মধ্যযুগের সাহিত্যে সমাজ ও সংস্কৃতির রূপ | Madhyajuger Sahitye Samaj O Sanskritir Rup

বোধসৃূত্র লোকস্মৃতিতে গেছে হারিয়ে | তাই অনেক আচার-সংস্কারই হয়ে পড়েছে আপাত নিরুদ্দিষ্ট ও তাৎপর্যহীন | ফলে সম্পর্ক-স্বরূপ নির্ণয় হয়েছে দুঃসাধ্য । যেমন নাচ-গান- চিত্র এগুলো ছিল আদিতে শিকার-সাফল্যের, অনুকূল রোদ-বৃষ্টি আবহসৃষ্টির ও বিপদযমুক্তির প্রাকৃত বা দৈবিক আবহসুৃষ্টির বাঞ্ছাপ্রসূত উদ্ভাবন । এখন নাচ-গান-চিত্র আমাদের মানসিক-নান্দনিক বিলাসক্রিয়া মাত্র | যখন মানুষ খাদ্যরূপে ফল-মূল Haas মাত্র ছিল, যখন খাদ্য সংগ্রহকালে সঙ্গী- সহচর থাকলেও এ কার্যে সহযোগী-সহকারীর প্রয়োজনই ছিল না, তখনো কিন্তু জৈবিক কারণে নারী-পুরুষের মিলন কাম্য ছিল | তখনো হয়তো ব্যক্তিক বিবাদের কারণ ঘটত নারীসম্তোগ নিয়ে- জীবজগতে আমরা যেমনটি দেখতে পাই | তা ছাড়া মনুষ্যস্মৃতিতে কামই বিপদ-বিবাদের উৎস | আদম-ইভের স্বর্গচ্যুতি ঘটে কাম-চেতনা জাগার ফলেই | প্রথম পার্থিব বিবাদ ও নরহত্যার মূলে ছিল নারীর লাবণ্য । কাবিলের হাবিল-হত্যা দিয়েই শুরু ভ্রাতৃ-হননের তথা নরনিধনের | গ্রিক-হিন্দু পুরাণেও রয়েছে দেব-দানবের নারীকেন্দ্রীয় বিবাদ-বিগ্রহের কাহিনী | হোমার-বাল্মীকি-ব্যাসের কাব্যে নয় কেবল, দুনিয়ার রূপকথা, উপকথা ও ইতিকথার মূলেও রয়েছে পুরুষ-ভোগ্য নারী । কাজেই 'জমি'র আগে Wee's ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উৎস | তারপর পশুপালক ও কৃষিজীবী মানুষের জীবনে বিবাদ-বিগ্রহের কারণ দাড়াল দুটো-_জরু ও জমি | আরো অনেক পরে যুক্ত হল আরেকটি কারণ-_তা হচ্ছে 'জওহর”। সংস্কারমুক্ত স্বৈরিণী নারীর যে-কোনো পুরুষকে দেহ দানে হয়তো আপত্তি ছিল না, কিন্তু সম্তানধারণ ও লালনের জন্যে সে নিশ্চয়ই সহকারীর প্রয়োজন অনুভব করত | সেই আদি জৈব-জীবনে কে করবে কার সহায়তা! তাই বোধহয় সামাজিকভাবে নারী এক বিশেষ পুরুষের প্রতিই প্রীতি রাখত সাহায্য-সহযোগিতা লাভের প্রত্যাশায় । আজকের মতো এত সচেতন কিংবা সুক্ষন না হোক, নারী কিংবা পুরুষ একেবারে দুর্লভ-দুর্লক্ষ্য না হলে সেদিনও হয়তো অবচেতন রুচিরও একটা প্রেরণা ছিল । যদি এ অনুমান সত্য হয়, তা হলে মানতেই হবে যে পুরুষ ও নারীমাত্রই অবিচারে একে অপরের কাম্যজন ছিল Al | সেদিনও হয়তো পুরুষে পুরুষে বিরোধ-বিবাদের কারণ ঘটত যৌবনবতী স্বাস্থ্যসুন্দর নারীর রূপ-যৌবন উপভোগের দাবি নিয়েই | নারীও হয়তো ঝুঁকে পড়ত সবল-সুরূপ- পৌরষদৃপ্ত পুরুষের প্রতি | তাই আগ্তবাক্যে “Te ও জমি বীরভোগ্যা' | অতএব নারী-সমস্যাই মনুষ্যজীবনের আদি ও গুরু সমস্যা--এ অনুমান অসঙ্গত নয়। তাই নিয়ন্ত্রিত কামচর্চার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খুঁজেছে আদিসমাজ। আদম-ইভের প্রতিবারের সন্তান হত বিপরীত লিঙ্গের যমজ | তাদের মধ্যে বিয়ে হতে পারত না। আদিম বুনো বর্বর সমাজে যখন ব্যক্তি-বিয়ে চালু হয় নি, তখন যে নির্বিচার সঙ্গমের রেওয়াজ চালু ছিল, তাতে দেখা যায় স্ব-ক্ল্যান সঙ্গম ছিল টেবু বা নিষিদ্ধ 1 দুই ভিন্ন ক্ল্যানের নারী-পুরুষে হত কামচর্চা--এরই নাম যৌথ বিয়ে! দ্রৌপদীকে পাচ ভাই বিয়ে করলেন বটে, কিন্তু বিরোধ-বিবাদ এড্রানোর জন্যেই ভাইদের মধ্যে পালাভাগ ছিল । আজও হিন্দুদের মধ্যে জ্ঞাতি বিয়ে নিষিদ্ধ ৷ বৌদ্ধ জাতক মতে রাম-সীতা ছিলেন ভাই-বোন | চার ভাইয়ের এক সুন্দরী বোন থাকলে দ্াতুবিরোধ ও ASAT! এড়ানো অসম্ভব দেখেই কেবল ভাই-বোনে নয়, বিশেষ বিশেষ নিকটাত্মীয় বিয়ে আদিসমাজেই নিষিদ্ধ হয়ে যায় । তবু আগে যাদের মধ্যে সঙ্গম-সম্পর্ক ১৫