নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে | Nilkantha Pakhir Khoje

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৬ পীলকণ্ঠ পাথির খোঁজে এমন এক করুণ মুখ নিয়ে চন্দ্রনাথকে দেখতে থাকলেন | তিনি যেমন কোনও কথা বলেন না, এখনও তেমনি কোনও কথা না বলে অপলক চেয়ে থাকলেন | এমন চোখ দেখলেই মনে হয় এই উত্তর চল্লিশের মানুষ বুঝি এবার আকাশের প্রান্তে হাত তুলে তালি বাজাবেন ।টাদের কাকজ্যোৎস্না এখন আকাশের সর্বত্র । যথার্থই এবার বড়কর্তা দুহাত উপরে তুলে হাতে তালি বাজাতে থাকলেন, যেন আকাশের কোন প্রান্তে তার পোষা হাজার হাজার নীলকণ্ঠ পাখি হারিয়ে গেছে | হাতের তালিতে তাদের ফেরানোর চেষ্টা ।আর ধনকর্তা দীড়িয়ে দীড়িয়ে সব কিছু নতুন করে লক্ষ করলেন-_ বড়দার বড় বড় চোখ, লম্বা নাক, প্রশস্ত কপালের পাশে বড় আঁচিল, সবচেয়ে সেই সূর্যের মতো আশ্চর্য রঙ শরীরের এবং সাড়ে ছয় ফুটের উপর শরীরে WHS | দেখলে মনে হবে মধ্যযুগীয় কোন নাইট রাতের অন্ধকারে পাপ AAI করে বেড়াচ্ছেন ! চন্দ্রনাথ দেখলেন, বড় এবং গভীর চোখ দুটো সারাদিন উপবাসে কোটরাগত | দুঃখে চন্দ্রনাথ চোখের জল রোধ করতে পারলেন না | বললেন, বড়দা আপনে আর কত কষ্ট পাইবেন, সবাইরে আর কত FB দিবেন | বড়কর্তা ওরফে মণীন্দ্রনাথ শুধু বললেন, গ্যাৎংচোরেৎশালা | ফের তিনি আকাশের প্রান্তে তালি বাজাতে থাকলেন | সেই তালির শব্দ এত বড় মাঠে কেমন এক বিস্ময়কর শব্দ সৃষ্টি করছে | এইসব শব্দ গ্রাম মাঠ পার হয়ে সোনালী বালির চর পার হয়ে তরমুজ খেতের উপর এখন (যেন ঝুলছে | মণীন্দ্রনাথের বড় ইচ্ছা, জীবনের হারানো সব নীলকণ্ঠ পাখিরা ফিরে এসে রাতের নির্জনতায় মিশে থাক--কিন্তু তারা নামছে না-_বড় কষ্টদায়ক এই ভাবটুকু | তিনি এবার চন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে ঘরের দিকে চলতে চলতে যেন বলতে চাইলেন, চন্দ্র, তোমার ছেলে হয়েছে, বড় আনন্দ ! অথচ কথার অবয়বে শুধু এক প্রকাশ, গ্যাৎংচোরেৎশালা 1 এবার তিনি নিজের এই অপ্রকাশের দুঃখে কেমন দুঃখিত হলেন--এত নক্ষত্র আকাশে অথচ তার পাগল চিভার সমভাগী কেউ হতে চাইছে না । সকলেই যেন তার ঠ্যাঙ ভেঙে দিতে চাইছে । মণীন্দ্রনাথ আর কোনও কথা না বলে সেজভাইকে শুধু অনুসরণ করে হাটতে থাকলেন | ঢাক-ঢোলের বাজনা শোনা যাচ্ছে | ব্যাগপাইপ বাজাচ্ছে কেউ--মনে হয় কেউ দামামা বাজাচ্ছে | একদল লোক ঢাক-ঢোল বাজিয়ে গোপাট ধরে উঠে আসছে | শচীন্দ্রনাথ পুকুর পাড়ে দাড়িয়ে সেই শব্দ শুনছিলেন | বুঝি ফেলু ফিরছে নারাণগঞ্জ থেকে | ফেলুর গলায় কালো তাব বাঁধা | সে হা-ডু- ডু খেলে ফিরছে | কাপ-মেড়েল কালো একটা কাপড়ে ঢাকা | এবারেও ফেলু তবে গোপালদির বাবুদের বিপক্ষে খেলে এসেছে । মুখের উপর ফেলুর চাপদাড়ি আছে বলে আর কাধে সব সময় গামছা ফেলে রাখে বলে গেঞ্জির উপর বুকের ছাতিটা কাছিমের মতো, কত প্রশস্ত মাপা যায় না । কিন্তু কাছে এলে দলটা মনে হল-_না, ফেলুর দল নয়, অন্য দল। তবে কি ফেলু এবারে হেরে এল ! ওর দলবল ফিরছে না কেন ? এই প্রথম তবে ফেলু হেরে গেছে। ফেলুর যৌবন চলে যাচ্ছে তবে । যখন ওর যৌবন ছিল--তখন এই তল্লাটে দুই আদমি ফেলু আর সাবু দুই বড় খেলোয়াড়, হা-ডু-ডু খেলোয়াড় | তখন এই তল্লাটে বিশ্বাসপাড়া, নয়াপাড়া, এমন কি দশ-বিশ ক্রোশ দূরে অথবা গোপালদির মাঠ পার হয়ে সেই মেঘনার চরে ওদের খেলা দেখার জন্য কাতারে কাতারে লোক-_ফেলু হ্যা-রে...রে...ডভু...ডু বলে যখন দাগের উপল্ন বাঘের মতো লাফিয়ে পড়ত--যখন ফাইনাল খেলার দামামা AHS, ব্যাগপাইপ MES, তখন CHA মুখ দেখলে মনে হতো ফেলু বড় কুশলী খেলোয়াড় | তখন কত মেডেল গলায় ঝুলত তার |. কত কাপ এনে দিয়েছে সে তার দলের হয়ে ! দিন নাই রাত নাই, ফেলু বিশ পঁচিশ ব্রোশ পথ হেঁটে খেলতে চলে গেছে | একবার বড় শহরে খেলতে গিয়েছিল, ফেরার পথে পালকিতে | জয়- জয়কার ফেলুর | পালকির দু'পাশে দু'মানুষের মাথায় দুই বড় কাপ, ডে-লাইট জ্বালিয়ে দামামা বাজিয়ে ওরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছিল | নাঙলবন্দের মাঠ এবং নদী পার হলে গ্রামের মানুষেরা বৌ-বিবিরা সেই যে দাড়িয়ে গেল দেখতে, তার আর শেষ নেই । ওরা ফেলুকে দেখছিল, দুই বড়



Leave a Comment