উপন্যাস সমগ্র ৩ [সংস্করণ-১] | Upanyas Samagra 3 [Ed. 1st]

আমার বেলাই বললে, হবে না। কেন, আমি কি ফালতু নাকি ? -_তোর বুদ্ধিসুদ্ধি হবে না। সে তো নিয়ম মেনে লোক নেবে | ঝগড়া করে লাভ কি হল, সেই মনিঅডরি করে পাঠাতে হবে, রসিদ কবে পাব তার ঠিক নেই | প্রকাশবাবু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন ৷ আর অরুণ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলেছিল, ওঃ ৷ নিয়ম মেনে লোক নেবে | কত নিয়ম মানছে সব জায়গায় ! এদের ধারণাটা কি, প্রকাশবাবু ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না । নিয়ম মানছে না কেউ, সেটাই আপত্তি ? না, নিয়ম জিনিসটাই খারাপ ? কিন্তু ছেলের ওপর অভিমান করেই বা লাভ কি । বেড়া দিলেই কি চারাগাছ বড় হয় ? সার! সংসারটাকে তো ইচ্ছার গণ্ডিতে Away মনের মত করে সাজাতে চেয়েছিলেন | কিন্তু পারলেন কি 1 তাঁর চোখের সামনেই তো সকলে নাগালের বাইরে চলে TCHR | চুলোয় যাক সব, তিনি নিজের কর্তব্যটুকু করে যাবেন | ওরা তো বুঝবে A | ছোট মেয়ে মিলু তবু কাছে আসে, হেসে কথা বলে; সেও একদিন বলেছিল, বুড়ো বয়সে সিচুয়েশন CHAS দেখছ, তোমার বাবা অদ্ভুত সব বাতিক | বাতিক ! তাই হবে হয়তো | এখন অবশ্য পরীক্ষা হয়ে গেছে, আর কিছুদিন পরেই তো ফল বের হবে | অরুণ পাশ করবে সে বিশ্বাসও আছে | ছেলে তো খারাপ নয়। একালের ছেলেমেয়েদের এই একটা দিক বুঝতে অসুবিধে হয় প্রকাশবাবুর | তখন ভাল ছেলেরা ভাল-ছেলে ছিল, খারাপ ছেলেরা খারাপ-ছেলে । আর এরা ভাল খারাপ সব যেন এক ছাঁচে ঢালা । সার্টিফিকেট না দেখলে চেনা যাবে না কে ভাল, কে খারাপ | অরুণের ছোটমাসী এসেছিল বেড়াতে । সে-কথা শুনে হেসে উঠেছিল সেদিন ।-_জামাইবাবু, আপনার বড্ড সেকেলে ধারণা কিন্তু । ভাল ছেলে হলেই থুতনিতে ছাগলদাড়ি থাকবে, দাড়ি কামাবে না, জামায় ইস্ত্রি থাকবে না, কথা বলতে গেলে তোতলামি করবে, আর শুধু বেশি বেশি নম্বর পাবে পরীক্ষায় _-এই তো আপনাদের ভাল ছেলে ! মাগো, আমার ভাবতেও বিশ্রী লাগে | শুনে হেসে উঠেছিলেন প্রকাশবাবু নিজেও | তবু মনের মধ্যে একটা গোপন ইচ্ছে বোধহয় ছিল অরুণকে ঠিক সেইভাবে মানুষ করে তোলার | এখন ভাবেন, ভাগ্যিস অরুণ সে-রকম হয়নি | তাহলে এই বাজারে একটা চাকরি জোটানো যে কি মুশকিল হত | অরুণের চাকরিটাই অবশ্য এখন একমাত্র YS | পড়া তো শেষ হয়ে গেল, এখন থেকেই চেষ্টা করতে দোষ কি | অরুণকেও বলেছেন সে-কথা | আর সেজন্যেই সকালের খবরের কাগজটা নিয়ে বসেছিলেন | প্রতিদিনই এ সময়টা বসে বসে চাকরির বিজ্ঞাপনগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন, কোন কোনটার চারপাশে কালির দাগ টেনে রাখেন | বিজ্ঞাপনগুলো দেখতে দেখতেই তাই ডাক দিলেন, অরুণ, অরুণ ! কনকলতা ভাঁড়ার থেকে একমুঠো তেজপাতা আর তেলের বাটিটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছিলেন, দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, কাকে ডাকছ ? সে-বাবু বাড়িতে 'আছেন নাকি, বাজার নামিয়ে দিয়েই আড্ডা দিতে চলে গেছে। বড় মেয়ে বুলু পাশের ঘরে ঝুল ঝাড়ছিল | লম্বা ঝুলঝাড়াটা নিয়ে এমনিতেই ব্যতিব্যস্ত, তার ওপর ঘাড়ে পিঠে ঘাম জ্যাবজ্যাব করছে | মা'র কথা শুনে নিজের মনে মনে বললে, আড্ডায় না কোথায়, সব জানো কিনা | স্ত্রী টি্ননী কেটেই রান্নাঘরের দিকে চলে গেছে দেখে বুলুকেই ডাকপেন এবার । ১৬