বিহানবেলা | Bihanbela

বই থেকে নমুনা পাঠ্য (মেশিন অনুবাদিত)

(Click to expand)
দিকে ভাল করে তাকাবার ফুরসতই পেতেন না যেন। রেবার ভিতরে বোধহয় তাই জমা হয়েছিল তীব্র অভিমান | সে আজ প্রায় আঠাশ বছর আগের কথা, যে-সময় ভারত-চীন যুদ্ধের মোকাবিলায় নিদারুণ ব্যতিব্যস্ত তিনি। লাদাখ-সীমান্তের কাছাকাছি ক্যাম্প করে রয়েছেন তাবুর ভেতর প্রচণ্ড শীতে হি হি করে কাপতে কাপতে একদিন টেলিগ্রাম পেয়েছিলেন, রেবা সিরিয়াস্লি Be | কাম শার্প। টেলিগ্রাম পেয়ে তার মনে হয়েছিল, তার রিলেটিভরা সব এক-একটি ফুল। যখন তার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে গোলাগুলির মধ্যে, সে সময় তারা এহেন একটি টেলিগ্রাম পাঠাল কোন বুদ্ধিতে! তার তখন মরবারও সময় নেই। কদিন পরে বুঝেছিলেন, তার মরার সময় না থাকতে পারে, কিন্তু রেবার তো ছিল। তার চল্লিশ বছরের সুন্দরী স্ত্রী তার অনুপস্থিতিতে দিনসাতেক পরে তাকে গুডবাই করে চলে গিয়েছিল পৃথিবীর অন্যপারে। মৃত্যুসংবাদ বয়ে আনা টেলিগ্রামটি হাতে নিয়ে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ছিলেন হিজিবিজি অক্ষরগুলোর দিকে। নিজের মনেই বিড়বিড় করেছিলেন, হাউ আযাব্সার্ড। মাত্র নদিনের অসুখে! কী এমন হয়েছিল রেবার! তিনি যুদ্ধে রওনা দেওয়ার আগের দিনও মুখ ভার করে ছিল রেবা। রাতে বুকের. ভেতর মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। ভেবেছিল তার স্বামী যদি যুদ্ধ থেকে আর না ফেরে! কর্নেল যুদ্ধান্তে রাষ্ট্রপতির পদক গলায় ঝুলিয়ে লাদাখ থেকে ফিরে এসেছিলেন কলকাতায় কিন্তু রেবাকে আর CHATS পাননি। ফিরে এসে দেখেছিলেন, রেবার ফেলে যাওয়া সংসার ক্ষোভের আঙুল তুলে তাকিয়ে আছে তার দিকে। দুই ছেলে অমলেশ আর পুলকেশ, মেয়ে মালবিকা, কেউই তখনও কৈশোরে উপনীত হয়নি। দু-চোখে ক্ষোভ, অভিমান, কান্না মিশিয়ে নিঃশব্দে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। যেন তারা বলতে চাইছিল, তুমি মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনেও আসতে পারনি, বাবা? কর্নেল রায়চৌধুরী সারাক্ষণ মাথা নিচু করে ছিলেন। যেন মাথা পেতে গ্রহণ করেছিলেন সবাইকার SS, ক্রোধ আর Tek) পরে শুনেছিলেন, রেবা শেষ সময়ে বারবার বলেছিল, ও এল না? ও আসেনি! মা-মরা তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে তারপর এক দারুণ লড়াই শুরু হয়েছিল কর্নেলের। একে-একে মানুষ করে তুলেছেন ছেলেমেয়েদের। অমলেশ এখন তার বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে আমেরিকায়। পুলকেশ তার বউ-মেয়ে নিয়ে জার্মানিতে মালবিকাও ষোলো বছর আগে বিয়ে হয়ে চলে গেছে জব্বলপুরে। এই দীর্ঘকাল কর্নেল তার বিশাল দোতলা বাড়িতে পড়ে আছেন একা। একা, তবু তাও মানিয়ে নিয়েছেন কর্নেল | চাইলে মানুষের সঙ্গীর অভাব হয় না। .বইটই নিয়েও দিনরাতের অনেকখানি সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। রেবার স্মৃতিও ২০



Leave a Comment