মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র [খণ্ড-২] | Manik Bandyopadhyay Rachanasamagra [Vol. 2]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
পদ্মানদীর মাঝি ১৫ এদের মধ্যে গণেশ একটু বোকা। মনের ক্রিয়াগুলি তার Gey we গতিতে সম্পন্ন হয়। সে কোনো কথা বলিলে লোকে যে তাহাকে অবহেলা করিয়াই কথাটা কানে তোলে না এটুকুও সে বুঝিতে পারে না। একটা কিছু জবাব না পাওয়া পর্যন্ত বারবার নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করে। ধমকের মতো করিয়া যদি কেউ তার কথার জবাব দেয় তাতেও সে রাগ করে না। দুঃখও তাহার হয় কিনা সন্দেহ। কুবেরের সে অত্যস্ত অনুগত। জীবনের ছোটোবড়ো সকল ব্যাপারে সে কৃবেরের পরামর্শ লইয়া চলে। বিপদে আপদে ছুটিয়া আসে তাহারই কাছে। এক পক্ষের এই আনুগত্যের জন্য তাহাদের মধ্যে যে বস্ধুত্বটি স্থাপিত হইযাছে তাহাকে ঘনিষ্ঠই বলিতে হয়। দাবি আছে, প্রত্যাশা আছে, সুখদুঃখের ভাগাভাগি আছে, কলহ এবং পুনর্মিলনও আছে। কিন্তু গণেশ অত্যস্ত নিরীহ প্রকৃতির বলিযা ঝগড়া তাহাদের হয় খুব কম। পুড়িয়া শেষ হওয়া অবধি তাহারা পালা করিয়া তামাক টানিল। নৌকা এখন অনেক দূর আগাইয়া আসিয়াছে। কলিকার ছাই জলে ঝাড়িয়া ফেলিয়া হুঁকাটি ছইযে টাঙাইয়া fren জাল নামাইয়া কুবের ও গণেশ বইঠা ধরিল। গণেশ হঠাৎ মিনতি করিয়া বলিল, একখান গীত ক দেখি কুবির ? হ, গীত না তর মাথা। কুবেরের ধমক খাইযা গণেশ খানিকক্ষণ চুপ করিযা বহিল। তারপর নিজেই ধরিয়া দিল গান। সে গাহিতে পারে ati কিন্তু তাহাতে কিছু আসিয়া যায় না। ধনঞ্জয় ও কুবের মন দিযা গানেব কথাগুলি ACA (যে যাহারে ভালোবাসে সে তাহারে পায় না কেন, গানে এই গভীর সমস্যার কথা আছে। বড়ো সহজ গান নয়।) পুবদিক লাল হইয়া ওঠা পর্যন্ত তাহারা জাল ফেলিয়া বেড়াইল তারপর রওনা হইল জাহাজ ঘাটেব দিকে। সেখানে পৌছিতে পৌছিতে চারিদিক আলো হইয়া উঠিল। নদীর তীরে, নদীর জলে এখন জীবনের সাড়া পড়িয়া গিয়াছে। থাকিয়া থাকিযা স্টিমারের বাঁশি বাজিয়া উঠে। সশব্দে নোঙর তুলিয়া কোনো স্টিমার ছাড়িয়া যায়, কোনো স্টিমার ভিড়ে গিয়া জেটিতে। কলিকাতা হইতে মেল ট্রেনটি আসিয়া eae. ঘাটের ও স্টেশনেব দোকানপাট সমস্ত খোলা হইয়াছে। অনেকে নদীর জলে স্নান করিতে নামিয়াছে.।। মোটবাহী ও যাত্রীবাহী অসংখ্য ছোটোবড়ো নৌকা ঘাটে ভিড় করিয়া আসিয়াছে। ঘাটের দুর্দিকে বহুদূর অবধি তীর ঘেঁষিয়া কাদায় পৌঁতা লগির সঙ্গে বীধা আরও যে কত নৌকা তার সংখ্যা নাই। নদীতে শুধু জলের CANS | STR মানুষের অবিরাম জীবনপ্রবাহ। মেছো নৌকার ঘাটটি একপাশে । ইতিমধ্যে অনেকগুলি নৌকা মাছ লইয়া হাজির হইয়াছে। Basis ডাকাডাকিতে স্থানটি হইয়া উঠিয়াছে সরগরম। অত্যস্ত Pood সঙ্গে দরাদরি সম্পন্ন হইয়া হরদম মাছ কেনাবেচা চলিতেছে। চালানের ব্যবস্থাও হইতেছে সঙ্গে সঙ্গেই এই ব্যস্ততা ও কোলাহলের মধ্যে আসিয়া পড়িয়া সমস্ত রাত্রিবাপী পরিশ্রমের se ভুলিয়া কুবের প্রতিদিন খুশি হইয়া উঠে। আজ সে এক্রেবারে ঝিমাইয়া পড়িয়াছল। শেষরাত্রির দিকে শীত করিয়া বোধ হয় তাহার GAS আসিয়াছে। চোখ দুটো যে তাহার- ভয়ানক লাল হইয়া উঠিয়াছে গণেশ তাহা দেখিতে পাইয়া বলিয়াছে চার-পাঁচবারের বেশি। নেংটি ছাড়িয়া তিনহাতি ছোটো ময়লা কাপড়খানি পরিয়া কুবের তীরে উঠিল। কাদার মধ্যেই একটা. লোহার চেয়ার ও কাঠের টেবিল পাতিয়া চালানবাবু কেদারনাথ মাছ গোনা দেখিয়া! খাতায় লিখিয়া যাইতেছে। একশো মাছ গোনা হইবা মাত্র তার চাকরটা cal মারিয়া চালানবাবুর টাদা পাঁচটি



Leave a Comment