নারায়ণ পত্রিকার গল্প-সংকলন | Narayan Patrikar Galpa-sankalan

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
[৫] মাঘের শেষে বেড়বাড়ীর ঘোষেদের বাড়ীতে বিবাহ। সেটা অর্জুনের লায়েক বাড়ী হইলেও, বাবুরা রসিকের সানাইয়ের সুখ্যাতি শুনিয়া তাহাকেও বায়না করিলেন। রসিক আপনার সানাইটা লইয়া যথাসময়ে ঘোষেদের বাড়ী উপস্থিত হইল। কিন্তু একটা বড় গোল der | কোন ঢুলীই রসিকের সঙ্গে সঙ্গত করিতে রাজী হইল না, চারি আনা রোজের কোন সানাইদারও তাহার cot ধরিল না। বাবুরা হুকুম দিলেন, ধমকাইলেন; বাদকেরা হাতযোড় করিয়া বলিল, “আমরা ছজুরের চাকর, কিন্তু একঘরের সঙ্গে বাজিয়ে AANA কাছে দায়ী হ'তে পারব না।” কর্তা ছকুম দিলেন, “রসিক, ভাই আজ খাওয়া-দাওয়া কর, আজ বিয়েটা চুকে AF, কাল সকালে তোর সানাই শুনব। যদি তোর বাজনা ভাল হয়, তবে তোকেই বাহাল করব।” রসিক দুই হাত কপালে ছোৌঁয়াইয়া BAITS অভিবাদন করিল, অর্জুনের মুখ শুকাইয়া গেল। বিবাহের পরদিন প্রভাতে বরযাত্র ও কন্যাযাত্রদিগের সম্মুখে রসিক ও অর্জুনের পরীক্ষা আরম্ভ হইল। সানাই শুনিবার জন্য গ্রামের ছেলে বুড়া সকলে ছুটিয়া আসিল। দান লইবার নিমিত্ত ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম হইতে হাড়ী বাগ্‌দীর মেয়েরা আসিয়াছিল; তাহারাও এক পাশে চাপিয়া বসিল। তাহাদের ভিতর বসীও ছিল; সে একটু আগাইয়া বসিল। প্রথমে অর্জুন বাজাইল | একজন প্রসিদ্ধ Hell তাহার সহিত সঙ্গত করিল। প্রায় এক ঘণ্টা গান চলিল। সকলেই তাহাকে বাহবা দিতে লাগিল। তার পর রসিক উঠিল। সে দুইহাত জুড়িয়া বাবুদের অভিবাদন করিয়া করুণনেত্রে ঢলীদের দিকে চাহিল। ঢুলীরা মুখ ফিরাইয়া লইল। তখন কর্তা হুকুম দিলেন, “অমনি বাজাও |” রসিক একবার ক্ষুব্ধ দৃষ্টিতে হীন প্রতিহিংসাপরায়ণ দলস্থ লোকদের দিকে চাহিয়া সানাইয়ে ফুৎকার দিল। সে ফুৎকারের ধ্বনি শূন্যে না মিলাইতেই অর্জুন একটা ঢোল টানিয়া লইয়া বলিল, “আমি সঙ্গত করব।” ঢুলীরা বিস্ময়ে চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া অর্জুনের দিকে চাহিল। তখন উপযুক্ত সঙ্গতের সহিত উপযুক্ত গান চলিল। রসিকের ক্ষুদ্র সানাইয়ের ভিতর হইতে সঙ্গীতের FUCA বহিতে লাগিল; সুরের পর সুরের তরঙ্গ উঠিয়া আকাশ বাতাস প্লাবিত করিল। শ্রোতৃগণ মন্ত্রমুস্ধের ন্যায় বসিয়া এই অপূর্ব্ব সঙ্গীত-সুধা পান করিতে লাগিল। অর্জুনের গানের সময়ে কত উল্লাসসূচক ধ্বনি উঠিয়াছিল, কত বাহবা পড়িয়াছিল; কিন্তু এখন আর একটিও বাহবা পড়িল না, কেহ ঠোট পর্য্যন্ত নাড়িতে সাহস করিল না। যেন একটু শব্দ করিলেই এই সুরের WY তরঙ্গ ছিন্নভিন্ন হইয়া যাইবে। সকলেই রুদ্ধশ্বাসে রসিকের প্রেরণাস্ফীত আবেগ-রক্তিম মুখের দিকে চাহিয়া রহিল! সকলেই স্তব্ধ; মন্ত্র-মুগ্ধ। বাজাইতে বাজাইতে রসিক এক একবার অদূরে উপবিষ্টা বসীর দিকে চাহিতেছিল, আর সানাইয়ের প্রতি AH হইতে মধুর হইতে মধুরতর স্বরবৃষ্টি করিতেছিল। সহসা রসিকের ভাবাস্তর BST সে দেখিল, বসীর মুখখানা ক্রমেই ন্লান হইয়া আসিতেছে, সে মুখে একটা ভারী আশঙ্কার ছায়া যেন গাঢ় হইতে গাঢ়তর হইয়া আসিতেছে। রসিকের তাল কাটিয়া গেল, ঢুলী তাহা সংশোধন করিয়া যাইল। আবার তাল কাটিল, আবার Pell তাহা সংশোধন করিল। এবার একটা মস্ত তাল কাটিয়া গেল। সাবধান করিয়া দিবার জন্য অর্জুন অন্যের অশ্রাব্য স্বরে ডাকিল, “রসিক!” রসিক একবার অর্জুনের মুখের দিকে চাহিল, বারবার বসীর প্রফুল্ল মুখখানার দিকে চাহিল। তার পর সানাইটা হাত হইতে ফেলিয়া দিয়া সেইখানে বসিয়া পড়িল। ১৬



Leave a Comment