অন্দরে অন্তরে উনিশ শতকে বাঙালি ভদ্রমহিলা | Andare Andare Unish Shatake Bangali Bhadramahila

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
২ অন্দরে অস্তরে প্রভাবের ছায়াপাতের আগে চিরাচরিত সামাজিক নিয়ম কানুনই সমাজে প্রচলিত fae | সেই হিসেবে এটা ধরে নেওয়া হয়ত খুব অসঙ্গত নয় যে উনবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে বাঙালি সমাজে নারীর স্থান অনেকাংশে মধ্যযুগীয় সমাজের মতই ছিল। ॥ এক ॥ প্রাচীন ভারতের শাস্তরগ্রন্থাদি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকেই দেখিয়েছেন বটে যে বেদ- উপনিষদের যুগে মহিলাদের কতটা শ্রদ্ধা করা হত,১ কিন্তু গত শতকের মেয়েদের বাস্তব অবস্থার যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে মনে হয় না যে প্রাচীন শাস্ত্রের নির্দেশের প্রতি সমাজ খুব শ্রদ্ধাশীল ছিল | আদর্শ গৃহজীবনের ব্যাখ্যায় মনুসংহিতায় এমন কথাও ব্যস্ত হয়েছিল যে, যে পরিবারে মহিলারা সম্মানিত হন, সেখানে দেবতা প্রসন্ন থাকেন, আর যেখানে মহিলাদের সম্মান নেই সেখানে যাগাদি ক্রিয়াকর্ম সমস্তই ব্যর্থ হয় ২ অথচ মনু নারীজাতির স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন না। মনুসংহিতার নবম অধ্যায়ে “বিবাহিতা নারীর নিত্যধর্ম বিষয়ে আলোচনার সময়ে মনু স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন যে মেয়েদের দিন-রাত্রির মধ্যে কখনই স্বাধীন থাকতে দেওয়া যায় না।* জীবনে পরমার্থ লাভের পথে যে দুটি প্রধান বিচ্যুতি হিসেবে গণ্য হত, তার একটি কাণ্টন (যা পার্থিব বস্তুর প্রতি আসস্তির প্রতীক) ও অপরটি হল কামিনী (ইন্দ্রিয়পরায়ণতার প্রতীক) | পুরুষের SY, আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জন ও IF লাভের পথে নারী-সংসর্গকে প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে গণ্য করা হত 18 এটা মূলতঃ ব্রশ্মচারী ও সন্ন্যাসীদের সম্বন্ধে প্রযোজ্য হলেও, সাধারণ মানুষের জীবনের লক্ষ্য হিসেবেও কাম ও কামনাশূন্যতার আদর্শের ওপর জোর দেওয়া হত। এমনকি, তত্ত্রেও (এটি হিন্দু ধর্মের একমাত্র শাখা যেখানে যোগ ও কামের মধ্যে AMAT দেখা যায়) নারীর প্রয়োজন কেবলমাত্র পুরুষের মুক্তির উপায়মাধ্যম হিসাবে ।৫ এবং, পুরুষরা যুগ যুগ ধরে মেয়েদের ওপর প্রাধান্য বিস্তারে জন্য এইসব ধর্মীয় ভাবাদর্শকেই ব্যবহার করে এসেছে ।*১ মধ্যযুগের সমাজে বাংলাদেশে স্থায়ী মুসলমান শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর হিন্দুরা মেয়েদের অস্তঃপুরের মধ্যে বন্দী করে রেখে তাদের শুচিতা রক্ষায় উদ্যোগী হয়েছিল | এছাড়া, বাল্যবিবাহ, সহমরণ, বহুবিবাহ প্রভৃতি সামাজিক নিয়ম-নীতির ফলে মেয়েদের সামাজিক অবস্থা খুব একটা ঈর্ষণীয় ছিল না। তার ওপর, মেয়েদের মধ্যে লেখাপড়ার চল ছিল একমাত্র বৈষ্টবীদের ভিতর 1৭ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক কেমন ছিল, তা বোঝা যায় ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যের পার্বতীর OS থেকে : নারীর পতির প্রতি বাসনা যেমন। পতির নারীর প্রতি মন কি তেমন ॥ পাইতে পতির অঙ্গ নারী সাধ করে। তার সাক্ষী মৃতপতি সঙ্গে পুড়ে মরে I পুরুষেরা দেখে যদি নারী মরি যায়। অন্য নারী ঘরে আনে নাহি স্মরে তায় ॥



Leave a Comment