মৃগয়া [খণ্ড-১] | Mrigaya [Vol. 1]

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
১৮ মৃগয়া সুদর্শনের জীবনে জয় অনেক। পরাজয়ও কম নয়। তাঁর এমনি এক পরাজয়, অসহায় পরাজয়, নিজের স্মৃতির কাছে। কোন কালের কোনও কথাই তাঁর স্মৃতি থেকে মোছে না। সেই শৈশব থেকে আজ অবধি প্রতিটি ঘটনা তাঁর মনের মধ্যে ভীষণ জীবন্ত হয়ে CICS BT | অথচ সুদর্শন বিশ্বাস করেন, প্রত্যেক মানুষেরই কিছু কিছু ভুলে যাওয়ার ভীষণ প্রয়োজন আছে। তাঁর মতো বয়সে অধিকাংশ মানুষই তাদের টাটকা স্মৃতিগুলোকে বারে বারে ভুলে যায়।আর সুদর্শন, সেই কবে থেকে, কোন্‌ যুগ থেকে, বিষাক্ত, পচা, অজীর্ণ ও অদাহা স্মৃতিকে আঁকড়ে বসে আছেন। কিছুতেই তাদের ভিটেছাড়া করতে পারছেন না। সারা জীবন ধরে মানুষকে ভিটেছাড়া করবার জন্য কত নতুন নতুন পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন। কত নিষ্ঠুর AA | সেসব পদ্ধতি বুঝি এ ক্ষেত্রে অডমল। আজীবন প্রজাদের ত্রাস হলেও এখন তার স্মৃতির রাজ্যের SAG প্রজাগুলোর কাছে তিনি কত ইীনবল, অসহায়। তাদের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করা বুঝি আর এ জন্মে হল A | ওরা তাঁকে দেখে হাসে | পরিহাস করে। ভয় দেখায়। ওরা তাঁর চোখের সামনে হাজার বে-আদবী করে। সুদর্শনকে সব মুখ বুঁজে সইতে হয়। জীবনে কারও বে-আদবীই HY করেননি সুদর্শন সিংহবাবু। না চন্দ্রকান্তর, না বৈঢ্যা-লায়েকবাঁধের লায়েকদের, না শালকাঁকির নিশান বাউরির, কারুর নয়। অথচ মগজের বেয়াড়া প্রজাগুলো তাঁর সঙ্গে এমনভাবে লেপটে রয়েছে যে তাদের কোনভাবেই আঘাত করবার জো পান না। সুদর্শনের ছেলেবেলায় একটা যাঁড়ের বন্ধুদের তলায় একটা জোঁক বসেছিল | বেচারি ওটাকে কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারছিল না। না মুখ দিয়ে, নাশিংদিকে,না লেজ দিয়ে | OT বড় করুণ অসহায় অবস্থা SHS | ST পরাক্রম থাকলেও সামান্য এক জোঁকের কাছে কাবু | সুদর্শনের স্মৃতিগুলোও ওই জোঁকের মতোই। নাগালের বাইরে থেকে অষ্টপ্রহর রক্ত চুযছে। এতদিন তিনি অবশ্য ওই জোঁকগুলোকেশরীর থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতেন একটি মাত্র কৌশলে | অবিরাম বনবন্করে ঘুরতেন। COA ঘোড়ার মতো পিঠ ঝাঁকিয়ে ছুটতেন। ঘুরস্ত চাকা থেকে যেমন জল -কাদা ছিটকে যায় নিমেষে, তেজী ঘোড়ার পিঠে যেমন একদণ্ড তিষ্ঠোতে পারে না সওয়ার, সুদর্শনের প্রচণ্ড গতিশীল জীবনে, সেই কারণেই ,তাঁর স্মৃতিগুলো কখনও খুব আঁটোসাটো হয়ে মগজের মধ্যে থিতু হয়ে বসতে পারেনি এতকাল। কিন্তু এখন তিনি পাখনা-ছটা পাখির মতোই অচল। মানুষের পা জোড়াই তো পাখনা। এই পাদুটোর কথা প্রায় সময়ই ভুলে থাকতে চান সুদর্শন |কিন্তু পারেন না।আচমকা পায়ের কথাটা AH করে মনে পড়ে যায়। বাঁহাতখানা অজান্তে নেমে যায় কোমরের নিচে। সরসর করে এগোতে থাকে খানিক | তারপর এক সময় থেমে A | দুটো পা-ই হাঁটু থেকে কাটা গেছে। আজ পাঁচ বছর আগে। সেই থেকে কেবল উধ্বর্গিটুকু নিয়ে তিনি দোতলার এই কোণের ঘরখানায় শুয়ে আছেন, আজ পাঁচ বছর। পা দুটি হারাবার বছর-পাঁচেক আগে একখানা রেডিও কিনেছিলেন সুদর্শন এ তল্লাটে এমন যন্ত্র তখনও কেউই দেখেনি | খুব গমগমে আওয়াজ ছিল যন্ত্টার। বাড়ির উঠোনে একজোড়া লম্বা বাঁশ পুঁতে এরিয়েলের তার খাটানো হয়েছিল | দিনভর হরেক জাতের গান বাজতো তাতে! কানা কেষ্ট, জ্ঞান গোঁসাই, ছবি রাণীর কীর্তন, মীরার ভজন। সকাল সন্ধেয় খবর পড়ত SYR | সুদর্শনের বৈঠকখানা গমগম FAG চুয়ামসিনার তো বটেই, আশেপাশের গ্রাম থেকে বাবু ভায়ার দল সম্ধেবেলার খবর শুনতে আসত | রেডিওটি ছিল সিংহগড়ের আভিজাত্যের প্রতীক। 'বহুদিন এমন সপারিষদ রেডিও শোনেন নি সুদর্শন | যন্ত্রটা সরিয়ে এনে রাখা হয়েছে তাঁর শোবার ঘরে। অষ্টপ্রহর বেজে যায়। সুদর্শন কখনো শোনেন, অধিকাংশ সময়ই শোনেন At | TACT



Leave a Comment