আধুনিক ভারত (১৮৮৫-১৯৪৭) | Aadhunik Bharat (1885-1987)

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
সূচনা ৩ ১৯২৮-১৯৩৪, ১৯৪২, আর ১৯৪৫-১৯৪৬। চরমপন্থী পর্বে আন্দোলনের অভিকেন্দ্র ছিল বাঙলা, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাব গান্ধী-পর্বে তা সরে যায় গুজরাট, বিহার, যুক্ত প্রদেশ ও অন্ধের মতো নতুন এলাকায়, নাগরিক বুদ্ধিজীবীদের থেকে মফস্বলের HAAS শ্রেণীতে, চাষীদের এক বড় অংশেও প্রভাবশালী বুর্জোয়া গোষ্ঠীতে। এরই সঙ্গে তাল রেখে আন্দোলনের নতুন রাূপেরও বিবর্তন ঘটে ঃ স্বদেশী, বয়কট, ও নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ, গান্ধীপদ্থী সত্যাগ্রহ ও গ্রামে গঠনমূলক SS আর সেই সঙ্গে ছিল সেইসব পদ্ধতি, নেতারা যেগুলোর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকাতেন কিন্তু কখনও কখনও সেগুলোরও গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট-_বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ, হরতাল, শহরের লোক, চাষী বা জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিস্ফোরণ। ১৯৩০-এর দশকে দেশের অনেক অংশেই কিসান সভা ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো দ্রুত এক যথার্থ শক্তি হয়ে উঠছিল। নানা দেশীয় রাজ্যেও দেখা দিছ্ছিল গণ-আন্দোলন। যাবতীয় পশ্চাদ্গতি, সীমাবদ্ধতা ও বিরোধ সত্বেও, সব মিলে ব্যাপারটা দীড়ায় ঃ এক অনাবর্তনীয় এঁতিহাসিক ঘটনা-_সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে জনগণের আবির্ভাব | পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও গণচাপ-_এই দু-এর ফলে ১৯৪৭-এ ব্রিটিশকে ভারত ছাড়তে হয়। এর মাত্র পাঁচ বছর আগেই জনৈক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সাম্রাজ্য গুটোনোর কাজ তত্ত্বাবধান করার জন্যে ডিনি তার উচ্চ পদে বসেন নি। স্বাধীনতার পরেই আসে দেশীয় রাজ্যের দ্রুত বিলোপ, জমিনদারি অবলোপ, আর উপ-মহাদেশের বৃহত্তর অংশে সার্বজনিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা। ভেতরে-ভেতরে সামাজিক পরিবর্তনও হয়েছিল যথেষ্ট। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বেশ কিছু সংখ্যক ধনী চাবী গোষ্ঠীর উদ্ভব ও বুর্জোয়া শ্রেণীর সুসংহতি। ধ্রুপদী পুঁজিবাদী বিকাশের মানদণ্ডে যদিও এই শ্রেণী ছিল দুর্বল ও দোলাচল্গ্রস্ত, তবু তৃতীয় বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের তুলনায় যথেষ্ট শক্তিশালী ও পরিণত। কিন্তু এই ছক স্পষ্টতই আপাতবিরোধে ভরা, যতটা পরম্পরা ততটাই পরিবর্তন! ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল কংগ্রেস, কিন্তু ক্রমেই সে নিজেও এক 'রাজ' হয়ে উঠছিল। অবশেষে কোনো বড়ো ধরনের পরিবর্তন ছাড়াই তারা সামগ্রিক আমলাতান্ত্রিক ও সামরিক কাঠামোটি-_'দৈবজাত' সিভিল সার্ভিস ও সবকিছুই-_অধিগ্রহণ করে। সাদার বদলে শুধু এল বাদামি চামড়া। স্বাধীনতার দিনটি ছিল বিরোধে ভরপুর। একদিকে গণ-উচ্ছবাসের অবিস্মরণীয় দৃশ্য, সামাজ্যের সব রঙবাহারের মধ্যে মাউন্টব্যাটেন-এর কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ৩০-এর দশকের এক বহিমান র্যাডিক্যাল-_-আর অন্যদিকে 'জাতির জনক” বললেন তার বাণী ফুরিয়ে গেছে; জীবনের শেষ ক'টি মাস তাকে কাটাতে হলো সাম্প্রদায়িক হাণাহানির বিরুদ্ধে একক ও আশাহীন সংগ্রামে | দাঙ্গা ও দেশভাগ ছিল ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে সুস্পষ্ট ব্যর্থতা। সম্ভবত আরও বেশি মৌলিক ব্যর্থতা হলো ভারতীয় জাতীয় সংগ্রাম চলাকালীন যেসব আশা-উদ্দীপনা জেগেছিল তার অনেকগুলিই থেকে গেল অপূর্ণ। আপনা গ্েকেই চাবী রামরাজ্যে আসছে- এই গান্ধীবাদী স্বপ্নও ফলল না, বামপন্থী আদর্শের সামাজিক vine হলো না। এমনকি এক সম্পূর্ণ বুর্জোয়া রাপাস্তর ও সফল পুঁজিবাদী বিকাশের সমস্যাও ১৯৪৭-এর ক্ষমতা হস্তান্তর দিয়ে পুরোপুরি সমাধান হয় নি। স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের (ও বাংলাদেশের) ইতিহাসে তা বারবার দেখা গেছে।



Leave a Comment