আলোর উদ্দাম পথিক | An Anthology Of Essays On Kazi Nazrul Islam

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
২ আলোর উদ্দাম পথিক নরম আস এখন আমি কিঞ্চিৎ আগেকার ঘটনাসহ “ধূমকেতু'র জন্মকথা বলব। ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমাদের ৩/৪-সি তালতলা লেনের বাড়ী হতে নজরুল ইসলাম কুমিল্লা চলে যায়। তারপরে সে আর আমি একসঙ্গে আর কখনো থাকিনি। কুমিল্লায় সেইবারে সে একসঙ্গে তিন চার মাস ছিল। চার মাসের কিছু কমই হবে। এইবারে কুমিল্লাতে থাকার সময়েই সে তার বিখ্যাত “প্রলয়োল্লাস” কবিতা রচনা করেছিল। এই কবিতার কথা আমি পরে আলোচনা করব। কবিতাটি “প্রবাসী*'তে ছাপা হয়েছিল। “CRP A বিশেষ অনুরোধে নজরুল কুমিল্লা হতে কলকাতায় ফিরে এসেছিল। “সেবক” বাঙলা দৈনিক কাগজ ছিল। তার মালিক ও সম্পাদক ছিলেন মাওলানা মুহম্মদ আক্রম খান। রাজদ্রোহের (ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের ১২৪-এ ধারায়) অপরাধে তখন তিনি এক বছরের কয়েদ খাটছিলেন। শ্রীযুক্ত শ্যামসুন্দর চক্রবর্তীর ইংরেজী কাগজ “সার্ভেণ্ট* এর নামের সঙ্গে অর্থের মিল রেখে মাওলানা SEAT খান তার কাগজের নাম “সেবক” রেখে ছিলেন। মূলত বিরাট ব্যাপক অসহযোগ আন্দোলনের কাগজ ছিল “সেবক যদিও এই আন্দোলনের হাজার হাজার বন্দী তখনও জেলে ছিলেন তবুও ১৯২২ সালের মে জুন মাস পর্যন্ত আন্দোলন স্তিমিত হযে গিয়েছিল। “সেবক” আর তেমন বিক্রয় হচ্ছিল না। মুহম্মদ ওয়াজিদ আলী সাহেব তখন ছিলেন “সেবকের' প্রকৃত সম্পাদক। “TCA? প্রসঙ্গে তার কথা আমি বলেছি। কাগজের বিক্রয় পড়ে যাওয়ার কথা তিনি আনায় বললেন এবং আরও বললেন যে “নজরুল ইসলামকে মাসিক একশ” টাকা বেতন দেওয়ার কথা ব'লে কুমিল্লায তিনি পত্র লিখে দিচ্ছেন। তিনি এসে লেখা আরম্ভ করলে যদি কাগজের বিক্রয় বাড়ে,” এই কথাও বললেন ওয়াজিদ আলী সাহেব। পত্র পেয়েই নজরুল কুমিল্লা হতে চলে এলো। বলা বাহুল্য, কুমিল্লায় সে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাসাতেই ছিল। মে মাসের শেষ সপ্তাহে নজরুল যদি কলকাতায় ফিরে না এসেও থাকে তবে জুন মাসের শুরুতে ফিরে এসে সে নিশ্চয় “সেবকে! যোগ দিয়েছিল। ২৪শে জুন (১৯২২) তারিখে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মারা যান। এই মৃত্যু নজরুলকে খুবই বিচলিত করেছিল। পরের ভোরের ‘ORCS’ সে গভীর BTS ও ভাবপ্রবণতা মিশিয়ে একটি সম্পাদকীয় লিখেছিল। আমার যতটা মনে পড়ে এত অনুভূতি দিয়ে তন্য কোনো কাগজ কবি সত্যেন্দ্রনাথের সম্বন্ধে সম্পাদকীয় লেখেনি। নজরুল “সেবকে” কাজ করেই যাচ্ছিল। এর মধ্যে এক অদ্ভুত অপ্রত্যাশিত অবস্থায় একখানা সাপ্তাহিক কাগজ WA করার কথা একজন এসে তার নিকটে তুলল। হাফিস PS আহ্মদ নামক একজন লোকের সঙ্গে আমার সামান্য পরিচয় ছিল। তার বাড়ী ছিল চট্টগ্রাম জেলায়। যাদের পুরো কুর্আন মুখস্ত থাকে তাঁদের হাফিজ বলা হয়। মস্উদ আহ্মদেরও সম্ভবত কুরআন মুখস্থ ছিল। সে দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়েছিল বলে তাকে আমি খানিকটা শ্রদ্ধার চোখে দেখতাম। উত্তর প্রদেশের সাহারনপুর fear দেওবন্দ মাদ্রাসায় ধার্মিক ভিত্তিতে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো। তবে, সেখানকার প্রত্যেক YAS যে বিপ্লবী হতো এমন কোনো কথা নয়। TCT আহ্মদকে অন্য কারণে আমি পছন্দ করতাম না। বাঙালী হয়েও বাঙালী মুসলমানদের সঙ্গেও সে উর্দুতে কথা বলত। এটাই ছিল কারণ যার জন্যে তার সঙ্গে আমি কখনও ঘনিষ্ঠ হইনি। মনে আছে একদিন বিকাল বেলা আমি ধর্মতলা স্ট্রীটের ফুটপাথে দাঁড়িয়েছিলাম। কোথা থেকে মস্উদ আহ্মদ আমার পাশে এসে দাঁড়াল এবং কেমন আছি ইত্যাদি কথা আমায় জিজ্ঞাসা করল। শুনে আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম যে মস্উদ আহ্মদ বাঙলায় কথা বলছে, যদিও ভালো নাঙলা বলার চেষ্টা ক'রে সে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল। সে “সমস্যা"কে উচ্চারণ করছিল “সমিস্যা”। তখন বুঝেছিলাম যে শিশু বয়স হতেই মস্উদ আহ্মদ মাদ্রাসায় পড়েছে, বাঙলা লেখা পড়া কখনও করেনি। তার মাতৃভাষা ছিল চাটগীর বিশিষ্ট বাঙলা বুলি। সে বুলিতে সে বাইরের লোকের সঙ্গে কথা কখনও বলত না।



Leave a Comment