ভেদ-বিভেদ | Bhed-Bhibhed

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
২০ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতা বলিলেন, “সে-সমস্ত হাঙ্গামা কিছুই করিতে হইবে না, তোমাদের পক্ষে আমি faa’ কেশরলাল কহিলেন, “ধনকোষ হইতে কিছু অর্থ বাহির করিতে হইবে। পিতা বিশেষ-কিছু দিলেন না; কহিলেন, “যখন যেমন আবশ্যক হইবে আমি দিব আমার সীমন্ত হইতে পদাঙ্গুলি পর্যন্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের যতকিছু ভূষণ ছিল সমস্ত কাপড়ে বাঁধিয়া আমার হিন্দু দাসী দিয়া গোপনে কেশরলালের নিকট পাঠাইয়া দিলাম। তিনি গ্রহণ করিলেন। আনন্দে আমার ভূষণবিহীন প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পূলকে রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল। কেশরলাল মরিচাপড়া বন্দুকের চোঙ এবং পুরাতন তলোয়ারগুলি মাজিয়া-ঘষিয়া সাফ করিতে প্রস্তুত হইলেন, এমন সময় হঠাৎ একদিন অপরাহ্ণে জিলার কমিশনার সাহেব লালকুর্তি গোরা লইয়া আকাশে ধুলা উড়াইয়া আমাদের কেল্লার মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। আমার পিতা গোলামকাদের খাঁ গোপনে তাহাকে বিদ্রোহসংবাদ দিয়াছিলেন। বদ্রাওনের ফৌজের উপর কেশরলালের এমন-একটি অলৌকিক আধিপত্য ছিল যে, তাহার কথায় তাহারা ভাঙা বন্দুক ও তোতা তরবারি হস্তে লড়াই করিয়া] মরিতে প্রস্তুত হইল। বিশ্বাসঘাতক পিতাব গৃহ আমার নিকট নরকের মতো বোধ হইল। ক্ষোভে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় বুক ফাটিয়া যাইতে লাগিল, তবু চোখ দিয়া এক ফৌটা জল বাহির হইল না। আমার ভীরু ভ্রাতার পরিচ্ছদ পরিয়া ছদ্মবেশে অস্ত:পুর হইতে বাহির হইয়া গেলাম, কাহারো দেখিবার অবকাশ ছিল না। তখন ধুলা এবং বারুদের ধোয়া, সৈনিকের চিৎকার এবং বন্দুকের শব্দ থামিয়া গিয়া মৃত্যুর ভীষণ শাস্তি জলস্থল-আকাশ আচ্ছন্ন করিয়াছে। যমুনার জল রক্তরাগে রঞ্জিত করিয়া সূর্য অস্ত গিয়াছে, সন্ধ্যাকাশে শুক্লপক্ষের পরিপূর্ণপ্রায় চন্দ্রমা। রণক্ষেত্র মৃত্যুর বিকট দৃশ্যে আকীর্ণ। অন্য সময় হইলে করুণায় আমার TH ব্যথিত হইয়া উঠিত, কিন্তু সেদিন স্বপ্নাবিষ্টের মতো আমি দঘুরিয়া-ঘুরিয়া বেড়াইতেছিলাম, খুঁজিতেছিলাম কোথায় আছে কেশরলাল, সেই একমাত্র লক্ষ্য ছাড়া আর-সমস্ত আমার নিকট অলীক বোধ হইতেছিল। খুঁজিতে-খুঁজিতে রাত্রি দ্বিপ্রহরে উজ্জ্বল চন্দ্রালোকে দেখিতে পাইলাম, রণক্ষেত্রের অদূরে যমুনাতীরের আমহ্রকাননচ্ছায়ায় কেশরলাল এবং তাহার ভক্ততভৃত্য দেওকিনন্দনের মৃতদেহ পড়িয়া আছে। বুঝিতে পারিলাম, সাংঘাতিক আহত অবস্থায়, হয় প্রভু ভৃত্যকে অথবা ভৃত্য প্রভুকে রণক্ষেত্র হইতে এই নিরাপদ স্থানে বহন করিয়া আনিয়া শান্তিতে মৃত্যুহস্তে আত্মসমর্পণ করিয়াছে। প্রথমেই আমি আমার বছদিনের বুদ্ুক্ষিত ভক্তিবৃত্তির চরিতার্থতা সাধন করিলাম।



Leave a Comment