বিমল মিত্র অমনিবাস | Bimal Mitra Omnibas

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
তা সেই ঝর্ণা দেবীর সম্বর্ধনা সভায় 'আল্তা-মাসি'কে সেই-ই প্রথম দেখলাম। বেশ লাল পাড় শাড়ি পরনে। ভেতরে সেমিজ। ঝর্ণা দেবী যখন ফুলের মালা পরে স্টেজের ওপর বসে আছেন, তখন আল্তা-মাসি তার হাতে একটা বেতের সাজি নিয়ে সামনে এসে বসলেন। তারপর সাজি থেকে একটা শিশি বার করলেন। শিশি থেকে একটা আললুমিনিয়ামের বাটিতে কিছুটা আল্তা ঢেলে নিয়ে ঝর্ণা দেবীর দু'পায়ের চারিদিকে লাগিয়ে পায়ের মাঝখানে একটা টিপ বসিয়ে দিলেন। তারপর মাথার সিঁথিতেও লম্বা করে সিঁদুর লাগিয়ে দিতেই ঝর্ণা দেবী তার হাতের ভ্যানিটি-ব্যাগ থেকে দশ টাকার একটি নোট নিয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন। সত্যিই সে এক অভিনব দৃশ্য! সবাই তাই দেখে হাততালি দিতে লাগলো। আর তারপর মঞ্চের ওপর পর্দা নেমে এল। এর পর ঝর্ণা দেবীর নৃত্য শুরু হবে। তারই জন্যে ভেতরে-ভেতারে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল। আর শুরু হলো ইণ্টারভ্যাল। আর সমস্ত হল্‌-ঘরের আলো আবার জ্বলে উঠলো। সুপ্রভাত পাশে এসে বসলো। জিজ্ঞেস করলে, কেমন দেখলে? বললাম, ভালোই তো দেখলাম। ঝর্ণা দেবীর বয়েস অনেক হয়ে গেছে, তবু শরীরে এখনও তো বয়েসের ছাপ পড়েনি-- সুপ্রভাত বললে, নাচও তো এক রকমের যোগ-ব্যায়াম। তাই বোধহয় যৌবন এখনও ধবে রাখতে পেরেছেন ঝর্ণা দেবী। জিজ্ঞেস করলাম, ঝর্ণা দেবীর সঙ্গে তোমার আলাপ হলো কী করে? আর আগে এত লোককেই তো MTA উপাধি দেওয়া হয়েছে, বেছে-বেছে ঝর্ণা দেবীকেই বা তোমরা সম্বর্ধনা দিতে গেলে কেন? সুপ্রভাত একটু হাসলো। যেন কীরকম রহস্যময় এক হাসি। সেই রকম হাসতে-হাসতেই বললে, এর একটা লম্বা ইতিহাস আছে ভাই । বললাম, এর আবার ইতিহাস কী থাকতে পারে? সুপ্রভাত বললে, সব জিনিসেরই যে একটা ইতিহাস থাকে, তা জানো না? আজকে যে ফুলটা ফুটলো, তার পেছনেও তো মাটি কোপানো সার দেওয়া, বীজ পৌঁতা আর জল দেওয়ার একটা ইতিহাস লুকিয়ে থাকে-_ বলে সুপ্রভাত সেই রকম রহস্যময় হাসি আবার হাসতে লাগলো। বললাম, এই ঝর্ণা দেবীর জীবনের পেছনেও কি তাহলে একটা ইতিহাস আছে? সুপ্রভাত বললে, বলছি তো আছে। -_-কিন্তু সে ইতিহাসটা কী? সুপ্রভাত বললে, সে সব পরে একদিন তোমাকে বলবো। -_আর ওই যা'কে 'আল্তা-মাসি' বলা হলো, ও-ই বা কে? সে ইতিহাসে GAB বা কীসের ভুমিকা? সুপ্রভাত বললে, ওই 'আল্তা-মাসি' হলো সেই ইতিহাসের 'বিবেক'। যাত্রাপালা-গানে দেখনি, মাঝে-মাঝে একজন লোক গেরুয়া-রঙের আল্খাল্লা আর গেরুয়া-রঙের পাগড়ি পরে গান গাইতে-গাইতে আসরে ঢোকে। সে গানের মধ্যে দিয়ে পালার চরিত্রদের ব্যাখ্যা করে, পালার চরিত্রদের সাবধান করে দেয়, কখনও বা ভবিষ্যদ্বাণী করে, আবার কখনও বা চরম SATA নাটককে চড়া-পর্দায় তুলে দিয়ে গিয়ে একসময়ে অসভ্র্ধান করে। আমি তবু বুঝতে পারলাম না তার কথাগুলো। যেমন রহসাময় লাগছিল তার হাসি, তেমনি রহস্যময় লাগছিল তার কথাগুলোও | বললাম, আমি তো তোমার কথাগুলো কিছু বুঝতে পারছি না-_ ৮



Leave a Comment