দেবেশ দাশ রচনাবলী [খণ্ড-২] | Debesh Das Rachanabali [Vol. 2]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
দেবেশ দাশ রচনাবলী অবদান নিয়ে গিয়েছিলেন, বিনিময়ে নিজ উৎপত্তির উৎসকে কী উপহার দিয়েছিলেন” তাই তুলে ধরেছেন তিনি এই বইটিতে। আশা পোষণ করেছেন, “আজকের আত্মবিস্মৃত আত্মবিশ্বাসহীন বাঙালির was এই বীজমন্ত্র ('বৃহত্তর বঙ্গ নয়, বৃহত্তর বাঙালি”) চিরকাল ধ্বনিত হতে থাকুক ।” দেবেশ দাশের শেষ উপন্যাস “ভিনদেশী 4x” প্রকাশিত হল ১৯৯৬ সালে। এটি একটি ভিন্ন স্বাদের বই। উপন্যাসটি “আন্তর্জাতিক ডিপ্লোম্যাটিক পটভূমিকায় রচিত প্রথম মৌলিক কাহিনী | বিষয়বস্তুর অভিনবত্ব ছাড়াও এর মানবিক মূল্য অসীম | উৎসব-চঞ্চল ভিনদেশী অন্তরের লীলা, চারুশিল্পের সাবলীল কলা, হিস্পানী বেদেনীর ভবিষ্যৎ ও গণনা, এমনকি সাগর শ্নানের মধ্যে -লাবণ্যের বন্যায় আনন্দের স্পন্দনে রমণীয় সীমানায় এসেও AI সুন্দর পরিণতি অতুলনীয় ”” এই বইখানিই তার শেষ প্রকাশিত বই। আর একখানি উপন্যাস 'ভালোবাসার ধন' ছাপা হচ্ছিল, কিন্তু তা এর আগে প্রকাশিত হয়নি। দেবেশবাবুর গ্র্থ-পরিচিতি সম্পূর্ণ হবে না আর একখানি কিশোরদের জন্য লেখা বই-এর কথা না বললে। বইখানির নাম 'রাজার Para পক্ষীরাজে', ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন স্বয়ং দলাই লামা। বইখানি দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশের সুললিত জীবনী। বইখানি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৭ সালে। “রাজার কুমার" বৃহত্তর ঢাকার অস্তর্গত বিক্রমপুরের রাজবংশের পুত্র অতীশ দীপঙ্কর, যিনি লেখকের মতে প্রথম বাঙালি বিশ্বমানব ইউনিভার্সাল ম্যান)। রাজা রামমোহন রায়ের প্রায় হাজার বছর আগে তার জন্ম হয়। নিজের লেখা সাহিত্য সম্বন্ধে দেবেশবাবু অল্প কিছু লিখেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন, 'আমি ও আমার জীবনী ।' যতদূর জানা যায় লেখাটি কোথাও প্রকাশ হয়নি। ওঁর মেয়ে অনুরাধা কিছু কাগজ আমাকে দিয়ে গিয়েছিল, পাগুলিপিখানি তার মধ্যেই পেয়েছি। লেখাটি বেশ চিত্তাকর্ষক। আরম্ভ করেছেন, “আপন মনের মাধুরী মিশায়ে, তোমারে করেছি রচনা' দিয়ে। তারপর লিখছেন, “সেই সাহিত্য হচ্ছে তুমি, সাহিত্যিকের সৃষ্টি সাহিতিক্যের দৃষ্টি। কিন্তু সাহিত্যিকের নিজের ছায়া অনেকখানি হলেও, কায়া নয়। কারণ BN হচ্ছে ছায়ার চেয়ে অনেক বেশি ধরা ছৌয়ার জিনিস। মায়ার মত মিলিয়ে যাবার স্বাধীনতা তার নেই। আত্মজীবনী হচ্ছে কায়া, বাস্তব, সত্যাশ্রয়ী। উপন্যাস হচ্ছে কথা, কল্পনায় রাঙানো, স্বপ্নে