ভারতীয় ধর্মনীতি | Bharatiya Dharmaniti

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৬ অমিতা চ্যাটার্জী সনাতনপন্থী ধর্মব্যাখ্যাকারগণ মনে করেন জনম্মভিত্তিক কর্মবিভাগ মেনে নেওয়ার সপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে। প্রথমত, মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি ও কর্মকৃশলতার দুটি নিয়ামক স্বীকার করা হয় -- বংশগতি ও পরিবেশ। বংশগতির প্রভাব মেনে নিলে বলতে হয় ব্রাহ্মণ-সম্ভান ব্রাহ্মণের প্রবৃত্তি নিয়েই জন্মায়। তার উপরে যদি সে ব্রাহ্মণকুলেই প্রতিপালিত হয়, তাহলে পরিবেশের প্রভাবে পঠন-পাঠন, পৃূজার্চনা, ইত্যাদি ব্রাহ্মণোচিত কর্মে যে সে বিশেষভাবে অনুরক্ত হবে তা বলাই বাছল্য। অন্যান্য বর্ণের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি খাটে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও যে চোখে পড়ে? ধর্মশাস্ত্রকারগণ বলবেন সে তো নিছক ব্যতিক্রম। বাতিক্রম সব নিয়মেরই থাকে। ব্যতিক্রম আছে বলে নিয়ম করা বন্ধ হয় না। ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তগুলির জন্য সামাজিক কাঠামোর মধ্যে কিছু ব্যবস্থা রাখা চাই। প্রাচীন ভারতীয় সামাজিক কাঠামোতে সেরকম ব্যবস্থা fear দ্বিতীয়ত,জন্মভিত্তিক কর্মবিভাগ জীবিকার ক্ষেত্রে অনাবশ্যক প্রতিযোগিতার সম্ভাবনা রোধ করে। যে কোন জীবিকা গ্রহণের পথ যদি সমাজের যে কোন ব্যক্তির জন্য খোলা রাখা হয়, তাহলে প্রতিযোগিতার মাত্রা যে হারে বৃদ্ধি পায় তাতে সামাজিক সংহতি বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে। তৃতীয়ত, কেবলমাত্র স্বাভাবিক প্রবণতা অনুসারী কর্মে প্রবৃত্ত হলেই মানুষ জীবিকা ক্ষেত্রে সফল হয় না, তাকে কর্মোপযোগী পটুত্বও অর্জন করতে হয়। এ জাতীয় পটুত্ব নির্ভর করে প্রশিক্ষণের উপর। এখন প্রশ্ন হল £ একটি পাঁচ/ছয় বছরের শিশুর আচরণ লক্ষ্য করে নিশ্চিত হয়ে বলা যায় কি কোন বিষয়ে তার স্বাভাবিক প্রবণতা, কোন বিষয়েই বা তাকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বলা যায় না। কিন্তু বর্ণবিভাগ জন্মভিত্তিক হলে এই অসুবিধা এড়ানো সম্ভব। বিপক্ষী বলতেই পারেন CA তৃতীয় যুক্তিটি যথেষ্ট জোরাল নয়। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষা সব বর্ণের ক্ষেত্রেই সমান হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর প্রাথমিক শিক্ষাকাল শেষ হওয়ার আগেই সাধারণত অভিজ্ঞ চোখে শিক্ষার্থীর চায়িত্রিক যৈশিষ্ট্য ৬ স্বাভাববিক প্রবণতা সহজেই ধরা পড়ে। তখন বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। এর জন্য জম্মভিত্তিক বর্ণব্যবস্থা স্বীকার করার প্রয়োজন নেই। বর্ণবিভাগের ভিত্তি কি হওয়া উচিত এ আলোচনাকে কেন্দ্র করে রাশিরাশি গ্রন্থ ও প্রবন্ধ লেখা হয়েছে এবং আরও লেখা যেতে পারে। এই ভূমিকাতে এ-আলোচনা বিজস্বৃততর করা সম্ভব নয়। এখনকার মত শুধু এটুকু বলেই প্রসঙ্গান্তরে যাব যে দুর্ভাগ্যক্রমে জন্মভিত্তিক বর্ণব্যবস্থা জাতিভেদ প্রথায় পর্যবসিত হয়েছে — যে প্রথা ভারতীয় সমাজের এক বিশাল অংশকে মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে এবং সেই কারণেই এই প্রথা গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক আধুনিক ভারতীয় সমাজের নীতির পরিপন্থী যে প্রশ্ন নিয়ে আমরা বর্ণাশ্রমধর্মের আলোচনা শুরু করেছিলাম এবারে সে প্রশ্নে ফেরা



Leave a Comment