উপন্যাস সমগ্র-৫ [সংস্করণ-১] | Upanyas Samagra - 5 [Ed. 1st]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
রহিমগঞ্জের পীরের দরগায় মানত করতে এসেছিল লালীর মা, লালীকে সঙ্গে নিয়ে । দূর-দূর গ্রাম থেকে কত লোকই তো এসেছিল ৷ চলছিল গরুর গাড়ির সারি | কখন রাত নেমে এসেছে খেয়ালই হয়নি | গল্পগুজবে মেতে গিয়েছিল সবাই | হঠাৎ তারস্বরে চিৎকার করে চতুর্দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলল ঠগী লুটেরার দল | বাধা দিতে গিয়ে পুরুষগুলো লুটিয়ে পড়ল মাটিতে, লাঠির বাড়ি খেয়ে । সোনাদানা, মালপত্র যা-কিছু ছিল সব কেড়ে নিয়ে তাদের দলকে-দল চালান দিয়ে দিল বজরায় । শুধু ছাড়া পেল wed বুড়োবুড়িরা | রায়ের ঘাট থেকে চম্পারনের কুঠি, চম্পারন থেকে বিবিবাজার | খোজা সদরের হাত বদলে এই বিবিবাজারের মেলায় । হিন্দু কাফেরদের ওপর জিজিয়া বসানোর খবর শুনে খুশি হয়েছিল লালী, গ্রামের অন্য সব মুসলমানদের মতই | আওরঙ্গজেব বাদশাহ গাজী যেদিন ফরমান দিল : কোনও কাফের হাতিতে চড়তে পাবে না, পালকি ব্যবহার করতে পাবে না, দামি ঘোড়ায় চড়তে পাবে না--সেদিন অন্য সকলের মত লালীও খুশি হয়েছিল 1 কিন্তু বাঁদীবাজারে এসে সব ভুল ভেঙে গেল | হিন্দু আর মুসলমান নয়। শুধু দুটি ধর্ম, ধনী আর দরিদ্র । তা না হলে মুসলমান ঠগীর হাতে লুঠ হল কেন তাদের সর্ব্ব, মুসলমান নিলামদার কেন কিনে নিল তাদের, চম্পারনের কুঠি থেকে । আর এই হাবশি প্রহরী, সেও তো মুসলমান | Se কেন এমন অমানুষিক অত্যাচার করে সে বান্দা আর বাঁদীদের ওপর | বান্দাছাপের দিনটার কথা মনে পড়ল তার, জ্যোতিযাচার্যের চবুতরা থেকে ভীতত্রস্ত পায়ে বাঁদী-ছাউনির দিকে ফিরে আসতে আসতে | সারি সারি Sig আর হোগলার ছাউনি | হাজ্ঞার হাজার বান্দা আর বাঁদী । একদিকে হিন্দু, আরেকদিকে মুসলমান | কেউ এসেছে যুদ্ধবন্দী হয়ে, জয়ী যোদ্ধার লুটের মাল হিসাবে, কেউ বা চালান এসেছে ঠগীদের Saray ৷ সব এসে মিলেছে একই, নিলামদারের হাতে | সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সকলে, খরিদ্দার এসে নেড়েচেড়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে, দরদস্তর করে চলে যায় | দু-চারজন দু-চারজন করে চলে যায় নতুন মনিবের সঙ্গে | দুনিয়ায় এত রকম চেহারা আছে জানত না লালী | জানত না, পুরুষের চেয়ে খোজাদের দাম বেশি | জানত না, বাঁদীদের রূপ-যৌবনের চেয়ে কৌমার্যের দাম দ্বিগুণ | নিলামদারের খাস বান্দা খোজাগুলোর চোখ দেখলেও ভয় হয় লালীর | বান্দাছাপের দিনটা মনে পড়লে ভয়ে আঁতকে ওঠে ও । সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সকলে, আর সামনের একটা জ্বলস্ত চুল্লিতে একরাশ লোহার শিক গরম হয়ে উঠছিল | তারপর একে একে প্রত্যেকের পায়ে হাবশিটা বান্দাছাপ লাগিয়ে দিচ্ছিল | Bee লোহার শলাকা ছুঁইয়ে । যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠেছিল সকলে | অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল কয়েকজন | লালীও | জ্ঞান হয়ে দেখেছিল, শুধু পায়েই নয়, হাতের বাজুতেও Shes এঁকে দিয়েছে কে | বান্দাছাপ ! মণিবানু বলেছিল, এ ছাপ আর কোনওদিন মুছবে না লালী । পালিয়ে গেলেও বাদশার আইন ধরে নিয়ে এসে ফিরিয়ে দেবে মালিকের কাছে । আর নয়তো নিলামদারের চর ছুরি বসাবে বুকে | এই বীভৎস ভবিষ্যতে কোনও আশার আলো দেখতে পাবে ভেবেই ফকিরসাহেবের ১৬



Leave a Comment