জীবনানন্দ রচনাবলী [খণ্ড-২] | Jibanananda Rachanabali [Vol. 2]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
কিন্তু পূর্ণিমা নিজের বিবাহিত জীবনের সঙ্গে গভীর সংলগ্ন একটা দুঃখকে চাপবার জন্যই বড়-বড় সাহসের কথাগুলো পেড়ে যাচ্ছে শুধু। HIS জীবন-_যা মেয়েমানুষকে, রূপকে, রসকে, TAZ আন্তরিকতা যত্ন প্রয়াসকে, কুটোর চেয়েও নগণ্য মনে করে সেই জীবনেরই একটি পরম কৃপার পাত্র হয়ে বেঁচে থেকেও পূর্ণিমা তাকেই চোখ রাঙিয়ে শাসন করতে যাচ্ছে। প্রবল, দুর্দান্ত জীবন তামাশা বোধ করে, গোপনে হেসে চলেছে যে, পূর্ণিমা যদি কোনোদিন তা দেখত! পূর্ণিমা একটু আখুবস্ত হয়ে বললে-'বাপ-মা নেই আমাদের-আমরা অকূলে ভাসছিলাম। ভেবেই পেতাম না দিদিব কী হবে, ওর যে এমন সুন্দর একটা ব্যবস্থা হযে গেল এতে আমাদের সকলেরই মঙ্গল হবে।' পূর্ণিমা তার নিজেব ভাগ্যকে দিদির ভাগ্যের সঙ্গে তুলনা করে এতক্ষণ ব্যথা পেষে এ জিনিশটার উপশমের দিকটা খুঁজে বের করে তৃপ্তি পাচ্ছে। জীবনের অন্ধকারের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকবার মত সহ্যশক্তি, সহিষ্ণুতা বা তামাশাবোধ নেই পূর্ণিমার। এ উজ্জ্বল পথের যাত্রী--ওর দিদির চেয়েও ঢের বেশি কবে। কিছু একটা তীক্ষু কর্কশ সমুদ্রের মত হতাশার অমাবস্যা যে ওর চারদিকে! ওর ভিতব থেকে ও কী দিযে যে কী করবে ভাবতে পাবছে না সস্তোষ। পূর্ণিমা বললে, 'জামাইবাবুর জন্য টুক্কুরও, দেখো, একটা ভাল বিয়ে হবে! কী বলো?' সন্তোষ কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না। পূর্ণিমা বললে, 'আমার রবিনেরও পড়াশুনোর সুবিধে হবে; টুইশনি পাচ্ছিল না-দিদিও চাকবি ছেড়ে দিযেছিল। টাকার জন্য ওর বি-এ পড়া হ্ত না বোধ হয় আর। কিন্তু এখন, ' পূর্ণিমা হঠাৎ উৎফুল্ল হযে উঠে বললে, 'এখন তো জামাইবাবুই ওকে পড়াতে পারবেন; অত বড় চাকরিওযালা, চাকরিও দিতে পারবেন-_ হয়তো বিলেত ঘুরিয়েই আনলে-_কী বলো? অসম্ভব কি কিছু?' সন্তোষ ঘাড় নেড়ে বললে, “ANI” --'এমন তো FS জায়গাযই হচ্ছে-হচ্ছে না?' সন্তোষ বললে- “হচ্ছে বই কি।' পূর্ণিমা অত্যন্ত LA হযে বললে-'সুখেব মুখ এইবার দেখলাম আমরা। এতদিন আমবা ভাইবোন মিলে কষ্টই পেয়ে আসছিলাম।' সন্তোষ পূর্ণিমাকে আশ্বাস দিযে বললে-_'তোর্মাবও সুখ। সুখ বই-কি; ওদেব সুখে তোমাবও সুখ 3 অনুভুতির এই RAF, এই ছাড়া ব্যক্তিগত কোনো সুখ-সম্পদ-আশ্রয তাব দিদিব এ বিবাহেব থেকে কি আব আহরণ করতে পাববে? আহরণের উচ্ছিষ্ট যদিও-বা কিছু থাকে টুল্কু-ববিনেব জন্য-_সম্তোষকে গ্রহণ কবে পূর্ণিমার সে সব সুযোগ চলে গিযেছে। 'কিন্তু পরেব সুখেও-_ তেমন ভাবে গ্রহণ করে নিলে- সুখী হতে পারা AA! আব এরা তো তোমার ভাইবোন, পূর্ণিমা।' পূর্ণিমা বললে--'আমারও এত দিন পর একটা নিস্তাব, মামাব জন্য আমাদের ভাবনা ছিল TVs | কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে পূর্ণিমা বললে, “কিন্তু এই সমস্ত যদি তোমাকে দিতে হত।' এক মিনিট চুপ। পূর্ণিমা ব্যথায় জড়িয়ে বললে-_ কিন্তু যা হবাব নয়-তা হযনা; নইলে এ দু-তিন বছরের ভেতর তুমি তেমন একটা চাকরি খুজে পেলে না? অনুপযুক্ত হলে আর-এক কথা ছিল কিছু তাও তো sa?’ পূর্ণিমা তেমনি কষ্টের সঙ্গে বললে-- কিন্তু দিনের পব যত দিন যায মনে হয তুমি কি উপযুক্ত!' সন্তোষ শুনছিল। পূর্ণিমা বললে- SSS জামাইবাবুর কাছে তুমি আর কে? অত বড় চাকবি! অমন সাহেবি! সে কী সমৃদ্ধি এশ্ব্ আমরা ভাবতেও পারি না। আধ মিনিট চুপ থেকে বললে, 'অত শত কিছু চাইও না। থাকলই-বা Bed টুক্কুর--আমাদের মাঝারি জীবন হলেই চলে যায়। নিতান্ত অতাবে পড়ে না মরলেই হল। আজকালকার স্বদেশীব দিনে তবে সাহেবিই বা কে bra? কিন্তু তাই বলে একটু সচ্ছলতাও কি থাকবার নয? কতদিন আর এমন ছ্যাচড়ামির ভেতর দিয়ে টিকে থাকতে পারা যায়? টাকাকড়ির গর্ব চাইনে-_ কিনতু মানুষের জীবনের জন্য যে- স্বাধীনতাটুকুর দরকার সেই হলেই হত। কিন্তু কিছুই তো হল না।' ১৬



Leave a Comment