অন্য বসন্ত | Anya Basanta

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
দুই বেশ কয়েক মাস ধরেই আশঙ্কাটা ঘনীভূত হচ্ছিল, চরমপত্র মিলল আজ। অফিস ছুটির মিনিট কুড়ি আগে। মুম্বই-এর সদর WEA থেকে পাঠানো সাদা জানলা-খামগুলো টেবিলে টেবিলে বিলি করে গেল লক্ষ্মণ। খাম খোলার সময়েও শুভেন্দু পুরোপুরি আন্দাজ করতে পারেনি। পড়তে পড়তে শরীর শক্ত হয়ে যাচ্ছিল ক্রমশ। চোস্ত বয়ান, ধানাই পানাই নেই, যা বলতে চায় চাঁছাছোলা ভাষায় চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে কোম্পানি। ...পূর্বাঞ্চলে ক্রমাগত লোকসানের দরুন এবং এদিকে আর ব্যবসা বাড়ার আশু সম্ভাবনা না থাকায় কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এক, BASSAS পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তরটি আর পূর্বাবস্থায় থাকবে না, এখানকার কর্মিসংখ্যা আটত্রিশ থেকে বারোয় নামিয়ে আনা হল। দুই, যে সব কর্মচারীর বয়স পঞ্চাশের উপরে, অথবা যাঁরা কুড়ি বছরের বেশি চাকরি করছেন কোম্পানি তাঁদের আগামী নব্বই দিনের মধ্যে স্বেচ্ছা অবসর নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। কোম্পানিতে তাঁদের দীর্ঘ অবদানের কথা মাথায় রেখে এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গ্র্যাঢুয়িটি ও অন্যান্য আইন মোতাবেক সুবিধা ছাড়াও এককালীন নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য কোম্পানি অঙ্গীকারবদ্ধ হচ্ছে। অর্থের পরিমাণ কী ভাবে স্থির হবে, পত্রের শেষে তার উল্লেখ করা আছে। তিন, যাঁদের বয়স পঞ্চাশের নীচে, অথবা যাঁরা কুড়ি বছরের কম চাকরি করছেন, এমন দশ জনকে পূুর্রাঞ্চলীয় শাখাতেই রাখা হবে। এই দশজন নির্বাচিত হবেন চাকরিজীবনে সিনিয়রিটি এবং কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে। চার, পিয়ন ব্যতীত এই শাখার বাকি কর্মচারীদের মুম্বই সদর দপ্তর এবং হায়দ্রাবাদ শাখায় বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কে কোথায় যোগ দিতে ইচ্ছুক তা পনেরো দিনের মধ্যে মুম্বই সদর দপ্তরে জানানো আবশ্যিক। পাঁচ, পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তরের শাখা-প্রধানকে আপাতত ওই দপ্তরেই কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর পর দু লাইনের শুকনো ভদ্রতা... উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলির জন্য কোনও কর্মচারীর যদি অসুবিধা ঘটে, কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী তার জন্য আন্তরিক দুঃখিত। প্লিজ বেয়ার উইথ আস। শেষ বাক্যটাকে মনে মনে অনুবাদ করতে পারল না শুভেন্দু। আমাদের মতো করে কষ্ট সহ্য করুন? আমাদের সঙ্গে কষ্ট সহ্য করুন? নাকি আমাদের সহ্য করুন? Ts, কোনওটাই হচ্ছে না। একমাত্র বুঝি সাহেবরাই শব্দগুলোর মর্ম বোঝে। অথবা দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা। ক্ষমতা হাতে থাকলেই বুঝি কথাগুলো বলা যায়। রিডিং গ্লাস খুলে কপালের রগ টিপে ধরল শুভেন্দু, বসে আছে নিঝুম। মাথা বেবাক ফাঁকা, যেন মহাশূন্য। শেষ পর্যন্ত ছুটি তাহলে হয়েই গেল? মাত্র তি্পান্ন ১৮



Leave a Comment