দশটি উপন্যাস | Dashti Upanyas

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
চারু-_তা হলে নিয়ে চলো মেয়েটাকে । ...গরম জল দিয়ে চান করিয়ে একটা গরম জামা কাপড় পরিয়ে দাও এখনই | চৌকিদার ও কুলিরা খুশি হয়ে US প্রণত হয়ে সেলাম জানায়-_সেলাম সাব, সেলাম মেমসাব | Creat আর চারু, দুজনেই যদি নিজের নিজের মনটাকে চিনতে পারত, তবে বোধ হয় দুজনে আজই সাবধান হয়ে যেত, এবং অরণ্য শ্বাপদের শাবকের মত অতি ছোট জাতের একটা মেয়েকে এই বাংলোবাড়ির এক নিভৃতে প্রাণবাঁচানো একটা আশ্রয় দিত না । উপেন জানে, চারুও বিশ্বাস করে, এই ঝঞ্কাট মাত্র কয়েকটা দিনের জন্য | তারপর, নিকটে বা দূরের গাঁয়ের ওই জাতের কোনও লোক খুঁজে বের করে মেয়েটাকে তার হাতে গছিয়ে দিতে হবে | তার জন্য হয়ত কিছু টাকা চাইবে লোকটা | নিক না, একশো বা দুশো টাকা নিয়ে কোনও জাতের লোক যদি মেয়েটাকে পুষতে নিয়ে যায়, তবে ভালই তো ৷ চৌকিদার বলে গিয়েছে, জাতের লোক খুঁজে আনবে! উপেন বলে দিয়েছে_ যত শিগগির পারো নিয়ে এসো | এই বাংলোবাড়ির সীমার মধ্যে একটা মানুষের মেয়ের আবিভবিকেও অতি সাধারণ একটা ঘটনা হিসেবেই গ্রহণ করেছে চারু আর উপেন | এই বাড়ির দেওয়ালের খোপের মধ্যে যেমন কদিনের জন্য নতুন শালিক এসে VS নেয়, আবার কদিন পরেই উধাও হয়ে যায়, তেমনি একটা ঘটনা মাত্র | মেয়েটা আছে, কদিন পরে কেউ এসে নিয়ে যাবে, বাস, এর চেয়ে বেশি কিছু Hat করার ব্যাপার এর মধ্যে নেই। ক্লাবের ঘড়িতে যখন রাত নটার ইঙ্গিত ঢং করে বেজে ওঠে, তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিলিয়ার্ড খেলার লাঠি থামায় উপেন, আর ঘরে ফিরে যাবার কথা মনে পড়ে | বাংলোবাড়ির দুই কক্ষে তখন দুটি শিশু-জীবনের ঘুমস্ত রূপ নিঃশব্দে ফুটে রয়েছে। একটি ঘরে চারুর বুকের কাছে ঘুমস্ত রমা, পীয্যভারে কোমল একটি উত্তাপের নীড়ের মধ্যে সুখসুপ্ত হয়ে রয়েছে একটি শিশু মেয়ে । আর, অন্য একটি ঘরে আর একটি শিশু মেয়ে, নতুন বিছানায় একা একা ঘুমোয়, তার তৃষ্ণার্ত অধরের কাছে দুধের বোতল শিথিলভাবে পড়ে রয়েছে। একটি শিশু হল এই বাড়ির এক দম্পতির শোণিতস্েহের সৃষ্টি । আর একটি শিশু-_দেখে মনে হয়, এই পৃথিবীতে যেন একা একা হঠাৎ চলে চলে এসেছে, এখনও মানুষের কোল পায়নি | বাংলোবাড়ির দেয়ালঘড়িতে একতারার সুরের টোকার মত রিম-রিম করে সময়ের সঙ্কেত বাজে | চমকে ওঠে চারু, তন্দ্রা ভেঙ্গে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে qo করে, আর আপন মনেই আক্ষেপ করে-_ইস, ভদ্রলোকের সক্কাগুজ্ঞান আর কোনও দিন হবে না | ন'টা বাজল, এখনও ঘরে ফেরার নাম নেই | কি যেন মনে পড়ে যায় চারুর । ধীরে ধীরে ওঠে । পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় । এই বারান্দা আর ও বারান্দা পার হয়ে ছোট একটি ঘরের কাছে এসে দাঁড়ায় । দরজায় ঠেলা দেয় । দেখতে পায়, মেঝের উপর পড়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে আয়া । তার পরেই ঘরের আর এক প্রান্তে দৃষ্টি ছুটে যায় | দ্রেষতে পায়, সদ্য ফোটা ফুলের কুঁড়ির মত একটা YTS মেয়ের মুখ, তার ঠোঁটের কাছ থেকে সরে গিয়েছে দুধের বোতল ৷ একটা স্নেহশীল শীতল ও কঠিন জড় পদার্থ ওই বোতলটা | যেন মনের ভুলেই হঠাৎ দুধের বোতলটাকে মেয়েটার মুখের কাছে এগিয়ে দেবার জন্য হাত তুলে এগিয়ে যায় চারু | কিন্তু ভুল বুঝতে পেরে থমকে দাঁড়ায় । থাক, এতটা বাড়াবাড়ির দরকার নেই | তা ছাড়া একটা ছোট জাতের বাচ্চাকে ছোঁয়াুঁয়ি করারও দরকার মনে পড়ে A আয়াকেই ডাক দেয় চারু | ঘুম থেকে উঠে আয়াই নিজের হাতে দুধের বোতলটাকে মেয়েটার মুখে ষুঁইয়ে দেয় | পায়ের শব্দ বাজে বাইরের বারান্দায় । ফিরে এসেছে উপেন | সোফায় বসে জুতোর ফিতে খুলতে খুলতে হাঁক দেয় উপেন-_সবাই ঘুমিয়ে পড়লে নাকি এরই মধ্যে | চারু এসে বলে--কী বললে ? উপেন--মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝি ? চারু রমাও ইঞ্জিনিয়ারিং করে নাকি, যে রাত না পর্যন্ত জেগে থাকবে ? ১৬



Leave a Comment