দশটি উপন্যাস [সংস্করণ-১] | Dashti Upanyas [Ed. 1]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
সহজ ! হ্যাঁ, সহজই ৷ তবু, কথাহীন দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে পড়ল শ্যামলের, কনকের অসুখটা বাড়াবাড়ি হবার পরও ছেলেকে হাসপাতালে পাঠাতে রাজি হননি দাশরথি ; বলেছিলেন, “কেরানী মানুষের সম্বল তো ওই প্রভিডেণ্ট ফাগুটি, ওতে হাত দেবো ! আমার তো শুধু:একটিকে নিয়ে ভাবলেই চলে না !” “লোকটা চামার 1” আড়ালে অমিয়কে বলেছিল শ্যামল, “জন্ম দিয়েই খালাস !' এই সব ভেবে ছোট একটা ধাক্কা খেল শ্যামল । বুকের মধ্যে অল্প একটু চিন চিন করে উঠল | কোন ভাবনা থেকে সেদিন কথাগুলো বলেছিল এখন আর ঠিক মনে পড়ে aT | দাশরথির সঙ্গে তাদের ফেটুকু পরিচয় তা কনকের জন্যেই । কনক মারা গেল-_মৃত্মুর প্রস্তুতি থেকে এ-পর্যন্ত খুব আপনজনের মতো দাশরথির সঙ্গে মেলামেশা করেছিল তারা | এখনই তাঁকে দূরত্বময় মনে হচ্ছে । এরপর কী হবে ভেবে নিজের ভিতর ডুবে গেল শ্যামল | বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল ওরা | চটির ডগা ঘষে কংক্রিটের ওপর দাগ কাটার চেষ্টা করছিল নিখিল | ভিতরে হাতকাটা cafe, ঘামে জ্যাবজ্যাবে জামার কাঁধদুটো স্পষ্ট । নিখিলের দিকে তাকিয়েই হঠাৎ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠল শ্যামল | 'মেসোমশাই ! ‘al, শুনছি ।” বুঝদারের মতো মাথা নাড়লেন দাশরথি | “একটু ভেবে নিচ্ছি | মানে-- বুঝতেই পারছ, ও যে সত্যি সত্যিই চলে ATI— 'আপনি ভেঙে পড়বেন না-” একক্ষেত্রে যা বলা হয় ও যে-রকমভাবে, ঠিক তেমনি, অভ্যস্ত গলায় কথাটা বলল শ্যামল | চোখের ইশারায় নিখিলকে কিছু বলে, বাজারের থলিটা আস্তে টেনে নিল দাশরথির হাত থেকে | “চলুন | বাড়ি চলুন-_ 'চল | আজ আর বাজারে যাব না, কী বল ?' দাশরথি বললেন, হাঁটতে হাঁটতে | 'কাল রাতে ফিরে আমরা সবাই কনকের গল্প করলাম | কাল তো দেখে মনে হয়েছিল বেঁচে যাবে | মনটা ভালো ছিল | বড়ো হবার পর তো কখনো বাপ বলে ডাকেনি । কাল হঠাৎ ডাকল, হাতটা ধরল ৷ তোমরা কি কেউ কাছে ছিলে ? বললাম, কী রে, কিছু বলবি ? বলল না তো কিছু । শুধু হাসল | তখন কিছুই বুঝিনি-_ কথা থামিয়ে হঠাৎ দিশেহারা চোখে তাকালেন দাশরথি | চোখ: মুখ ভেঙে যাচ্ছে | থেমে দাঁড়িয়ে বুক পকেট থেকে একটা আস্ত দশ টাকার নোট বার করে অদ্ভুত কাঁপা গলায় বললেন, “এই দ্যাখো, ওর জন্যে মাছ কিনব বলে আজ বেশি টাকা নিয়েছিলাম-_ ওরা এগোতে লাগল | সামনে কনকদের বাড়ি | রাস্তার ধারে খোলা জানলা | যে-রকম ভেবেছিল, বাইরে থেকেই শূন্য তক্তপোশটা চোখে পড়ে | খুব চেনা ছবি | জানলার পাল্লায় বড় পেরেকটা একইরকমভাবে গাঁথা | পেরেকে আয়না ঝুলিয়ে অফিস যাবার আগে. প্রতিদিন, দাড়ি কামাত কনক | গালভর্তি ফেনা নিয়ে চেঁচিয়ে বলত, “এই ঝুমি, তাড়াতাড়ি বাথরুম খালি কর 1’ এক ' রবিবারের সকালে চা দিতে এসে ঝুমি বলেছিল, 'আপনারা দাদাকে একটু সভ্য করতে পারেন না ! বাথরুম তো সকলের বাড়িতেই থাকে, অত চেঁচিয়ে লোককে জানানোর, কী আছে ! ১৬



Leave a Comment