প্রথম কদম ফুল | Pratham Kadam Phool

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
মোড়া পরিপূর্ণ মাশুল চাপানো আস্ত-সুস্থ সুরক্ষিত চিঠি। আঠার আহ্লাদ একেবারে খামের সীমা পেরিয়ে বাইরে চটে এসেছে; তার মানে খুব সতর্ক হয়ে নিবিষ্ট যত্নে এঁটে-সেঁটে দিয়েছে, যাতে সহসা না কেউ মুক্ত করতে পারে, আলগা করতে পারে প্রাণ-ভ্রমরের কৌটো। কিন্তু কে লিখেছে এ চিঠি ? আর কে! হাওয়ায়-আসা গলার স্বর শুনে মেয়ে বলা যায়, বলা যায় জুতো দেখে, আরো একটু ACA গেলে, তেলের বা সাবানের ACR, তেমনি বলা যায় হয়তো হস্তাক্ষরে। এবং আর একটু গভীর গবেষণা করলে বলেও দেওয়া যায় কত বয়সের হস্তাক্ষর। গায়ে যদি নতুন যৌবনের গর্ব থাকে সাধ্য কি অক্ষরে সেই গোলালো গরিমা না আনো। সাধ্য কি না ফোটাও একটু ছিমছাম টানটোন। তা ইংরেজিতেই লেখো বা বাংলাতেই লেখো। মেয়ে ভাবতেই অত উৎসাহিত হবার আছে কী? মাসিমা-ফাসিমার তো হতে পারে, কিংবা পিসিমা-টিসিমা। করি কী দরকার পড়েছে, চিঠিতে লিখতে তো বাধে না, ফরমাশ করে পাঠিয়েছে। চিঠিটা ওজনে বেশ ভারি, হয়তো কারু ছেলেমেয়ের বইয়ের ফিরিস্তি, ওল্ড বুকশপ থেকে কিনে দেবার বায়না। ভাগ্যের ভাণ্ডারে কত রসিকতাই আছে। হালকা একটা Boas হোঁচট খাওয়াবার জন্যে পথচলতি কত নিষ্ঠুরতার ইট। কিন্তু যাই বলো, বনগান্ধাসী মাসিপিসিরা কেউ নয়, স্ট্যাম্পের কালি ধেবড়ে গেলেও টি-টি-এ পড়া যায়। কলকাতা ছাড়া অমন নামের ঘটা-ছটা আর কার। গড়বেতা বরপেটা দীনহাটা হরিণঘাটা যাই ভাবো, যাই বলো, সব একটা টি। শুধু কলকাতাতেই ডবল টি। সন্দেহ কি, কাকলির চিঠি। কলকাতায় কাকলি ছাড়া আর মেয়ে কই? বেশ তো, স্থির হলে, এখন খুলে দেখলেই তো হয় কে লিখেছে! অচল-অনড় হয়ে আছে সে কী করে? আহা, কী লিখেছে সে কি আর জানে না? নেহাতই মামুলি নীরস SB কথা, পড়া-পরীক্ষা নিয়ে Fens এক-আধটা প্রশ্ন এবং শেষকালে “শুভেচ্ছা' ও নামসই। জানে, জানে, ওদিক থেকে গাছে উঠে মই খোয়াবার তার ভয় নেই। হয়তো বা তার ঝ্যবহারের ক্রুটিতে আপত্তি করে পাঠিয়েছে। ফৌজদারিতে কাসুন্দি পুরোনো হয় না, অপরাধের তামাদি নেই। আর যদি কিছু লেখেও ভাষার টানে, দেখবে, ইচ্ছে করেই ঠিকানাটা উল্লেখ করেনি। যাতে ছটফট ক্রলেও উত্তরে উপশম না পায় কোনোদিন। GIA, SNA, সব সুকাস্তর জানা। আরো জানে, যা লিখেছে দু' লাইন, সামান্য একটা পোস্টকার্ডেও তা লিখতে পারত অকপটে | কিন্তু ন্যাড়া পোস্টকার্ড না পাঠিয়ে সঙ্জিত ও আবৃত যে একটি খাম পাঠিয়েছে তাইতেই সুকান্ত ভরপুর। খামের মধ্যে চিঠিতে লিখিত তেমন কিছুই নেই, না থাক, কিন্তু চিঠির অতিরিক্ত, অলিখিত কিছু আছে, সেইটিই মহৎ। কাকলি জানুক আর না জানুক, খামের মধ্যে সে শুধু চিঠির কাগজই ভরে নি, ভরে দিয়েছে একটি প্রতীক্ষা বা একটি আকাঙ্ক্ষার wef! চিঠির আর মূল্য কি, টিঠির মূল্য আমি তার মধ্যে কী পড়ছি তাতে নয়, কী অলিখিত উদ্ধার করবার আশা করে আছি Bios বী লিখেছে তার চেয়ে কে লিখেছে সেই আমার অনেক। এ সামান্যটিই অমূল্যের পোশাক পরতে পারে শুধু আমার দেখবার গুণে, MTG করে আমার কাছে। ধানের শিষে শিশিরটিকেই দেখি না দেখি সেই হাসিখুশি সূর্য, গগন ছাড়া যার স্থান নেই। তাই চিঠি কে দেখে! এক মুহূর্তের জন্যে তাকে দেখি। তার নত একটি দৃষ্টি, নম একটি পৃথুলতা, নিবিড় একটি নিভৃতি, নিটোল একটি বিন্দুর মত মন। তোমরা তট দেখ আমি তল দেখি চিঠিটা রাখবে কোথায়, লুকোবে কোথায়? ছি ছি, এ তার কী পোশাক, গায়ে গেঞ্জি, পরনে APT লোকে ঠিক AKAN হামলাবাজ মনে না করলেও বাউণ্ডুলে ভাববে। কে জানবে তার ভিতরের কথা। সাধে কি আর মানুষে নেমপ্লেট লাগায়, পদবীর পদ্মবনে ঘুরে মরে! আমার ভীষণ ভূষণে দরকার নেই, গায়ে একটা শুধু জামা থাকলেই আমার এখন চলে যেত, চিঠিটা অপ্রকট করতে পারতাম। খামের চিঠি প্রকাশ্যে কেউ খুলবে না, তা ঠিক, কিন্তু কৌতুহলী তো হবে। আর মেয়েদের কৌতুহল গলাকাটা ছুরির চেয়ে বেশি।” তাকের থেকে বাবার একটা আইনের বই তুলে নিল সুকান্ত । তার মধ্যে গুঁজল চিঠিটা। কি একটা আইনের বই দরকার এমনি ভাব দেখিয়ে তাড়াতাড়ি উঠল উপরের Rew) বাবা খাচ্ছেন, জিজ্ঞেস করলেন, “কী নিলি?' - ১৬



Leave a Comment