বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ | Vaishnava-rasa-prakash

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৬ বৈষ্ণব-রস-প্রকাশ অধুনা-পূর্বকালে সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের যোগ স্থাপিত হয়নি। রাজা-মহারাজার আসা-যাওয়ায়, মোগল-পাঠানের উত্থান-পতনে সমাজ-জীবনে ঘটনার এক-আধটু স্পর্শ যদি বা লেগেছে, বিপর্যয় আসেনি। ইংরেজ শাসনের সময়েও জনসাধারণ উদাসীনই ছিল বলতে হবে, অস্ততঃ দেশের শতকরা নব্বই জন, পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ কৃষিই যাদের জীবিকা | স্বাধীনতার পর, আমাদের নিজেদের উপর দেশগঠনের দায়িত্ব যখন অনায়াসেই এসে পড়ল, তখন নির্রিত জনসমাজের একবার নিদ্রাভঙ্গের মত হল বটে, কিন্তু সে বোধ হয় মুহূর্তের জন্য। শিক্ষাহীন নির্জীব জনসমাজের বিমূঢ়তার সুযোগে স্বার্থস্ফীত এবং অধর্ম-পরিপুষ্ট মুষ্টিমেয় ব্যক্তিবিশেষ এক একটি গোষ্ঠীতে সংহত হয়ে জনসমাজের দুর্বিপাক ঘনীভূত করে তুললে | জনসমাজের সে মোহনিদ্রা এখন ঘুচছে বলে যেন মনে হচ্ছে। যে যাই হোক, জাতিবর্ণের নিয়মে শাসিত আমাদের সমাজ রাষ্ট্রীয় অধিকারকে এযাবংৎ প্রাধান্য দেয়নি। সামাজিক অসাম্যের দুর্ভোগ নীরবেই STA এসেছিল। রাষ্ট্রবুদ্ধির জাগরণ এবং অধিকারবোধ পশ্চিমী শিক্ষা থেকেই সম্ভব হয়েছে এ ধারণা সম্পূর্ণ ঠিক নয়। পশ্চিমী শিক্ষায় শতকর৷ কতজন শিক্ষিত হয়েছিল? আজ শিক্ষা-সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত ব্যক্তিরও রাষ্ট্রের সহায়তায় সামাজিক সমান অধিকার লাভের প্রবল অভিলাষ জাগল কীভাবে? AMAA বলহীনেন লভ্যঃ'--যে জীয়স্তে-মরা তার AAI সম্পদ অর্জন করাও সম্ভব নয়। এই কারণেই বিবেকানন্দ দেশবাসীর কানে গীতার উপদেশ বর্ষণ না করে দেহ-মনে শক্তি সঞ্চার করার প্রয়াসী হয়েছিলেন। আজকের দিনে সামাজিক বিপ্লবের মর্মে মানুষের শক্তি অর্জন সম্ভব হলে, পরে জীবনের মধ্যে অধ্যাত্মের অর্থাৎ ভাব ও আদর্শের প্রকাশে মনুষ্যত্ব-দেবত্ব একীভূত হতে পারে। সেই সুদিনের স্বপ্ন স্থগিত রেখে বর্তমানে পঞ্চদশ-যোড়শ শতাব্দী এবং বৈপ্লবিক গৌড়ীয় বৈষ্ণব ভাব-বিস্তারের ভিত্তিভূমি লক্ষ্য করা যাক। বাঙলায় কৌলীন্য বিধির প্রবর্তন ও প্রতিষ্ঠা যেভাবেই ঘটুক তা যে সমাজ-জীবনের জড়ত্বের প্রধান কারণ সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। পালরাজাদের সময়কার বাঙলার সমাজ-জীবনের বিশেষ পরিচয় ইতিহাস না দিলেও এটুকু বোঝা যায় যে প্রকট বর্ণবৈষম্য বা জাতিগত শ্রেণী-সংঘাত তখনও সমাজে তেমন উপলব্ধ হয়নি। উচ্চবর্ণের উন্নত সম্পদ্ভোগের অধিকার তখনও রাষ্ট্রের আনুকূল্য লাভ করেন | শ্রেষ্ঠী বা বণিক সম্প্রদায়ের চৈতন্যাবির্ভাবের মুষ্টিমেয় দু'চারজন নাগরিকদের প্রতিনিধি হিসাবে শাসকগোষ্ঠীর অব্যবহিতপূর্ব সমাজ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এবং সমাজের অর্থের ভাণ্ডার এঁদের হাতে. থাকলেও প্রজাকল্যাণ Ayo হয় এমন অপরিমিত ধনসঞ্চয় বা সম্পদ্ভোগ এঁরা করতে পারতেন কিনা সন্দেহ | তা ছাড়া এঁদের সংখ্যা নগণ্য ছিল। “শূর' ভূম্যধিকারীরা এবং “সেন” বংশীয় রাজারা বৈদেশিক রুচি এবং জীবনচর্যা নিয়ে এসেছিলেন বলে পশ্চিম অঞ্চলের উচ্চবর্ণের উপর শ্রদ্ধা পোষণ তাঁদের পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তারা রাষ্ট্র-সামাজিক সুবিধার্থে যে এঁতিহ্য সৃষ্টি করে গেলেন তার ফল বাঙলা দেশে সুদূরপ্রসারী হল। তারা নতুন করে এবং কঠোরভাবে স্মৃতির অনুশাসন প্রবর্তন করলেন ER জাত-বর্ণের GAS বিভাগকে একেবারে অলঙ্ঘনীয় করে তুললেন। বৃত্তি, ভূমি এবং গ্রাম দান করে কুলীন বলে যাঁদের বংশপরম্পরায় প্রতিষ্ঠা দেওয়া হল তারা অভিজাত



Leave a Comment