For Complaints/Suggesstions related to this material, please clickHere
বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)
(Click to expand)গআ গান হতে গানে এঁতিহাসিক বিচারে বলা হয়, রামপ্রসাদী গানের পরই বাংলাগানের সৃজনপর্ব অবক্ষয়ের সম্মুখীন হয়েছিল |
কেন না উত্তর-রামপ্রসাদ বাংলা গানে ব্যক্তির মহৎ ভাবাদর্শের পরিবর্তে প্রাধান্য পেয়েছিল একধরনের
এহিক তারল্য ও স্কুল ইন্দ্রিয়তন্ত্র। গানের বাণীতেও অশালীনতার সংক্রাম ঘটেছিল | অর্থাৎ লৌকিকতার
প্রতি অতি-আনুগত্য অষ্টাদশ-উনবিংশ শতাব্দীর যুগসন্ধিক্ষণের গীতিকারদের আবহমান সংগীতিক এঁতিহ্য
থেকে TS করে জনমনোরঞ্জনের তরল প্রচেষ্টার অভিমুখী করেছিল সেই কারণেই কবিগান, হাফ-আখড়াই,
তরজা, খেউড়, পক্ষীদলের গান প্রভৃতি গীতরীতিতে সৃজনের TS আছে কিন্তু সৃষ্টির SAS নেই। সে
সময়ের গান ভাবের বিচারে নিরাবেগ ও অশালীন, বাণীর বিচারে আনুপ্রাসিক ক্লান্তিময়। গীতিরূপায়ণেও
প্রাধান্য ছিল তালোম্মত্ত চিৎকৃত উৎসাহের | অতঃপর, নীলকণ্ঠের মতো সমকালীনতার তীব্র গরলটুকু আত্মসাৎ
করে যিনি সৃষ্টির অমৃত পদ্ম প্রস্ফুটিত করলেন তিনি রামনিধি গুপ্ত বা নিধু বাবু। অবক্ষয়ের কালে খাস করেও নিধুবাবু (১৭৪১-১৮৩৯) যে সার্থক সৃষ্টিধর্মী ছিলেন তার কারণ মুখ্যত
তার শিল্পী-ব্যক্তিত্ব, কিন্তু গৌণত তার দীর্ঘ জীবন। প্রায়-শতায়ু জীবনক্রমায় তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন:
ভারভতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল রচনা, রামপ্রসাদের সাধনসংগীতের স্বর্গ, পলাশির যুদ্ধ , চিরস্থায়ী বন্দোবস্তজনিত
জমিদারি বিপর্যয়, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন, ছাপাখানা ও বাংলা গদ্যের সূচনা, রামমোহনের বেদাস্তচর্চা,
ইয়ংবেঙ্গলের উন্মাদনা প্রভৃতি বিচিত্র অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতার সারদশশী নিধুবাবু হয়ে উঠেছিলেন
একজন ব্যক্তিমানুষ। সেইজন্য বাংলা সংগীতকে অবক্ষয়ের বৈচিত্র্যহীনতা থেকে মুক্তিদানের উদ্দেশ্যে
তিনি ভাবের দিক (থকে গ্রহণ করলেন লিরিকের WIA আবেগ এবং রূপায়ণের অভিনবত্ব ফোটালেন
পশ্চিম ভারতীয় টপ্লা-রীতির অন্তর্ময় লাবণ্যস্পর্শে। প্রসঙ্গত স্মরণীয় যে, লিরিকের মন্ময় সৌন্দর্য বাংলা
সংগীত ও সাহিত্যে নিধুবাবুর আগে প্রকৃষ্টভাবে ফুটে ওঠেনি এবং পাঞ্জাবি Datta রূপকল্প নিধুবাবুর আগে
বাংলা গানে অজ্ঞাত ছিল। এই বিশেষ সংগীতের স্বরূপ অনুশীলন ও স্বীকরণের জন্য তিনি দীর্ঘকাল প্রবাসে
অবস্থান করেছিলেন। তার পরবর্তীকালের সার্থক গীতিকারদের (যেমন : রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল ও
অতুলপ্রসাদ) রচনায় লিরিকের TA সৌন্দর্য ও Gata দানা--এই দুইটি বারবার ব্যবহৃত CAH | এইজন্য
নিধুবাবু বাংলা সংগীতে ক্রান্তিকালের যুগন্ধর শিল্পী। সংগীতের ভাব ও রূপের ক্ষেত্রে তার নবীন চিন্তা
পরবর্তীকালে পথিকৃৎ হয়েছে। অবশ্য কোনো দেশের সাংগীতিক পশ্চাদ্গামি-গ কোনো-একজন ব্যক্তি-শিল্পীর একক সাধনায় মোচন
হয় না; সেজন্য প্রয়োজন হয় দেশব্যাপী সচেতন জাঁগৃতি ও সামগ্রিক সতক্রিয়তা। সাংগীতিক নবজন্ম
সামগ্রিকতাব বোধ থেকে উৎসারিত SA | বাংলা দেশে উনবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক থেকে সেই সম্মিলিত
উদ্যমে ব্যাপক সংগীত-আন্দোলনের সূচনা ঘটে। সেই আন্দোলন কখনো নিতান্ত ব্যক্তিগত উদ্যম, কখনো
প্রাতিষ্ঠানিক, কোথাও সংগীত বিষয়ক পত্রিকা প্রকাশের দায়িত্বপ্রহণ, কোথাও সার্বজনিক স্বরলিপি-পদ্ধতি
আবিষ্কারের সাহায্যে গীতপ্রচারের কর্তব্যপ্রণোদিত শুভবুদ্ধি ৷ তৎকালীন সংগীত-আন্দোলনের বিভিন্ন
কার্যকলাপের অন্তরালে বাংলাদেশে আধুনিক নানা গীতরীতি এবং স্বরূপত সত্যিকারের বাংলা গান উজ্জীবিত
হয়ে উঠেছে। সর্বোপরি স্মরণীয় যে, এই আন্দোলনের পরিণতি ও প্রভাব হয়েছে ব্যাপক ও বিস্বৃত। তার
প্রমাণস্বরূপ দেখা যায়, এই সংগীত-আন্দোলনের নেপথ্যভূমি থেকেও প্রত্যক্ষভাবে উপাদান সংগ্রহ করে
রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল-রজণীকান্ত-অতুলপ্রসাদ-দিলীপকুমার রায় ও নজরুলের রচিত ও সুরারোপিত গানগুলি
বাংলার সারস্বত সাধনায় শেষ্ঠ অর্থ্যরূপে নিবেদিত হয়েছে। ১৫