আপিলা-চাপিলা | Apila-chapila

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
দিলওয়ার হোসেনের মাথা ফেটে গেল, Ry বেপরোয়া দিলওয়ার মাথায় ফেট্টি বেঁধে মাঠে ফিরে ফের ATS বিকেলে খেলতে শুরু করলেন, চৌকোর পর চৌকো মেরে মাঠ-ভর্তি দর্শকের চোখ ধাঁধিয়ে দিলেন। বাবা-কাকারা উত্তেজনার তুঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছেন। তেরো-চোদ্দো বছর বাদে অমিয় চক্রবর্তী মশাই কবিতা লিখেছিলেন: 'মেলাবেন, তিনি মেলাবেন। সত্যিই সেই তিরিশের দশকের মধ্য মুহূর্তে এই আপাতবৈপরীত্যকে মেলানোর পালা: স্বদেশী বোমা-পিস্তল, তার সঙ্গে সমান তালে মায়ালু বিলিতি ক্রিকেট। আমার এখন অনুমান, আসলে ক্রিকেটও তখন দেশপ্রেমের প্রতীক হিশেবে প্রতিভাত হয়েছিল। সেই ১৯১১ সালে গোরা দলকে হারিয়ে মোহনবাগান শিল্ড জিতেছিল, যার সম্মোহন পঁচিশ বছরেও কাটেনি। বিশ-পঁচিশ বছর বাদে ক্রিকেটে নতুন করে দেশকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। লালমুখোরা আমাদের নির্যাতন করেছে, নিষ্পেষণ করেছে, আমাদের ছেলেদের ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়েছে, তবু আমরা মরে যাইনি, ওদের অস্ত্রেই ওদের নিধন করেছি, করবো, ক্রিকেটের মধ্যবর্তিতায়। ডানপিটে বিনয় বসু স্বয়ং ক্রিকেটে ওস্তাদ ছিলেন, তাঁর পরের দুই ভাই, জামশেদপুরে কর্মরত, বছদিন বিহার ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন, তাদের একজন, বিমল বসু, অনেক বছর বিহার দলের ক্যাপ্টেন পর্যন্ত ছিলেন। স্থবির শহরে বেড়ে ওঠা আমরা বালক-বালিকার দল, উত্তেজনার খোরাক চট করে সংগ্রহ হবার নয়। কিন্তু তা-ও হয়। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে নবাবপুর-ইসলামপুরের মিছিল, ধর্মনির্বিশেষে সাধারণ মানুষের সোৎসাহ যোগদান, ইসলামপুরের মিছিলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকার মবাব বাহাদুর, নবাবপুরের মিছিলের রূপবাবু-রঘুবাবুরা, বণিক সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানে অধিষ্ঠিত ata) সেজেগুজে আমরা বাচ্চারা বড়োদের সঙ্গে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে অকুস্থলে যেতাম, কোনও পরিচিত বাড়ির দোতলা বা তেতলায় জায়গা করে নিতাম, আকুল আগ্রহে শোভাযাত্রার দীর্ঘায়িত বর্ণিল শোভা চেখে-চেখে উপভোগ করতাম। আমাদের শৈশবের ওই ক'বছর অন্যতর আগ্রহ অবশ্য ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলা। কুশীলবরা শহরের অনেকেরই চেনা, জয়দেবপুর ঢাকা থেকে মাত্র পনেরো মাইল দূরবর্তী, আমার ঠাকুরদা, যীকে আমি কোনওদিন দেখিনি, ভাওয়াল এস্টেটের ম্যানেজারি করেছেন। সন্ন্যাসী মেজোকুমার না কি কোনও প্রতারক তা নিয়ে সর্বদা উত্তেজিত SF) সন্ন্যাসীর দিকেই পাল্লা ভারি। দু'পক্ষের উকিল-ব্যারিস্টারদেরও শহরের সঙ্গে কিছু যোগসূত্র ছিল। তাদেরও সমর্থকরা দ্বিধাবিভক্ত, যদিও এখানেও সন্ন্যাসীর হয়ে সওয়ালকারীদের স্পষ্ট সংখ্যাধিক্য। সন্ধ্যাবেলা আমাদের বাড়ির বাইরের চাতালে বাবা-কাকারা উত্তেজিত তর্ক করতেন, একমাত্র আমার কাকা একটু ANAS প্রতিপক্ষের দিকে হেলে। তিনি উকিল মানুষ, মেজো রানিমার যিনি ব্যারিস্টার, তার ভক্ত। তারপর একদিন ভরদুপুরে বিচারক পান্নালাল বসুর রায় বেরোলো, সন্ন্যাসী-ই কুমার। শহর আনন্দে উচ্ছল, স্থানীয় 'চাবুক' পত্রিকার বিশেষ সংস্করণ প্রতি পাড়ায় 'শয়ে “cH বিক্রি হলো। বাচ্চারাও বুঝতে পারলাম একটা মস্ত কিছু ঘটেছে যাকে শুভ বলে অভিহিত করা যায়। পরে বড়ো হয়ে পান্নালাল বসুর সুদীর্ঘ রায়, যা বই আকারে বেরিয়েছিল, রুদ্ধশ্বাস আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। খুবই সুলিখিত, মনে হলো যেন গোয়েন্দা কাহিনী পড়ছি। হায়, সেই পুস্তক সংগ্রহ করা এখন শিবের বাবারও অসাধ্য। যে-সংসারে একটু-একটু করে বড়ো হচ্ছিলাম, সেখানে প্রাচুর্য ছিল না, কিন অনটনও ছিল না। খুব সরেস চালও পাওয়া যেতো মণ প্রতি সাড়ে তিন-চার টাকা হারে। যাকে মাসকাবারের বাজার বলা হতো, তার জন্য সব মিলিয়ে আমাদের যৌথ পরিবারের পক্ষেও বিশ-পঁচিশ টাকা অঢেল। আর প্রতিদিনের মাছ-সবজির জন্য আট-দশ আনাই যথেষ্ট। ৭



Leave a Comment