বিশ্বভারতী পত্রিকা (১৯৪২-২০০৬) | Visvabharati Patrika (1942-2006)

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
গগনেদ্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রাবলী ১১. মতো, এক ধর্ম গ্রহণের পর কেহ আর পুরাতন ধর্মে ফিরিয়া যায় না। গগনেন্দ্রনাথ কিন্তু তাহার ধরনগুলি একসঙ্গে চালাইয়াছেন, তথাকথিত রূপক চিত্রের সঙ্গে একই প্রদর্শনীতে একেবারে অন্যধরনের পূর্ববঙ্গের দৃশ্য দেখাইয়া আমাদিগকে বিস্মিত করিয়াছেন। এই যে বৈচিত্র্য ও বছদেশদর্শিতা উহা নব্যবঙ্গীয় চিত্রে একেবারে বিরল। দ্বিতীয়ত, কি বিষয়বস্তুতে কি অন্কনপদ্ধতিতে গগনেন্দ্রনাথ নব্যবঙ্গীয় স্কুল হইতে একেবারে বিভিন্ন। পৌরাণিক কাহিনী তিনি সাধারণত বর্জন করিয়া চলিয়াছেন। তাহার বর্ণবিন্যাস এবং রেখাপাতও সম্পূর্ণ নিজস্ব। নব্যবঙ্গীয় চিত্রকরেরা যে “প্যালেট'” ব্যবহার করিয়াছেন, গগনেন্দ্রনাথ সেই “প্যালেট' ব্যবহার করেন AV নব্যবঙ্গীয় চিত্রকরেরা নির্ভর করিয়াছেন প্রধানত রেখার উপর, গগনেন্দ্রনাথ নির্ভর করিয়াছেন “ছোপে'র উপর। তাহা ছাড়া আলো-ছায়ার সংঘাত তাঁহার চিত্রে খুবই বেশি, যাহা সাধারণত AHN চিত্রে নাই-ই বলা চলে। জায়গায় জায়গায় আলো-ছায়ার সংঘাতের GSA তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর ইটালিয়ান চিত্রকর কারভাদ্জোকে ছাড়াইয়া গিয়াছেন। সময়ে সময়ে তাহার এই তীব্রতাকে অত্যন্ত “সেন্সেশ্যনাল” এমন-কি কৃত্রিম বলিয়াও মনে হয়। কিন্তু সে যাহাই হউক, আলো-ছায়ার খেলা সম্বন্ধে গগনেন্দ্রনাথের এই যে অতিজাগ্রত অনুভূতি, উহাও aaa স্কুলে অবর্তমান। সবচেয়ে বড়ো কথা গগনেন্দ্রনাথের চিত্রের যে কোনো শ্রেণীর কথাই ধরি না কেন, প্রত্যেকটিরই একটা বিশিষ্ট চিত্রধর্ম আছে। AIH স্কুল সম্বন্ধে তাহা বলা চলে না। নব্যবঙ্গীয় চিত্রকলা অনেকটা নব্যবঙ্গীয় শিক্ষিত ব্যক্তির মতো, ধর্ম সম্বন্ধে ব্যক্তিগত বিশিষ্টতা বর্জিত। নব্যবঙ্গীয় চিত্রকরদের মধ্যে একদল আছেন যাহারা গোঁড়া গুরুবাদী। তাহারা ধর্ম কি জানিতে চাহেন না, কিন্তু মন্ত্র লইয়াছেন; গলন্ভব্যস্থানের পরোয়া রাখেন না, শখের বাহ্যিক নির্দেশ লইয়াছেন। গুরু বলিয়া দিয়াছেন, সেই পথ ধরিয়া চলিতে হইবে যাহা শহরের বছদুর দিয়া বুড়ো শিবতলা, wate, দ্বাদশ দেউল, ভাঙা ঘাট ইত্যাদির পাশ ধরিয়া গিয়াছে, অর্থাৎ সর্বপ্রকার বাস্তব সম্পর্ক বর্জন করিয়া রাধাকৃষ্ণ, রামলক্ষ্মণ, পঞ্চপাণ্ডবের মূর্তি স্মরণ করিতে করিতে মোগল বা রাজপুত “BACT A অনুকরণ করিতে হইবে, পুরাতন পট আঁকড়াইয়া থাকিতে পারিলে আরো ভালো। আর-একদল আছেন, যাহারা এত গোঁড়া নন, বরঞ্চ একটু বেশি উদার বা “এক্লেক্টিকই বটেন। কিন্তু তাহারাও লক্ষ্য সম্বন্ধে সুনিশ্চিত নন। তাহাদের ধরন দেখিয়া অনেক সময়ে আ্যালিসের সহিত চেশায়ার পুসের কথা কাটাকাটির কথা মনে পড়ে। আ্যালিস জিজ্ঞাসা করিল-_ কোন রাস্তা ধরে যাওয়া উচিত আমায় অনুগ্রহ করে বলে দিন না? চেঃ পুঃ-- তা নির্ভর করছে তুমি কোথায় যেতে চাচ্ছ তার ওপর। আ্যাঃ-- যেখানেই হোক না, বিশেষ কিছু এসে যায় না আমার। চেঃ পুঃ-- তা হলে যে কোনো রাস্তা ধর না কেন তাতেও কিছু এসে যাবে না।



Leave a Comment