা হইয়া নিজের অসীম প্রতাপ নিজে অনুভব করিতে লাগিল। কেহ তাহাকে কখনো এমন করিয়া সাধে নাই; সে অবহেলিত অবমানিত পরিত্যক্ত স্ত্রী, কিন্তু তবু সে এক অপূর্ব মোহে স্থির করিল যে এমন করিয়া নিষ্ঠুরভাবে কীদাইবার ক্ষমতা তাহারও আছে। সৌন্দর্যের যে কেমন দোর্দগুপ্রতাপ তাহা সে কানে শুনিয়াছে. অনুমান করিয়াছে মাত্র--আজ দীপের আলোকে, গানের সুরে, সুদৃশ্য রঙ্গমঞ্চের উপরে তাহা সুস্পষ্টরূপে প্রত্যক্ষ করিল। নেশায় তাহার সমস্ত মস্তিষ্ক ভরিয়া উঠিল। অবশেষে যবনিকাপতন হইল, গ্যাসের আলো শ্লান হইয়া আসিল, দর্শকগণ প্রস্থানের উপক্রম করিল; গিরিবালা মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসিয়া রহিল। এখান হইতে উঠিয়া যে বাড়ি যাইতে ইইবে এ কথা তাহার মনে ছিল না। সে ভাবিতেছিল. অভিনয় বুঝি ফুরাইবে না। যবনিকা আবার উঠিবে; রাধিকার নিকট শ্রীকৃষ্ণের পরাভব, ইহা ছাড়া আর কোনো বিষয় উপস্থিত নাই। সুধো কহিল, “বউঠাকরুন, করো কী, ওঠো, এখনই সমস্ত আলো নিবাইয়া দিবে।” গিরিবালা গভীর রাত্রে আপন শয়নকক্ষে ফিরিয়া আসিল। কোণে একটি দীপ DAG করিতেছে-__ঘরে একটি লোক নাই, শব্দ নাই--পৃহপ্রান্তে নির্জন শয্যার উপরে একটি পুরাতন মশারি বাতাসে অল্প অল্প দুলিতেছে; তাহার প্রতিদিনের জগৎ অত্যস্ত বিশ্রী বিরস এবং তুচ্ছ বলিয়া ঠেকিতে লাগিল। কোথায় সেই সৌন্দর্যময় আলোকময় সংগীতময় রাজ্য-_যেখানে সে আপনার সমস্ত মহিমা বিকীর্ণ করিয়া দিয়া জগতের কেন্দ্রস্থলে বিরাজ করিতে পারে, যেখানে সে অজ্ঞাত অবজ্ঞাত তুচ্ছ সাধারণ নারীমাত্র নহে। এখন হইতে সে প্রতি সপ্তাহেই থিয়েটারে যাইতে আরম্ভ করিল। কালক্রমে তাহার সেই প্রথম মোহ অনেকটা-পরিমাণে হ্রাস হইয়া আসিল-_-এখন সে নটনটাদের মুখের রঙচঙ, সৌন্দর্যের অভাব, অভিনয়ের কৃত্রিমতা সমস্ত দেখিতে পাইল কিন্তু তবু তাহার নেশা ছুটিল না। রণসংগীত শুনিলে যোদ্ধার হৃদয় যেমন নাচিয়া উঠে, রঙ্গমঞ্চের পট উঠিয়া গেলেই তাহার AHA মধ্যে সেইরূপ আন্দোলন উপস্থিত হইত। এ-যে সমস্ত সংসার হইতে স্বতন্ত্র সুদৃশ্য সমুচ্চ সুন্দর বেদিকা স্বর্ণলেখায় GSS, চিত্রপটে সঙ্জিত, কাব্য



Leave a Comment