নিরবিন্দু ১ | Neerbindu 1

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৫ যে কলেরায় উজাড় হয়ে যাবে, তাতে আর বিচিত্র কী। কথা হচ্ছে, নাবাল অঞ্চলে Karat না হয় না-ই খোঁড়া যাক, টিউবওয়েলটা তো অস্তত বসানো যেত। সেটাই বা কেন বসানো হত না? এর একটাই উত্তর। টাকার অতাব। আমাদের গ্রামের কথাই বলি। চান্দ্রা মোটামুটি সচ্ছল গ্রাম। কিন্তু কেমন ধরনের সচ্ছল? না জমিতে যে ফসল হয়, তাতে না-খেয়ে কাউকে মরত হয় না। জমিতে কিছু পাও হয় অবশ্য। সেই ক্যাশ-ক্রপের কিছুটা যেমন ঘরের কাজে লাগে, কিছুটা তেমন বিক্রিও হয় বই কী। কিন্তু বিক্রি বাবদে যে টাকাটা মেলে, পরনের কাপড় আর টুকিটাকি অন্য কয়েকটা জিনিস কিনতেই তা খরচা হয়ে যায়, তারপরে আর এমন টাকা কারও হাতে থাকে না যে, তাই দিয়ে একটা টিউবওয়েল বসাবে। TUBA ভদ্দরলোকেরা তা হলে করবেটা কী? কী আর করবে, Berane যখন খোঁড়া যাচ্ছে না, আর টিউবওয়েল বসাবার পয়সাও যখন নেই, তখন তশুকিয়ে-যাওয়া ওই পুকুরের কাদাজলই তারা খাবে। কিন্তু না, তারা তো আর গরিব-গুর্বো ভাগচাষি নয়, স্বাস্থ্যরক্ষার-প্রাথমিক নিয়মকানুনগুলোও তারা ভালই জানে, তাই সরাসরি ওই কাদাজল তারা খাবে না, পুকুর থেকে তুলবার পরে ওটাকে তারা একফালি ন্যাকড়া দিয়ে ছেঁকে নেবে, চাই কী ফুটিয়েও নিতে পারে। আমার ঠাকুমা ছিলেন সেকালের “নর্মাল” পরীক্ষায় পাশ করা মহিলা। তাই জলটাকে ফুটিয়েও তার শাস্তি হত না। তার উপরে আবার সেটকে তিনি ফিল্টারও করে নিতেন। হরেক কোম্পানি আজকাল জল-শোধনের যে-সব বাঁ-চকচকে যন্ত্র ছেড়েছে, মানে ওই যার মধ্যে অজন্র-ফুটোওয়ালা সব পোর্সিলেনের ক্যান্ডল বসানো থাকে, আর হপ্তাখানেক ব্যবহার করতে-না-করতেই ময়লা পড়ে যার ক্যান্ডলগুলোর ফুটো একদম বন্ধ হয়ে যায়, ফলে যা দিয়ে আর জল গলতে. চায় না, আমার ঠাকুমার কিল্টার মোটেই সেই রকমের ব্যাপার নয়। এ একেবারে ষোলো আনা ইন্ডিজেনাস মানে খাঁটি স্বদেশি ফিল্টার। কাঠের র্যাকে পরপর কয়েকটা মস্ত-মাপের মাটির BS বসানো। একেবারে তলারটা বাদে সবক'টারই তলায় ফুটো, আর সেই ফুটোর মধ্যে খড়ের গুঁজি। উপরকার BSS আধ-তর্তি। কোনওটা কয়লার গুঁড়ো দিয়ে, কোনওটা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে, কোনওটা-বা বালি দিয়ে । ব্যস, জল শোধনের পাকা ব্যবস্থা। উপরের হাঁড়িতে জল ঢেলে দিতেন তিনি। চুইয়ে-চুঁইয়ে সে জল কয়লার গুঁড়ো, কাঠের গুঁড়ো আর বালির গুঁড়োর ভিতর দিয়ে তলার হাঁড়িতে এসে জমত। বড়-কাকিমা মাঝে-মাঝেই তলার হাঁড়ির জলটা তুলে নিয়ে পাশেই একটা মস্ত জালার মধ্যে ঢেলে দিতেন। কিন্তু তাতেই কি ঠাকুমার শাস্তি আছে? তাতেও নেই। হাতখানেক লম্বা একটা বাঁশের খণ্ডের একদিকটা দা দিয়ে ফেঁড়ে ফেলে তিনি বেশ বড়-সাইজের একখানা ফটকিরি আটকে দিতেন সেই ফেঁড়ে-দেওয়া জায়গাটায়। তারপর শক্ত আর পরিষ্কার টোন-সুতোয় বেঁধে ফটকিরি-সুদ্ধ বাশের খণ্ডটিকে জালার মধ্যে ঝুলিয়ে দিতেন। একটু কযা স্বাদ হত ঠিকই, কিন্তু সে একৈবারে নির্মল জল। আমি আমার ছেলেমেয়েদের সব সময়েই বলি যে, IN, এইরকম একখানা ঠাকুমা পেয়েছিলুম বলেই আজও বেঁচে আছি, নয়তো সেই পানাপুকুরের জল খেয়ে কবেই বেধঘোরে মারা পড়তুম। বাবা কলকাতায় থাকতেন। দৈশের বাড়িতে আসতেন সাধারণত বছরে দু'বার | একবার পুজোর ছুটিতে, একেবার Tews ছুটিতে। কলেজে পড়াতেন। তাই দুটো ছুটিই ছিল মোটামুটি লম্বা মাপের । ঠাকুমাকে প্রায়ই বলতেন, “মা, এবারে বরং একটা টিউবওয়েল বসিয়ে দেবার ব্যবস্থা করি।” ঠাকুমা রাজি হতেন ati বলতেন, “কেন,.আমার Acer are ফিল্টার-করা এই জল খেতে তোদের ভয় করে?”



Leave a Comment