জড়ানো। দুটোর মধ্যে তফাৎ থাকা স্বাভাবিক | এবং সম্ভবতঃ না থাকলে চলবেও না। এই ধরুন, আমাদের বাঙালি জগতে সাহিত্যিকের সাধারণ জীবন। কোথায় এবং কতটুকু তার বৈচিত্র্য, তার বিস্ময়, তার আকাশ-ছৌয়া আকৃতি, পাতালমুখী অধোগতি! দূর বিদেশে আকৈশোর কাটিয়েছি বাঙালি জীবনের গতানুগতিকতার বাইরে, আটপৌরে পরিধির ওপারে। তবুও যতখানি যতটুকু সুযোগ পেয়েছি বাঙালি সাহিত্যিকদের সঙ্গে ব্যাকুলভাবে মিশেছি, আস্তরিক হয়ে কাছে এগিয়ে এসেছি। এমনকি FATS, অনাহ্‌ত হয়েও। যে জীবনের ছবি দেখেছি, ধ্বনি শুনেছি তার মণপ্যে উপন্যাসের মালমশলা কতটুকু হতে পারে? কিন্তু মানুষের মন জীবনকে ছাড়িয়ে যায়, ছড়িয়ে পড়ে জীবনাতীত BA | সেখানেই সাহিত্যিকদের জয়, সাহিত্যিকের পরমায়ু। তাই বাঙালি জীবনের সীমা ও ATK সত্তেও বাঙালি সাহিত্যিকের উপন্যাসে তার আত্মজীবনী না হোক, আত্মজীবনীর অভিজ্ঞতা অনেকখানি খুঁজে পাওয়া যাবে। সম্ভবতঃ সেই সীমা তার সেই সঙ্কোচের জন্যই নিজের জীবনের আলো আর ধোঁয়া তার লেখনীকে MS অথবা লিপ্ত করে তুলতে বাধ্য। আমি যদি কুমার্টুলির বাসিন্দা শিল্পী হই, মূর্তি গড়ব কাদামাটি দিয়ে। জয়পুরী মর্মর বা বোলপুরী রক্তপ্রস্তর দিয়ে নয়। তবে একটা উপন্যাসে একটি আত্মজীবনীর সমস্ত অথবা একটা জীবনের সমস্ত কথা উপন্যাসে রূপ পায় কি না তা প্রত্যেক সাহিত্যিক নিজের জবানীতে বলতে পারবেন। আমেরিকার কবিশ্েষ্ঠ হছইটম্যানের লিভস অব গ্রাস, পর্ণপত্র, কাব্যের মধ্যে কবির একটি জবানী আছে যে এই বইটি ছুঁবে সে একটি মানুষকে ছুঁবে। আত্মজীবনী প্রসঙ্গে এই কথাটি হঠাৎ মনে পড়ল। সত্যই ত। সত্যকার রচনার মধ্যে ABA তপ্ত রক্ত মেশানো রয়েছে। তার উষ্ণ নিঃশ্বাস, আত্মার আকুলি ব্যাকুলি। কাজেই সত্যকারের উপন্যাস লেখকের আত্ম-আরোপ বা আত্ম-বিন্যাস কিছুটা আশা করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিবয় যে আমাদের আটপৌরে জীবনে এত কিছু ঘটেনা যা অবলম্বন করে বারবার সাহিত্য রচনা সম্ভব। কিন্তু সে জীবনে বিশেষ যা কিছু ঘটেছে এবং মনে যা কিছু ভাবের উদয় হয়েছে তা কোনও না কোনও রচনাতে প্রতিফলিত হওয়া স্বাভাবিক | তবে এই সমন্ধান বেশিদূর চালালে একটা অস্বাত্তাবিক অবস্থার উদয় হতে পারে। ধরুন, কোনও সাহিত্যিক শুধু দেহের পিপাসা নয়, দেহের অনুশীলনের তীব্র ও বিস্তৃত চিত্র তার উপন্যাসে প্রকাশ করলেন। অথচ তাঁর নিজের জীবনে হয়তো সেই অভিজ্ঞতা বা ক্ষমতার পূর্ণ বিকাশ হয়নি। তা বলে কি তিনি রচনাকালে তার লেখনীকে তার জীবনের মধ্যে সীমিত রাখবেন? অন্য পক্ষে, [ ১৪]



Leave a Comment