আশুতোষ মুখোপাধ্যায় রচনাবলী [খন্ড-১৪] | Ashutosh Mukhopadhyay Rachanavali [Vol. 14]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
[> ] শয্যাসঙ্গিনীও হতে হয়েছে তাকে। এর দুমাস পরেই শত্রুপক্ষের ড্রাগ রিঙের গুলিতে বাঝরা হয়ে গেছে রজার। তার সঞ্চিত অর্থের অল্প কিছু নিয়ে অবস্তী ফিরে এসেছে দিল্লীতে | দিল্লী থেকে কলকাতা যাওয়ার পথেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সে নেমে পড়েছে বাঈজীদের পীঠস্থান বেনারসে। সেখানে যোশী মহারাজের কাছে GAS ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক শিখতে শুরু করেছে। আর নামকরা বাঈজি উষাবাঈ-এর কাছে থেকে নাচগানের আসরে নেমে অর্থ উপার্জনও শুরু করেছে। এই ধরণের এক নাচগানের আসরেই তার সঙ্গে AAA বড় ব্যবসাদার সূর্য পাণ্ডের দেখা হয়েছে। সূর্য পাণ্ডে দেড় হাজার টাকা মাইনেয় তাকে নিজের সেক্রেটারী করে নিয়েছে। এরপর এই লোলুপ ব্যবসায়ী আরও বেশী টাকা দিয়ে নাচগানের আসর ছাড়িয়ে তাকে নিজের রক্ষিতা করে রেখেছে। গুরুদেব ব্রহ্মগুরুর নির্দেশে অবস্তীকে বিয়ে করার পরও চূড়াস্ততাবে অপমান করেছে, তার কর্মচারী বীরেন্দ্র সাহায্যে ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদনের নির্দেশ দিয়েছে, আপত্তি করলে চাবুকের ঘায়ে পিঠ ফালা ফালা করেছে। চূড়াস্ত কষ্টের মুহূর্তে অবস্তীর সেবা নেওয়ার সময়ও সূর্য পাণ্ডে শাসিয়েছে তাকে, BAY লোভী পুরুষের হাতে তুলে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। আর তখনই pors সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবস্তী, অক্সিজেনের নল মুখ থেকে সরিয়ে পাখা বন্ধ করে দিয়ে সে সূর্য পাণ্ডের মৃত্যুকে ত্বরাদ্বিত করেছে। শেষ পর্যন্ত একটি মেয়ে চূড়ান্ত মনোবলের পরিচয় দিয়ে অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। তার পরের জীবন সম্মানের--সম্রমের _মর্যাদার আর সাফল্যের ৷ সে সূর্য পাণ্ডের দুই পুত্র নকুল আর সহদেবের শ্রদ্ধা সম্মান পেয়েছে--অন্যদিকে সূর্য পাণ্ডের ব্যবসার মালিক হিসেবেও নিজের বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। জীবনের এই পর্বেই বেনারসের সাহিত্য সম্মেলনে তার সঙ্গে লেখকের পরিচয়। ' গওুপন্যাসিক হিসেবে জীবনসন্ধান তার কাজ--একথা সভার বক্তৃতায় বলেছেন লেখক। অবস্তীর মধ্যে সেই অপরাজেয় জীবনেরই সন্ধান পেয়েছেন তিনি৷ সতীত্ব, দৈহিক শুচিতা-সব কিছুর ওপরে রমণীর এই যুদ্ধ জয় তার নিছক “রমণী ত্ব' থেকেও নিষ্কমণের ইতিহাস। ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন মানুষ হচ্ছে-- “311 abstract or model of the world’, অবস্তীকে শুধু নারী নয়-_-সেই ‘abstract’ হিসেবেও আমাদের দেখতে ইচ্ছে করে। আশুতোষের অন্যান্য উপন্যাসগুলোর মতো এই চারটি উপন্যাসেও গল্পের নিপুণ কথক তিনি। তার উপন্যাসের গল্পরস সব শ্রেনীর পাঠককেই তৃপ্ত করে। আর সেই সঙ্গে তিনি বিচিত্র জটিল জীবনেরও রূপকার বটে। এই জীবন বড় বিশ্বাসঘাতক অথচ মোহময়, জটিল হয়েও রেখায়িত। ভঙ্গুর, সীমাবদ্ধ অথচ ers, পৃথিবীর সমস্ত “রণ রক্ত সফলতা'-র পরেও জীবনজাহুৃবী শ্মশানের কলে নিরবধি বহমান। চল্লিশের দশকে লেখক-জীবন শুরু-করা আশুতোষ দেশকালের বিচিত্র জটিল অভিঘাতে বিধ্বস্ত এই অবিনশ্বর জীবনকে দেখেছেন নানাভাবে। এই চল্লিশের দশকের গোড়াতেই চলে গেলেন রবীন্দ্রনাথ। সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগুন CHS আগুনের তাপে ঝল্সে গেল বাঙালীর নিশ্চিত জীবন--বিপর্যন্ত হল মধ্যবিত্তের মূল্যবোধ দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দাঙ্গা আর স্বাধীনতা--এইসব ঘটনার প্রভাব



Leave a Comment