মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প | Manik Bandyopadhyayer Shreshtha Galpo

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
শ্রেষ্ঠ গল্প ১৬ চড়াও হইয়া সকলকে মারিয়া কাটিয়া টাকা ও গহনা লুটিয়া রাতারাতি উধাও হইয়া যাইত। স্ত্রীর চোখের সামনে স্বামীকে বাঁধিয়া মারিলে তাহার মুখে যে অবর্ণনীয় ভাব দেখা দিত, পুত্রের অঙ্গ হইতে ফিনকি দিয়া রক্ত ছুটিলে মা যেমন করিয়া আর্তনাদ করিয়া উঠিত, মশালের আলোয় সে দৃশ্য দেখা আর আর্তনাদ শোনার চেয়ে উম্মাদনাকর নেশা আর কি আছে? পুলিশের ভয়ে গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে পলাইয়া বেড়াইয়া আর বনজঙ্গলে লুকাইয়া থাকিয়াও যেন তখন সুখী ছিল। তাহার দলের অনেকেই বার বার ধরা পড়িয়া জেল খাটিয়াছে, কিন্তু জীবনে একবারের বেশি পুলিশ তাহার নাগাল পায় নাই। রাখু বাগদির সঙ্গে পাহানার শ্রীপতি বিশ্বাসের বোনটাকে যেবার সে চুরি করিয়াছিল, সেইবার ৷ সাত বছরের জন্য তাহার কয়েদ হইয়াছিল, কিন্তু দুবছরের বেশি কেহ তাহাকে জেলে আটকাইয়া রাখিতে পারে নাই। এক বর্ষার সন্ধ্যায় জেলের প্রাচীর ডিঙাইয়া সে পলাইয়াছিল। তারপর একা সে গৃহস্থবাড়িতে ঘরের বেড়া কাটিয়া চুরি করিয়াছে, দিনে দুপুরে পুকুরঘাটে একাকিনী গৃহস্থ বধূর মুখ চাপিয়া গলার হার, হাতের বালা খুলিয়া লইয়াছে, রাখুর বউকে সঙ্গে নিয়া নোয়াখালি হইয়া সমুদ্র ডিঙাইয়া পাড়ি দিয়াছে একেবারে হাতিয়ায়। ছমাস পরে রাখুর বউকে হাতিয়ায় ফেলিয়া আসিয়া পর পর তিনবার তিনটা দল করিয়া দূরে দূরে কত গ্রামে যে ডাকাতি করিয়া বেড়াইয়াছে, তাহার সবগুলির নামও এখন তাহার স্মরণ নাই। তারপর এই সেদিন Cags সাহার মেজ ভাইটার গলাটা সে দা-এর এক কোপে WTS করিয়া দিয়া আসিয়াছে। কী জীবন তাহার ছিল, এখন কী হইয়াছে! মানুষ খুন করিতে যাহার ভালো লাগিত, সে আজ ভিক্ষা না দিয়া চলিয়া গেলে পথচারীকে একটু টিটকারি দেওয়ার মধ্যে মনের জ্বালা নিঃশেষ করে। দেহের শক্তি তাহার এখনো তেমনি অক্ষুন্ন আছে। সে শক্তি প্রয়োগ করিবার উপায়টাই তাহার নাই। কত দোকানে গভীর রাত্রে সামনে টাকার থোক সাজাইয়া একা বসিয়া দোকানি হিসাব মেলায়, বিদেশগত কত পুরুষের গৃহে মেয়েরা থাকে একা। এদিকে, ধারালো একটা অস্ত্র হাতে ওদের সামনে ছমকি দিয়া পড়িয়া একদিনে বড়লোক হওয়ার পরিবর্তে বিন্নু মাঝির চালাটার নীচে সে চুপচাপ শুইয়া থাকে। ডান হাতটাতে অন্ধকারে হাত বুলাইয়া ভিখুর আপশোশের সীমা থাকে A | সংসারের অসংখ্য ভীরু ও দুর্বল নরনারীর মধ্যে এতবড় বুকের পাটা আর এমন একটা জোরালো শরীর নিয়া শুধু একটা হাতের অভাবে সে যে মরিয়া আছে। এমন কপালও মানুষের হয়? তবু এ দুর্ভাগ্য সে সহ৷ করিতে পারে। আপশোশেই নিবৃত্তি। একা ভিখু আর থাকিতে পারেনা। বাজারে ঢুকিবার মুখেই একটি ভিখারিনি fest করিতে বসে। বয়স তাহার বেশি নয়, দেহের বীধুনিও বেশ আছে। কিন্তু একটা পায়ে হাঁটুর নীচে হইতে পায়ের পাতা পর্যন্ত তাহার থকথকে তৈলাক্ত ঘা। এই ঘায়ের জোরে সে ভিখুর চেয়ে বেশি রোজগার করে! সেজন্য ঘা-টিকে সে বিশেষ যত্নে সারিতে দেয় না। ভিখু মধ্যে মধ্যে গিয়া তাহার কাছে বসে। বলে, “ঘা-টি সারবো না, লয়?'



Leave a Comment