প্রান্তদেশে বাংলা | Pranta Deshe Bangla

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
৮ প্রান্তদেশে বাংলা অনেকে এসে জড়ো হতে থাকেন আরাকানে। কেউ কেউ সেনাবাহিনীতে, রাজসভায় চাকরি সংগ্রহ করে নেন। তাদের মধ্যে কেউ আবার উচ্চপদও লাভ করেন। ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ের সুলতানের সহয়তায় নরমিখলা আরাকানের সিংহাসনে বসার পর থেকেই আরাকান গৌড়ের কর রাজ্যে পরিণত হয়। আরাকানের রাজারা তখন গৌড়ের অনুকরণে মুদ্রার প্রচলন করেন। এই সময় থেকে আরাকানের রাজারা তাদের বৌদ্ধ নামের পাশাপাশি মুসলমান নামও গ্রহণ করতে থাকেন। মুদ্রার এক পিঠে রাজার বৌদ্ধনাম, উপাধি Tal ভাষায় এবং অপর পিঠে রাজার একটি মুসলমানি নাম, উপাধি আরবি ভাষায়, কোনো মুদ্রায় আবার বাংলা ভাষায় ও অক্ষরে উৎকীর্ণ থাকত। ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুই শতাধিক বছর এই নিয়ম চালু থাকে। অর্থাৎ আরাকান গৌড়ের অধীনতা ছিন্ন করার দীর্ঘ দিন পরও তাদের মুদ্রায় রাজার মুসলমানি নাম ব্যবহার করেছে। মুদ্রায় আরবি বা বাংলা লিপির ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। যাই হোক, গৌড়ের পতনের পর আরাকান যখন পরিপুর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে তখনও সেখানে গৌড়দেশের মানুষের আগমন অব্যাহত থাকে। গৌড়ের প্রান্তন রাজকর্মচারীদের অনেকেই আরাকানে উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ছাড়াও অন্য একভাবে বাঙালিদের বসতি গড়ে উঠেছিল আরাকানে। সে বড় করুণ কাহিনি। মুঘল শক্তির অভ্যুদয় এবং পূর্ব দিকে তাদের আধিপত্য বিস্তারে শংকিত হয়ে পড়েছিলেন আরাকান রাজা। ঘাড়ের উপর যেন তপ্ত নিঃশ্বাস। বঙ্ঞাদেশ পার হয়ে মুঘল শক্তি একদিন হানা দিতে পারে আরাকানেও! এই শঙ্কা থেকে সাবধানী হলেন তাঁরা। মুঘলদের সম্ভাব্য আরমণ প্রতিরোধ আরাকানরাজ তাঁর বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেন। চিন্তা করলেন শত্তিশালী নৌবাহিনীর। বঙ্গোপসাগরে তখন দুর্ধর্ষ পোর্তৃগিজ জলদস্যুদের আবির্ভাব ঘটেছে। আরাকান রাজা জেবুক শাহ পোর্তৃগিজ জলদস্যুদের সহায়তায় মগদের নিয়ে গড়ে তুললেন এক শক্তিশালী নৌবাহিনী। মগদের নৌসেনা হিসাবে গড়ে তোলা অর্থাৎ প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ছিল পোর্তৃগিজদের উপর । দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, যুদ্ধের তালিম নেবার পাশাপাশি মগগণ পোর্তৃুগিজদের সঙ্গে থেকে দস্যুবৃত্তিতেও পারদর্শী হয়ে ওঠে। শুধু জলপথেই দস্যুতা ও Ada নয়, কালক্রমে মগবাহিনী নির্মবঞ্গের তটভূমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব শুরু করে। লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, হত্যার পর তারা মানুষ ধরে নিয়ে যেতে শুরু করে। নারীপুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে তারা ধরে নিয়ে যায় আঁরাকান। সেখানে ক্রীতদাস হিসাবে ব্যবহৃত হয় এইসব মানুষ | আরাকানের জঙ্গল পরিষ্কার, টিলাটক্কর কেটে কৃষিযোগ্য ভূমি তৈরি ইত্যাদি কাজে লাগানো হয় তাদের। নারীদের উপর অকথ্য অত্যাচার হয়। নারীদের প্রতি দস্যুদের লোলুপ দুষ্টি ছিল। এইভাবে জলদসুদের তাণ্ডবে একদা বঙ্গদেশের নিশ্নাংশে নেমে এসেছিল শ্মশানের Bel | এইসব করুণ কাহিনি ছড়িয়ে আছে বাংলার অনেক লোকগীতিতেও। কিন্তু দস্যুদের এরকম নিষ্ঠুর তৎপরতার মধ্যেও আশ্চর্য সত্য হল- ক্রীতদাস হিসাবে মানুষ ধরে আনার ফলশ্রুতিতে কালকুমে আরাকানে বাঙালি বসতির আরও বিস্তার ঘটেছে। নদী মাতৃক বাংলার কোমল ভাষার প্রতি পাহাড়ি রাজ্যের শাসককুলের অনুরাগও যেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুই বিপরীতমুখী স্রোত প্রত্যক্ষ করেছে সপ্তদশ



Leave a Comment