সৈয়দ শামসুল হক উপন্যাস সমগ্র - ৪ | Syed Shamsul Haq Upanyash Samagra - 4

চোখে সবটা মেপে নেয়া যায়। ঘর শূন্য । বিছানা আগোছালো। হয়তো রাতে কেউ ঘুমিয়েছিল, হয়তো কেউ ঘুমোয় নি, বোঝা যায় না। ইয়াসমিন বিছানা করতে বড় আলসে। যেমন ঘুম থেকে উঠে যায়, তেমনি রাতে এসে বাসি বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নাহার কিছু বললে খেপে ওঠে | বলে, সে কি হলওয়েল কারাগারে বন্দি যে রোজ ভোরে ওয়ার্ডেনের রোদে বেরুবার আগেই তাকে বিছানা করে রাখতে হবে, রেখে বিছানার পাশে নিষ্পাপ ACSA মতো দাড়িয়ে থাকতে হবে ? ইয়াসমিন কি তাহলে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেছে, নাহার টের পায় নি? তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসে বাথরুম দ্যাখে। কেউ নেই ভেতরে | তখন মাঝের ঘর, অন্য দু মেয়ের যৌথ শোবার Ue GCA নাহার। ছোট মেয়ে নাসরিন শুয়ে শুয়ে চার্লি ব্রাউন কমিক বই পড়ছে। আর মাহজাবীন জানালার কাছে টেবিলের ওপর বসে, জানালার বাইরে মুখ করে নোখের AG GIA! ঘরে আর কেউ নেই । নাহারের পায়ের শব্দে দু মেয়ের কেউ ফিরে তাকায় না। ইয়াসমিনকে এখানেও না দেখে তার বুক হিম হয়ে যায়। কিছুতেই সত্যি বলে মনে হয় না, ইয়াসমিন গত রাতে ফেরে fF | মাথাটা ঘুরে উঠে একবার । নিচের ঠোট কামড়ে ধরে নাহার। শূন্য দৃষ্টিতে ইয়াসমিনের পিঠোপিঠি মেয়ে মাহজাবীনের দিকে তাকিয়ে থাকে | কিছুক্ষণ পর মাহজাবীন নোখের রঙ তুলতে তুলতেই বলে, মাম, আজ প্রাতরাশ খাইতে চাহি না। প্রিজ। প্রায় ছুটির দিনেই মাহজাবীন ভোরে নাশতা করতে আপত্তি করে | সপ্তাহের পাচদিন ভোরে ইস্কুলে যাবার আগে মায়ের কড়াচোখের নিচে বাটি ভর্তি দুধ সিরিয়েল গিলতে হয়, ছুটির দিনে বিদোহ করে স্বাধীনতা দেখায় সে | এটা নতুন AT | তবু, নাহারের মনে হয়, আজ এর বিশেষ একটা অর্থ আছে | সে মেয়েকে বলে, কখন উঠেছিস ঘুম থেকে ? মাহজাবীন আপন কাজে ব্যস্ত থাকে৷ নোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দ্যাখে ৷ জবাব দেয় AT নাহার কিছুটা কঠিনস্বরে জিগ্যেস করে এবার-_- উঠেছিস কখন ? ছোট মেয়ে নাসরিন চার্লি বরাউনের বইয়ের দিকে তাকিয়েই বলে ওঠে, আহ তোমরা কী শুরু করিলে বল তো ? আমাকে পড়িতে দাও। নাসরিনকে পড়বার অখণ্ড নীরবতা দেবার জন্য নয়, ভিন্ন কারণে নাহার মাহজাবীনকে বলে, বীনা, এদিকে শুনে যাও | মাহজাবীন ভ্রু কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায় | প্রাতরাশ নয়, প্লিজ | এসো এদিকে । নাহারের গলায় কী ছিল, মাহজাবীন টেবিল থেকে নেমে আসে। পাশেই ইয়াসমিনের ঘর, দরোজা খোলা, ভেতরে ঢুকে দরোজাটা বন্ধ করে নাহার সরাসরি প্রশ্ব করে, মিনা কোথায় ? ১৪