শামসুর রাহমান গদ্য সংগ্রহ | Shamsur Rahaman Gadya Sangraha

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
৮ এক tl প্রথম মহাযুদ্ধের বারুদের গন্ধ হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার এগারো বছর পর ১৯২৯ সালে আমি সর্বপ্রথম পৃথিবীর আলো দেখেছিলাম পুরনো ঢাকার মাহুৎটুলির এক সরু গলির ভিতর, আমার নানার কোগাবাড়িতে | কোঠাবাড়ি বলে দিচ্ছে, রূপোর চামচ মুখে নিয়ে আমি জন্মগ্রহণ করিনি। তা না হলেও জন্মের অব্যবহিত পরে মুখে কয়েক ফৌটা মধু অবশ্যই দিতে পেরেছিলেন আমার নানি। আম্মার মুখে শুনেছি, জন্মলণ্নে আমি আর দশটি শিশুর মতো কান্না জুড়ে দিই নি। আমাকে কীদানোর জন্য ধাত্রী এবং নানিকে বেশ কোশিশ করতে হয়েছিল। জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে অনেক কাদতে হবে বলেই হয়তো সেদিন Sis | তবে আমি কোনওকালেই ছিটকীদুনে নই। আমার নানা এন্ট্রান্স পাস করেছিলেন। সেই সুবাদে পেয়েছিলেন দারোগার চাকরি | আমার নানা মুন্সী আফতাব উদ্দিন আহমদ ছিলেন পরহেজগার মানুষ। পাঁচ ওয়াস্ত নামাজ পড়তেন, ফজরে উঠে আজান দিতেন এবং তেলাওয়াত করতেন কোরআন শরীফ। রোজা বাদ দেননি কখনও | দাবোগার চাকরিতে ঘুষ খাওয়ার সুযোগ আছে জেনে সেই আমলে অমন লোভনীয় চাকরি নেননি। তার বদলে কাছারিতে সামান্য কাজ শুরু করেন। বেশি বেতন পেতেন না। যা পেতেন তা দিয়ে মোটামুটি তার সংসার চলে যেত। জীবনে কখনও ধার-কর্ভ করেছেন বলে শুনিনি। মাইনে পেয়ে বাড়িতে ঢোকার আগে মহল্লার বিধবাদের প্রত্যেককে কিছু পয়সা দিয়ে আসতেন। বিধবার সংখ্যা নিশ্চয় খুব বেশি ছিল না। আমার নানা ঢাকায় বাড়ি করলেও তাঁকে ঠিক এই শহরের বাসিন্দা বলা যাবে না। কারণ, তিনি জন্মেছিলেন সেকা'লর ঢাকা জেলার পাড়াতলী গ্রামে (বর্তমান নরসিংদীর রায়পুর থানার একটি গ্রাম)। তার শৈশব এবং কৈশোর সেখানেই কেটেছিল। আমার দাদা ও নানা সহোদর দুই SIS | দাদা বড়ো, নানা ছোটো। আমার আব্বা মোখলেসুর রহমান চৌধুরী মুন্সী কলিমউদ্দিন আহমদের চতুর্থ পুত্র। দাদাকে আমি দেখি নি। তার মৃত্যুর অনেক পরে আমি ভূমিষ্ঠ হই। দাদা, আব্বার মুখে শুনেছি, স্বাস্থ্যবান, সুপুরুষ ছিলেন। যদিও তিনি ইংরেজি জানতেন না, বাংলা, আরবি এবং ফারসি ভাষায় তীর দক্ষতা! ছিল। জমিদারের নায়েব ছিলেন। দাদার প্রতি আব্বার ভস্তি ছিল প্রগাঢ় এবং অবিচল। আব্বা তার পিতাকে একজন ওয়ালীউল্লাহ্‌ মনে করতেন। দাদা পাড়াতলী গ্রামে শুধু মসজিদ তৈরি করে ক্ষান্ত হননি, তিনি একটি প্রাইমারি ইশ্কুলও স্থাপন করেন | আব্বার উদ্যোগে সেটি এখন একটি উচ্চ বিদ্যালয় । এলাকাবাসীর কাছে মুন্সি কলিমউদ্দিন আহমদ অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। আমার নানা ইংরেজি শিখেছিলেন। তার একটি টাইপরাইটার ছিল। কতদিনতার টাইপরাইটারের আওয়াজ শুনেছি, সেই শব্দ আজও কানে বাজে | কোনওদিন সেই যন্ত্রটি ছুঁতে সাহস হয়নি, পাছে নানা রেগে যান। নানার আদর খেতেই অভ্যস্ত ছিলাম, তার অগ্নিশর্মা মূর্তি দেখার খায়েশ ছিল না। ছোটোখাটো মানুষ ছিলেন, কিন্তু শা. THA’ — ২ ১৭



Leave a Comment