শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত | Srihatter Itibritta

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
[যোল! তার স্থিতধী বোধ বিশ্ব নিয়মের সারাৎসারকে উপলব্ধি করতে পেরে গভীর দুঃখের মধ্যেও সান্ত্বনার আশ্বাসকে খুঁজে পেয়েছিল । অদচ্যুত চৌধুরীর কর্মজীবন মৈনার গ্রামীণ জীবন পরিবেশেরই মতো সরল অথচ বৈচিত্র্যময় fet | জীবিকার প্রয়োজনে গ্রাম ছেড়ে বাইরে যাবার কোনো প্রলোভন তার ছিল না। যদিও চৌধুরী বাড়ির, বিশেষত অদ্বৈত চৌধুবী ও তার বংশধরগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও প্রাচুর্য তখন তলানিতে এসে ঠেকেছে তবু অর্থের চাইতে পরমার্থ চিন্তাই ছিল তাদের মৌল আদর্শ । এই পরমার্থ শুধু ঈশ্বরের সাধনায়ই নিমগ্ন ও আত্মকেন্দ্রিক ছিল না, সাধারণের কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনই ছিল তাদের জীবনব্রত i অন্য শরিকের ঘরে অবশ: তখন লক্ষ্মী ছিলেন অচলা | মহাকালের জমিদার আর মৈনার চৌধুরী বাড়ির যৌথ কাঠের কারবার; বনাঞ্চল থেকে খেদা করে হাতী ধরা এক বিরাট লাভজনক ব্যবসা ছিল । wey এই লাভকে তুচ্ছ জ্ঞান করে এঁতিহাসিক ও প্রত্নতান্তিক গবেষণায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে দিনাতিপাত করে চলেছেন। ফলে স্বভাবই প্রাচুর্যের মুখ তিনি দেখেননি; এর জন্য অবশ্য কোনদিনই তার কোনো আক্ষেপ ছিল না। তার জীবনের মৌল লক্ষ্য ও আদর্শ ছিল সাহিত্য-সাধনা ও গবেষণা | এই আরাধনায় তার ইষ্ট সিদ্ধি লাভ ঘটেছিল | এই সিদ্ধিলাভের উপযুক্ত জীবন পরিবেশ তিনি তার গ্রাম বাড়িতেই খুঁজে পেয়েছিলেন 1 সাহিত্য চর্চার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম জীবনের শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি চেতনার উন্নতি ও প্রসারণের জন্যও তিনি আজীবন নিরলস প্রয়াস করে গেছেন | আজন্ম লালিত বৈষ্ণবীয় পরিবেশে, সাধুসঙ্গ ও প্রসঙ্গে এবং সাহিত্য ও সাহিত্যিক সাহচর্ষযে তার জীবন অতিবাহিত হয়েছে। এই শিক্ষা ও সহবাস তাকে যথার্থ এক মনীষী ঝপে গড়ে তুলেছিল 1 তার নির্মল চরিত্রের সান্নিধ্যে যারাই এসেছেন তারাই মুগ্ধ হয়েছেন । গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে বিশেষতঃ জমিদারির প্রজাসাধারণের প্রতি তার ব্যবহার এতই আন্তরিক ছিল যে জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই নীচ স্বার্থকেন্দ্রিক কোনো সংঘর্ষে তাকে লিপ্ত হতে হয়নি | আদর্শের সঙ্গে আত্মার এমন নিবিড় একাত্মতা, মানব চরিত্রের এমন দুর্লভ গৌরবে অধিকারীই তিনি ছিলেন | সৎজন হিসেবে তার জনপ্রিয়তা তাকে সাধারণ্যে বৈষ্ণব বাবাজী” নামেই পরিচিতি দান করেছিল 1 ব্যক্তিগত আদর্শ, মহত্ত্ব ও সৃজনশীল সাহিত্যস্রষ্টা রূপে তিনি দুর্লভ অমরত্ব লাভ করেছেন। শিক্ষার পাঠ শেষ করে পাকাপাকিভাবে গ্রামে বসবাস করার আগে কিছুদিন তিনি শিক্ষকতার কাজও করেছেন | তার কৃতী ছাত্রদের মধ্যে উত্তর শ্রীহট্টের অধিবাসী মহেন্দ্রনাথ দে পুরকায়স্থ এবং সুনামগঞ্জের রমেশচন্দ্র চৌধুরী এই দুজন বিশেষ উল্লেখযোগ্য 1 সহাধ্যায়ীদের মধ্যে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন তাদের মধ্যে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট রজনীকান্ত রায় দস্তিদার, 'পরিদর্শক' সম্পাদক ভারতচন্দ্র দাস, সারদাচরণ ধর প্রমুখ উল্লেখযোগ্য 1 মৈনা গ্রামে বাসকালে তিনি সেই গ্রামের পাঠশালায়ও দীর্ঘদিন শিক্ষাদানকার্যে ব্রতী ছিলেন | তন্তবনিধি-লিখিত আত্মকথামূলক বিবিধ বক্তব্য থেকে জানা যায় যে তিনি সরকারের রাজস্ব আদায়ের জন্য পাথারকান্দিতে যে তহশীল অফিস রয়েছে সেখানে বেশ কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সে সময় সংসারের বোঝা ও দারিদ্র তাকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছিল । মৈনা গ্রামের পোষ্ট অফিস ছিল কানাইবাজার | এই অফিসটি প্রথমে চৌধুরীদের কাছারী বাড়িতেই far) তখন ছিল এটি পাথারকান্দি অফিসের অধীনন্থ একটি শাখা ডাকঘর । এই অফিস পরিচালনা নিয়ে একবার ঝামেলা হয়। বিভাগীয় তদন্তের পর অফিসটি উঠিয়ে নেবার অবস্থা দেখা দিলে তন্তবনিধি নিজে তার পরিচালনার wifreit কাধে তুলে নেন। শুধুমাত্র জনসেবার স্বার্থেই যে তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন সে কথা ডাকঘরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচল অবস্থার ঘটনা-সৃত্র থেকেই জানা যায়। কানাই বাজারের সেই পোষ্ট মাস্টারের চেহারাটা



Leave a Comment