চিত্তরঞ্জন দাশের কাব্যসংগ্রহ | Chittaranjan Daser Kabyasangraha

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
(১৮) Pure দাশের কাব্যসংগ্রহ অন্তর্যামী কবিতা হিসেবে কিছু অনুজ্জ্বল। সাগর সঙ্গীত'এর কেন্দ্র-প্রতিমা যদি হয় গীত, তবে অন্তর্যামীতে কবি পথের উপমা ঘিরেই হৃদয়ের আনম্দ-বেদনা গেঁথে নিতে চেয়েছেন : কোথা পথ কোথা পথ কোন্‌ পথখানি সে পথ বিহনে যে গো সব মিছা মানি। এর মধ্যে সাধকের আকুলতা হয়তো আছে, কিন্তু কবিতার নিজস্ব আবেদন-সুৃষ্টির পক্ষে তা বড় সরাসরি। কাজেই, “এ পথ সে পথ নয়” “সেই পথ লাগি আজ মন পথ-যাসী' “ওই বুঝি, সেই পথ ভূমি?/মন-মাঝে ঢেকে ঢেকে রেখেছিলে WHI / WA দেখালে পুনঃ!” এবং “পথের মাঝে এত কাঁটা! আগে নাহি জানি'--ইত্যাদি খন্ডচিত্রের মধ্যে দিয়ে উপমাটির বিস্তারের চেষ্টা করলেও তা সাগরের অনুভব-বেদ্য গানের মতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেনি। সাগরের চিত্রকল্প ব্যবহারে যে তির্যকতা ছিল তা হারানোর সঙ্গে-সঙ্গে তার কবিতাও হারিয়েছে অনেককিছু। তবু তার মধ্যে তার কল্পনা মাঝে-মাঝে ঝলসে উঠেছে, কোন ছায়া-মন্দির বা মনের একতারা অথবা বুকের মধ্যে জয়ধ্বনির মতো কিছু প্রতিমা আশ্রয় করে। কিশোর-কিশোরীতে এসে চিত্তরঞ্জন তার পুরনো স্পর্শ আর একবার ফিরে পেয়েছেন। বইটি একদিক দিয়ে তার কাব্য-সাধনার স্বাভাবিক পরিণতি, কিন্তু আরেক দিক দিয়ে দেখলে একটা নতুন পরীক্ষা। যে অধ্যাত্ম-চেতনার ক্ষীণ আভাস মালঞ্চ'এ ভাঙাচোরা প্রকাশ পেয়েছিল, মালায় যাকে স্পষ্ট হয়ে উঠতে দেখি, সাগরসঙ্গীত-এ যা কবিকে আলোড়িত ও oes ব্যাকুল করেছিল, পাওয়া-না-পাওয়ার আভাসে-ইঙ্গিতে, আনন্দ-বেদনার মধ্যে দিয়ে যা তাকে টেনে এনেছে, কিশোর-কিশোরীতে তা প্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে পৌছেছে। দ্বিধা-ব্যাকুলতা ও ক্ষণিকের তৃপ্তির জায়গায় এসেছে উল্লাসের ছন্দ, তুরীয় মুহূর্তে উত্তরণের উম্মাদনা। কবিতার অনেকটা অংশ জুড়ে আছে একসার প্রশ্নবাচক লাইন। কিন্তু এগুলো অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশের জন্যে নয়। ইংরিজি অলংকারে যাকে বলে রেটরিরাল কোয়েশ্চেন, এরা তাই--প্রশ্ন করার ভঙ্গির মধ্যেই নিহিত আছে প্রবল অস্ত্যর্থক উত্তর। যে-চিত্রকল্পগুলো আগে ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো আবার ফিরে আসছে — Sy পালটে যাচ্ছে তাদের ছাদ, অনুষঙ্গ, আবেদন। এমনকি বহুদূরে মালঞ্চ 'এর যুগ থেকেও উপমা এসেছে, একেবারে নতুন হয়ে : অথন্ড সুন্দর তনু মধুর গম্ভীর, রূপ রস গন্ধ ভরা আত্মার মন্দির। পদতলে কলকলে কাল উর্মিমালা Pica কোন দেবতার নিত্য দীপ স্ববালা। এর সঙ্গে আছে কিছু নতুন চিত্রকল্পও, যা নতুন অভিজ্ঞতার দ্যোতনা দেয় : Gere প্রদীপ হতে যেমন স্বালায়, আর একটি প্রদীপ আনি তাহারই শিখায়, তেমনই আমারে লয়ে ধরিল যখনই, তব রূপ-শিখা "পরে BEY তখনই। (এই চিত্রকল্পের পেছনে বৈষ্ণব ভাবনার সঙ্গে বৌদ্ধদর্শনের জম্মাস্তরের উপমাও মিশেছে।) যাঁরা রবীন্দ্রনাথ পড়ে চিত্তরঞ্জনে আসবেন তাঁদের কাছে : কার পূজা লাগি বল প্রদীপ জ্বলিল? কোন্‌ দেবতার কোন্‌ মন্দিরের গায়; ঝুলে ঝুলে ছ্বলিতেছি দিবস নিশায়?



Leave a Comment